
মৎস্য খাতের টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে নেদারল্যান্ডস সরকার। বিশেষত কৃষি ও জলজ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত জোরিস ভ্যান বোমেল।
সম্প্রতি কক্সবাজারের স্থানীয় একটি হোটেলে ইন-পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম (আইপিআরএস) ভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আইপিআরএস নামে এই কৃষি প্রযুাক্তর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
আইপিআরএস হলো খামারে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশন হয়। এতে খামারে আলাদা করে পানি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না। মাছ পানিতে থাকার সময় উপযুক্ত পরিবেশ অনুযায়ী পরিশোধিত হতে থাকে। এই পদ্ধতিতে যে বর্জ্য তৈরি হয়, তা পানিতে সরাসরি মিশ্রিত হয় না এবং সার হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা যায়।
পুকুর ও খামার দুই জায়গায় মাছ চাষীরা এটাকে কাজে লাগাতে পারবেন। খামারীদেরকে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করলে এটির ব্যবহার ভবিষ্যতে বাড়বে। এতে সহজ উপায়ে তারা এটি বাস্তবায়ন করতে পারবেন এবং মৎস্য চাষে টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়া সূচিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইপিআরএস জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এটি এখনও বিশাল পরিসরে প্রয়োগ হয় নি।। তবে এর ব্যবহার বাড়লে ভবিষ্যতে মৎস্য চাষের টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে ও ফুডটেকবাংলাদেশ প্রোগ্রামের অধীনে ইন-পন্ড রেসওয়ে আইপিআরএস কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত এটি একটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের কর্মসূচি। এটি ল্যারিভ ইন্টারন্যাশনাল ও আন্তর্জজাতিক কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স যৌথভাবে বাস্তবায়িত করছে। সারা বাংলাদেশে সেন্টার অফ এক্সিলেন্স (সিওই) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষকদের সক্ষমতা উন্নয়নে কাজ করার লক্ষ্যে এটি পরিচালিত হচ্ছে। টেকসই জলজ চাষ পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা এর আর একটি লক্ষ্য। একই সঙ্গে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি হচ্ছে। সার্বিকভাবে এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র মাছ চাষীদের অন্তর্ভুক্তিমূলক সুযোগ ও সম্ভাবনা বিকশিত হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ, ডি হিউসের রপ্তানি পরিচালক (এশিয়া) জর্ডি ড্রাইটেলার ও লাইটক্যাসল পার্টনার্সের কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্টানে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, মাছ চাষের ঘনত্ব বৃদ্ধি এবং জাতীয় জলজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে আইপিআরএস প্রযুক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। তিনি এই ধরনের উদ্ভাবন থেকে ক্ষুদ্র চাষীরা যাতে উপকৃত হতে পারে এবং লাভবান হতে পারে তা নিশ্চিত করার জোর দেন।
ডঃ মোঃ আবদুর রউফ মৎস্য চাষের টেকসই উন্নয়নে আইপিআরএসের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দেন।
প্রসঙ্গত: বাংলাদেশের জিডিপিতে মৎস্য খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। বিশেষত দেশের, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের মোট জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ছিল প্রায় ২.৫৩% এবং কৃষিজ জিডিপিতে এর অবদান ছিল প্রায় ২২.২৬%। প্রায় ২ কোটি মানুষ এই খাতের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, এবং দেশের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক আইপিআরএস জলজ চাষ প্রযুক্তি মৎস্য চাষের টেকসই উন্নয়নে এক নতুন যাত্রা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাঠকের মতামত