প্রকাশিত: ৩১/১২/২০১৯ ৯:২৬ এএম

অং সান সু চি। বাবা মিয়ানমারের স্বাধীনতার জনক জেনারেল অং সানের প্রতি দেশবাসীর যে শ্রদ্ধা, তার ওপর ভর করেই শুরু হয় সু চি’র রাজনৈতিক জীবন। রুখে দাঁড়ান স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে।

সোচ্চার হন জনগণের মৌলিক অধিকার, গণমাধ্যম ও মানুষের বাকস্বাধীনতার পক্ষে। একটানা এক যুগের বেশি সময় বরণ করেন গৃহবন্দিত্ব। স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তিতে নোবেলসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।

পূজিত হয়েছেন ‘গণতন্ত্রের দেবী’ হিসেবে। কিন্তু এখন সু চি আর সেই সু চি নেই। গণতন্ত্রের সেই ‘চ্যাম্পিয়ন’ আজ হয়ে উঠেছেন মিথ্যাবাজ নেত্রী।

সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জোরালো প্রমাণ থাকলেও যে সেনাবাহিনী তার ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে তাদের পক্ষ নিলেন তিনি।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) দাঁড়িয়ে সু চি গণহত্যার অভিযোগকে নির্দিধায় খারিজ করে দিলেন। ২০১৯ সালেই খুলে যায় খাকি কুর্দির আড়ালে ঢাকা সু চির মুখোশ। ভবিষ্যতের জন্য অতীত কষ্টক্লেশ বিসর্জন দিলেন তিনি।

কয়েক দশকের সামরিক শাসনের পর ২০১৫ সালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেন সু চি। প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক শাসন অব্যাহত রাখবেন।

কিন্তু গত চার বছরেও নিজেদের সেই প্রতিশ্র“তির বাস্তবায়ন করেনি তার সরকার। বরং আরও স্বৈরাচারী শাসন চাপিয়ে দিয়েছে জনগণের ওপর। একসময় যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, ক্ষমতার লোভে শান্তির পায়রা ওড়ানোর বদলে শাসক জান্তার অস্ত্রের ঝনঝনানিতেই আস্থা রাখলেন সু চি।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার বিচার শুরু হয়েছে এ বছর। ১১ নভেম্বর ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া।

১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর টানা তিনদিন নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আইসিজে-তে শুনানি হয়। গাম্বিয়ার পক্ষে লড়েন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু।

আর মিয়ানমারের হয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে বাঘা বাঘা আইনজীবীদের দলের নেতৃত্ব দেন সু চি। শুনানির প্রথম দিন শান্ত চেহারায় বসে ছিলেন। চুলে গোঁজা ছিল তাজা ফুল। সুস্থির চিত্তে শুনছিলেন বিরোধীপক্ষের অভিযোগ।

সেই অভিযোগে বলা হচ্ছিল গণহত্যার কথা। জানানো হচ্ছিল, শিশুদের আগুনে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা, নারীদের গণধর্ষণের ঘটনা। একসময়ের ‘নিপীড়িতের কণ্ঠস্বর’ উপাধি পাওয়া সু চি নৃশংস অভিযোগের জবাবে বললেন, সব মিথ্যা।

রাখাইনে সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও একে কোনোভাবেই গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেন। সু চি বলেন, দুঃখজনকভাবে গাম্বিয়া রাখাইন রাজ্যের একটি অসম্পূর্ণ, ভ্রান্তিকর চিত্র উপস্থাপন করেছে।

হত্যা ও অন্য সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ও শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করেন। বলেন, রাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে অন্যায়ে জড়িত থাকা সৈনিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার করছে, শাস্তিও দিচ্ছে। তার পরও কিভাবে একে গণহত্যার প্রচেষ্টা বলা যায়?’ এমন সাফাই গাওয়া মন্তব্যে বিশ্বমহলে তিরস্কৃত হচ্ছেন সু চি।

পাঠকের মতামত

বিদেশে থাকা নাগরিকেরা ফিরতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে: মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান

জান্তা শাসনামলে মিয়ানমারের যেসব নাগরিক দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যত্র চলে গেছেন, তাঁরা চাইলে আবার ...

মিয়ানমারের নাগরিকদের ‘অস্থায়ী অভিবাসন সুবিধা’ বাতিল করছে যুক্তরাষ্ট্র

টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাস’ (টিপিএস) কর্মসূচির আওতায় মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য চলমান ‘অস্থায়ী অভিবাসন সুবিধা’ (টিপিএস) বাতিলের ...

শান্তি চুক্তিতে রাজি না হলে ইউক্রেনকে সহায়তা বন্ধের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির কাঠামোতে সম্মত না হলে কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য ...

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব গৃহীত

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিষয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এই প্রস্তাবে, ...