প্রকাশিত: ১১/০৭/২০১৬ ৯:১৭ পিএম

বিশেষ প্রতিবেদক::

যে কোন প্রকারে আবারো ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বহুল আলোচিত পিয়ন ছৈয়দ নূর। তার ঘনিষ্ঠ একাধিক উমেদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এতে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে আতংক। বিভিন্ন অপকর্মের ফলে ইতিপূর্বে ঈদগাঁও থেকে রামু সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে শাস্তিমূলক বদলী হয়েছিল সে। ঈদগাঁও ইউনুয়ন ভূমি অফিসে ইতিপূর্বে কর্মরত থাকাকালীন তার মেয়েজামাই শুক্কুর ও অপর কয়েকজনকে অত্র অফিসে উমেদারীতে নিযুক্ত করে। তখন থেকে ঈদগাঁও ভূমি অফিসের সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছে অবৈধ উমেদার শুক্কুরের নেতৃত্বাধীন সিন্ডকেট। সূত্রে প্রকাশ “টাকার খনি” খ্যাত ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আবারো বদলী হয়ে আসতে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার দুই কর্মচারীর সাথে লাখ টাকার চুক্তিতে নেমেছে সে। ভূমিদস্যুতা, নামজারী ও খতিয়ান বাণিজ্য, টাকা আত্নসাৎ ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপকর্মের নায়ক ছৈয়দ নূরের ঈদগাঁওতে ফিরে আসার খবরে অাতংকে ভূগছেন সেবাপ্রার্থী ও সর্বস্তরের জনগন।
ভূক্তভোগী জনগন জানান, সদরের জালালাবাদ ইউনিয়নের খামার পাড়ার মৃত মাষ্টার গোলাম কাদেরের ছেলে ছৈয়দ নূর ভূমি অফিসে পিয়ন পদে চাকরী করে আসলেও বিভিন্ন সময় নিজকে তহসিলদার হিসাবে জাহির করে। ভূমি প্রশাসনে চাকরির দাপট দেখিয়ে এলাকায় সবসময় কর্তৃত্ব জাহির করে সে। যে কেউ নতুন ঘর-বাড়ী করার চেষ্টা করলেই দলবলসহ সেখানে গিয়ে বাধা দিয়ে টাকা দাবী করে সে। খামার পাড়ার দুই সহোদর আবুল কালাম ও নূরুল আলম বলেন, গতবছর পৈত্রিক বসত ভিটায় বাড়ী করার সময় জমি পাচ্ছে বলে টাকা দাবী করে ছৈয়দ নূর। স্হানীয় মোঃ মুছা বলেন, ২০১২ সালে বাপ-দাদার ভিটায় পুরনো বসতঘর ভেঙ্গে নতুন বাড়ী তৈরী করার সময় ছৈয়দ নূর সেখানে গিয়ে বাধা দেয় ও টাকা দাবী করে। ভূক্তভোগীরা এ নিয়ে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দায়ের করলে পিছু হটে ছৈয়দ নূর। একই এলাকার বয়োঃবৃদ্ধ শফিউল আলম জানান, ১০ বছর আগে তার ৪০ শতক ধানী জমি ছৈয়দ নূর দখল করে নেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। পূর্ব ফরাজী পাড়ার ফরিদ বলেন, ২০১৩ সালে বসতবাড়ীর পাক ঘর মেরামত করার সময় সেখানে গিয়ে মিস্ত্রীকে কাজ করতে নিষেধ করে ছৈয়দ নূর ও জমি পাচ্ছে বলে টাকা দাবী করে। পরে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পিছু হঁটে সে। নিরিবিলি গ্রুপের কর্মকর্তা মৌলানা মাহমুদুল হক বলেন খামার পাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন তার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ২০ শতক ধানী জমি প্রায় ৪ বছর ধরে দখল করে রাখে ছৈয়দ নূর ও তার বাহিনী। এ নিয়ে স্হানীয়ভাবে অনেক বিচার সালিশ হলেও ছৈয়দ নূর তা মানেনি। অবশেষে সে জমি বিক্রি করে দিতে হয়। স্হানীয় আহমদ উল্লাহ বলেন, তাদের বসত ভিটা থেকে জমি পাচ্ছে বলে দাবী করে বেশ কয়েকবার হানা দেয় ছৈয়দ নূর ও তার দলবল। তখন বাড়ীর মহিলারা ধাওয়া করলে পালিয়ে যায় তারা। পূর্ব ফরাজী পাড়ার গৃহিনী জান্নাতুন নাঈম বলেন, তাদের জমি ছৈয়দ নূর ও তার দলবল দখল করার চেষ্টা করলে এ নিয়ে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা (নং- এম আর -১৯৫/১৫) দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত ছৈয়দ নূরদের বিরূদ্ধে ১৪৪ ধারায় চুড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার নাছিম উদ্দীন সিকদার, হামিদ সিকদার ও  আমান উল্লাহ সিকদার বলেন, খামার পাড়া জামে মসজিদ পুকুুরের পূর্বপাড় সংলগ্ন তাদের পৈত্রিকসুত্রে প্রাপ্ত জমি ২০১০ সালে দখল করার চেষ্টা করে ছৈয়দ নূর ও তার বাহিনী। এ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। স্হানীয় আবুল কাশেম বলেন, তাদের ওয়ারিশ থেকে ছৈয়দ নূরের দুই স্ত্রীর নামে মাত্র এককড়া জমি কিনে দূর্নীতির মাধ্যমে দশকড়া নামজারী করিয়ে পুরোটাই দখল করে নেয় সে। পোকখালী নাইক্ষ্যংদিয়ার নূর মোহাম্মদ বলেন জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক ঝামেলা ও হয়রানি করেছে ছৈয়দ নূর। আরো অনেকে হয়রানি হয়েছে তার দ্বারা। এছাড়া নামে-বেনামে সরকারী খাস জমি বন্দোবস্ত করে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরূদ্ধে। এলাকাবাসী জানান, পূর্ব ফরাজী পাড়া ব্রীজঘাট থেকে শুরু করে (রাস্তার উত্তর পাশের) পূর্বদিকে প্রায় এক কিলোমিটার বিস্তৃত ভরাট হয়ে যাওয়া খাস জলনাশী অন্যজনের নামে বন্দোবস্তী করে নেয় ছৈয়দ নূর। স্হানীয় আমান উল্লাহ বলেন, গত ৪ রমজান সকালে তার মৃত বড়বোনকে দাফনের জন্য খামার পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্হানে কবর খুড়তে গেলে সেখানে গিয়েও বাঁধা দেয় ছৈয়দ নূর। গোরখোদক মোঃ কালু বলেন, এ সময় দশ হাজার টাকা দাবী করে ছৈয়দ নূর। খামার পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুসল্লীরা বলেন, গত বছর মসজিদের দোতলা সম্প্রসারণের সময় এক শুক্রবারে প্রকাশ্য জুৃমায় দাঁড়িয়ে তার অনুমতি ছাড়া মসজিদের কাজ না করার হুকুম দেয় ছৈয়দ নূর। এভাবে বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে এলাকায় মূর্তিমান আতংকে পরিণত হয়েছে পিয়ন ছৈয়দ নূর। স্হানীয় বদি আলম জানান, তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় ছৈয়দ নূর ও তার বাহিনী ২০১৪ সালের ৯ আগষ্ট এলাকার এক যুবককে মারধর ও অপহরণ করে ছৈয়দ নূরের বাড়ীতে আটকে রাখে। পরে খবর পেয়ে ঈদগাওঁ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন এএসআই আতিক উল্লাহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, সদর মডেল থানা ও কক্সবাজারের বিভিন্ন আদালতে তার বিরূদ্ধে অনেক অভিযোগ-মামলা রয়েছে। এর মধ্যে যুগ্ন জেলা জজ ১ম ও ২য়  আদালতে বিচারাধীন মামলা নং ১৮৬/০৮, ১০৬/০৮, ১১৬/০৯, ০৭/২০১৫ উল্লেখযোগ্য। স্হানীয় মেম্বার ওসমান সরোয়ার ডিপু বলেন পিয়ন ছৈয়দ নূরের বিরূদ্ধে এলাকায় ভূমিদস্যুতা, প্রতারনা ও চাঁদাবাজীর অনেক অভিযােগ রয়েছে, এলাকার একজন ঘৃনিত লোক সে। মেম্বার আরো বলেন, ছৈয়দ নূরের ৪ স্ত্রী ও সন্তানদের পারিবারিক বিভিন্ন ঝামেলা, তার বিরূদ্ধে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন ভূক্তভোগীদের অভিযোগ শুনতে শুনতে স্হানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্লান্ত, সরকারী চাকরীরত একজন পিয়ন এত অপকর্ম কিভাবে করে ? উপরোক্ত সব ব্যাপারে অভিযুক্ত ছৈয়দ নূরকে ফোন করলে “সাংবাদিকরা খুব জ্বালাচ্ছে” বলে মোবাইল বন্ধ করে দেন। ভূমি প্রশাসনের মূর্তিমান আতংক ছৈয়দ নূরের ঈদগাঁও ফিরে আসার আশংকায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পাঠকের মতামত

কুতুপালং পশ্চিমপাড়ায় পরিচয় যাচাইহীন রোহিঙ্গা ভাড়া, বাড়ছে শঙ্কা

মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি ও সেনা জান্তার সংঘর্ষে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ইউনাইটেড নেশন টিম

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ইউনাইটেড নেশন ফোরাম বাংলাদেশ স্টাডি প্রোগ্রাম (BSP) এর ...

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ধর্ম ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো “বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ...