ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২০/০৯/২০২৫ ১১:০৯ এএম

মানবিক বিশ্ব গড়ার বড় চ্যালেঞ্জ কাঁধে নিয়ে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বিশ্ব। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে গাজার মানবিক বিপর্যয়, জলবায়ু সংকট থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা—এমন বহুমাত্রিক সংকটের মেঘ যখন বিশ্বজুড়ে, তখনই শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের বার্তা নিয়ে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশন। ‘একসঙ্গে ভালো: শান্তি, উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পথে ৮০ বছর এবং আরও বেশি’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক মঞ্চে মিলিত হবেন ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।

এই বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার ভাষণে বাংলাদেশের নতুন গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জোরালো আহ্বান থাকবে বলে জানা গেছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূস নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। তার ভাষণে জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সংস্কার, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় এবং সাবেক স্বৈরাচারী শাসন-পরবর্তী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি তার ভাষণে উঠে আসতে পারে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু, অর্থায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়।

জানা গেছে, জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে ড. ইউনূস এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকগুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে। এসব বৈঠকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকারের অধীনে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিবেশ এবং সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বাংলাদেশকে একটি বিনিয়োগ-বান্ধব দেশ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন।

এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু এসডিজি অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হবে।

এ ছাড়া অধিবেশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নৈতিক ব্যবহার এবং এর সুশাসন নিয়ে আলোচনা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই আলোচনায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সফরে ড. ইউনূসের সঙ্গে থাকছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নতুন আশা: এবারের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ড. ইউনূসের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করছে। এই সম্মেলন থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটি কার্যকর ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এই দীর্ঘস্থায়ী সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

ফিলিস্তিন থেকে জলবায়ু: জানা গেছে, এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে ফিলিস্তিন ও গাজা পরিস্থিতি। ইসরায়েলি আগ্রাসনে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় এবং দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে জোরালো আলোচনা হবে। তবে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না দেওয়ায় এ প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে। অন্যদিকে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার যৌথ উদ্যোগে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হতে পারে।

নতুন মেরূকরণের ইঙ্গিত: এবারের অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নতুন মেরূকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরিবর্তে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের সাম্প্রতিক শীতলতার ইঙ্গিত দেয়। এক অস্থির সময়ে বিশ্বনেতারা যখন এক ছাদের নিচে মিলিত হচ্ছেন, তখন তাদের কাছ থেকে দৃঢ় পদক্ষেপ এবং সম্মিলিত সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই হবে এবারের অধিবেশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—এমনটা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঠকের মতামত

জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ, প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বাংলাদেশ। এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ...

জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। ...

বিমান ছিনতাই করেছিলেন নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির স্বামী

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। দুর্নীতির ...