
মিয়ানমারে অত্যাচার-নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার ও নোয়াখালীর কয়েকটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গোপনে বাংলাদেশের জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসায় তা বন্ধ করতে উদ্যোগ নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনেক কাঠখড় পুড়িয়েও তা কাজে আসেনি, ভেস্তে যাচ্ছে সব পদক্ষেপ।
জানা গেছে, বিভিন্ন অপকৌশল, এলাকা বদল এবং অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এ কারণে কে রোহিঙ্গা এবং কে নয়, তা শনাক্তে জটিলতার মধ্যে পড়েছে ইসি। এ থেকে সহসাই মুক্তি মিলছে না। এতে আটকে গেছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ।
জাতিসংঘের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) প্রণীত ডাটাবেজ চেয়েও পাচ্ছে না কমিশন। দফায় দফায় বৈঠক এবং আলোচনার পর অন্য একটি মন্ত্রণালয়ের শেষ মুহূর্তের বাগড়ায় এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গার ডাটাবেজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় ইসি। ওই তথ্যভান্ডার পেতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। আদৌ পাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের। এ তালিকায় অসংখ্য রোহিঙ্গা বিভিন্ন উপায়ে ঢুকে পড়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য নেই ইসির কাছে। তাদের ভাষ্য, এই ইস্যুতে সংক্ষুব্ধ কারো অভিযোগ ছাড়া নিজ উদ্যোগে বিদ্যমান তালিকায় রোহিঙ্গা আছে কি না, তা খুঁজে বের করার সুযোগ নেই কমিশনের।
এনআইডি উইংয়ের ডিজি ও অতিরিক্ত সচিব এএসএম হুমায়ুন কবীর আমার দেশকে বলেন, সর্বশেষ হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা আছে কি না, তা আমরা জানি না। রোহিঙ্গারা যাতে তালিকায় ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যেহেতু রোহিঙ্গা ডাটাবেজ নেই, তাই নিশ্চিত করে বলা যাবে না এটি নিষ্কলুষ তালিকা।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পর তারা ডাটাবেজটি দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু একটি মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে সেটি পেলাম না। এটা না পাওয়ায় শুধু ইসির নয়, রাষ্ট্রেরও ক্ষতি হয়েছে। কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুটি আমাদের জন্য বিষফোড়া। তারা প্রথমে এনআইডি পাবে, এরপর পাসপোর্ট। পরবর্তী ধাপে বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। এতে আমাদের শ্রমবাজারে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই রোহিঙ্গা ডাটাবেজ পেতে আবার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একজন রোহিঙ্গাকে ভোটার করাতে পারলে লাখ টাকার বেশি উৎকোচ পাওয়া যায়। অতীতে কক্সবাজার অঞ্চলে ইসির কর্মকর্তাদের সহায়তায় হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে ভোটার করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অবগত হওয়ার পর তদন্তে নেমে ভোটার করার খবরটির ভিত্তি খুঁজে পায় কমিশন। এ অপরাধে মাঠ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ খোদ এনআইডি উইংয়ের অনেকের চাকরি যায়। অনেকে জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
এনআইডির সিস্টেম ম্যানেজার আশরাফ হোসেন আমার দেশকে বলেন, রোহিঙ্গাদের কেউ ভোটার হলে সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক বাদ দেন। এবার হালনাগাদে রোহিঙ্গা থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, এখন পর্যন্ত তালিকা যাচাইয়ে একজনও রোহিঙ্গাও পাওয়া যায়নি। মূল বিষয় হলো, কে রোহিঙ্গা আর কে না, দুটি (ইউএনএইচসিআর ও এনআইডি) ডাটা সার্ভারকে একত্রে না মেলালে বলা যায় না। আর কেউ যদি অভিযোগ করেন অমুক রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে, তাহলেই সম্ভব। অন্যথায় রোহিঙ্গারা তথ্য-পরিচয় গোপন করে ভোটার হলেও জানা সম্ভব নয়। বর্তমানে ১২ কোটি ৩৭ লাখের বেশি ভোটারের তথ্য রয়েছে জাতীয় তথ্যভান্ডারে। সুত্র,দৈনিক আমার দেশ
পাঠকের মতামত