প্রকাশিত: ০৪/০২/২০১৭ ১০:০৪ পিএম

সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও::

কক্সবাজার সদরের উপকুলীয় জনপদ মৎস্য ও লবণ সম্পদের আধার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার ৬ নং স্লুইস গেইটটি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও গত বছরের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ স্লুইস গেইট দিয়ে প্রতিদিন জোয়ারের পানি অনুপ্রবেশ করার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যে কারনে ওই ইউনিয়নের গোমাতলী গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী আরো কয়েক গ্রামের মানুষ গত আট মাস ধরে নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বলে জানা গেছে। ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বেঁড়িবাধ ও স্লুইস গেইটসমুহ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে টেকসই কোন পরিকল্পনা গ্রহণ না করার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকার অভিজ্ঞ মহলের ধারনা। প্রতিদিনকার জোয়ার ভাটার কারনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীন সড়ক উপ-সড়কসমুহ। এদিকে ৬ নং স্লুইস গেইট এলাকা ভাঙ্গনের কারনে ওই পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়াতে চলতি লবণ মৌসুমে শত শত একর জমি লবণ চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এতে করে এলাকার বিপুল সংখ্যক লবণ চাষী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানান, ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক দুখু মিয়া। প্রান্তিক লবণ চাষীদের মুখে এখন আশার আলো জাগলেও জ্বলছে নিভু নিভু। কারণ জানতে গিয়ে দেখা গেছে, গোমাতলীর দু’ শত ফুট বেঁড়িবাধ সংস্কার না হওয়ায় এ পেশায় জড়িত প্রায় দেড় হাজার লবণ চাষীর পরিবারকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে অভিযোগে প্রকাশ। লবণের দাম স্বাভাবিক থাকলেও ১২ শত একর মাঠ খালি থাকছে বলে স্থানীয় লবণ চাষীদের অভিমত। অনেক দিনের পুরনো পেশা হিসেবে ছেড়েও দিতে পারছেনা লবণ চাষ। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন গুলোতে এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদনের মহাযজ্ঞ। কিন্ত সরকারের দিকে চেয়ে থাকছে অপরাপর চাষীরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকায় অবস্থিত সি ব্লক, ডি ব্লক ঘোনাসহ আরো বেশ কয়েকটি ঘোনার লবন মাঠে এখনো কোন চাষা মাঠে নামেননি। নভেম্বর মাসের দিকেই লবণ উৎপাদন শুরুর লক্ষ্য নিয়ে পার্শ্ববর্তী মাঠ পরিচর্যা করেছে স্থানীয় কৃষকরা। গোমাতলীর কৃষক ছাবের আহম্মদ, মোঃ হোছেন , রাজঘাট এলাকার কালা মিয়া জানান, গত ১৫-১৬ অর্থ বছরের লবন মৌসুমে উৎপাদিত লবনের দাম ছিল ,আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চাষীরা খুবই লাভবান হয়েছিল। বর্তমান মহাজোট সরকার প্রান্তিক লবণের মূল্য নির্ধারণ ও বিদেশ থেকে আমদানী বন্ধ করে দেওয়ায় গোমাতলীর লবণ চাষিরা লাভবান হয়েছিল। রাজঘাট এলাকার ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন জানান, গত রোয়ানুর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে । কক্সবাজর সদর উপজেলা লবন চাষি সমিতির সভাপতি হান্নান মিয়া জানান, পাউবোর কাছে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকা এবং তাদের অসহযোগিতার কারণে এতদিন সময় হয়েছে। তবে ওই সময়ে সংস্কারের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল বলে দাবী করেন তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক হলে এ এলাকার প্রায় ১৪/১৫ শত লবণ চাষি মাঠে নামতে পারবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

অপর ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন জানান, জোয়ারের পানির কারনে ওই এলাকার উত্তর গোমাতলী, আজিমপাড়া, কাটাখালী ও রাজঘাট এলাকার কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন জোয়ারের পানি উল্লেখিত এলাকার বসতঘর ও শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে। পাউবোর ৬৬/৩ নং পোল্ডার সংলগ্ন এলাকার ২শ মিটার ভাঙ্গনটিই এলাকার লোকজনকে বেশী ভোগান্তিতে ফেলেছে বলে জানালেন, গোমাতলী মোহাজের কৃষি উপনিবেশ সমিতির নেতা ও চিংড়ি চাষী সাইফুদ্দিন।

তিনি আরো জানান, বাধের দু’পার্শ্বে থাকা নদীগুলো খরস্রোত হওয়ায় ভাঙ্গন দিনে দিনে তীব্রতর হচ্ছে। সরকারী সাহায্যের দিকে তাকিয়ে না থেকে জমি মালিকেরা প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে বিকল্প উপায়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কিছুদিন আগে বাধ নির্মাণ করেন। কিন্ত জোয়ারের তীব্রতায় তাও ভেসে গেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, গোমাতলীবাসীর দূর্ভোগ লাঘবে পাউবোর কাছে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আবেদন জানানো হয়েছে কিন্ত অদ্যবধি কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পাউবো কক্সবাজারের পরামর্শক্রমে বিশ্ব ব্যাংকের ফান্ড থেকে বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও সংশ্লিষ্ট শাখায় ইতিমধ্যে আবেদন জানানো হয়েছে।

গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন বলেন, ভাঙ্গন এলাকায় কংক্রীটের ব্লক বসিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে ৬৬/৩ পোল্ডার সংলগ্ন বিশাল এলাকা কিছুদিনের মধ্যেই সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে।

কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর আলম সিদ্দিকীর মতে, উপকূল রক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামত আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঁধ মেরামত না করে অভ্যন্তরীন সড়কসমুহ মেরামত করলেও তা কোনো কাজে আসবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের কিছু কিছু অংশ সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকি বরাদ্দ হাতে এলে দ্রুত টেকসই বাধ নির্মাণে প্রচেষ্টা চালানো হবে। দুর্ভোগে পড়া জনগণ শ্রীঘ্রই টেকসই বাধ ও স্লুইস গেইট সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত

কুতুপালং পশ্চিমপাড়ায় পরিচয় যাচাইহীন রোহিঙ্গা ভাড়া, বাড়ছে শঙ্কা

মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি ও সেনা জান্তার সংঘর্ষে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ইউনাইটেড নেশন টিম

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ইউনাইটেড নেশন ফোরাম বাংলাদেশ স্টাডি প্রোগ্রাম (BSP) এর ...

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ধর্ম ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো “বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ...