নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫/১২/২০২৫ ২:২২ পিএম

কায়সার হামিদ। ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষে নিজেকে জড়িত করেন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডে। স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে প্রমাণ করেন নিজের দক্ষতা। পড়াশোনা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে নিজের অভিজ্ঞতা। বর্তমানে সরকারের নিবদ্ধিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক। যেখানে শতাধিক তরুণ-তরুণী ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা নিজেদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছে।

কায়সার হামিদ এখন ইয়াসিদের নির্বাহী পরিচালক। বর্তমানে বহুমুখী সামাজিক কাজ বাস্তবায়ন করছে এই সংগঠন টি। যা সাড়া ফেলেছে কক্সবাজার সহ চট্টগ্রামে।

তবে এতটা সহজ ছিলোনা কায়সার হামিদের পথচলা। কাঁটাযুক্ত পথ মাড়িয়ে নিজে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি দাঁড় করিয়েছেন ইয়াসিদের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন , যা উপকূলের শিশুদের ও তরুণ তরুণী দের স্বপ্ন দেখার আড়ুঁতঘরে পরিণত হয়েছে।

নিজের ও ইয়াসিদের স্বপ্নময় পথচলার গল্প শুনতে প্যানোয়া মুখোমুখি হয় কায়সার হামিদের। দীর্ঘ আলাপে উঠে আসে, নানা সুখ-দুঃখের গল্প।

কায়সার হামিদের জন্ম কক্সবাজার শহরের অদূরে পিএমখালীর অজপাড়া গ্রামে। নিজের গ্রামেই পড়াশোনা শুরু হয় তার। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া কায়সারের মাথায় অল্প বয়সে চেপে বসে পারিবারিক দায়িত্ব ও বাবার টানাপোড়েনের বাস্তবচিত্র। কারণ বাবার পক্ষে একসঙ্গে ৫ ভাইকে পড়াশোনা করানো মোটেও সম্ভব নয়। তাই কোন রকম এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে জড়িয়ে যান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে। নিজের পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি শপথ নেন ভবিষ্যতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ ও তরুণদের কে দক্ষতার মাধ্যমে কর্মমুখী করবেন তিনি।

শুরুটা হয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির সাথে। সেখানে কাজ করার সময় পরিচয় হয় নতুন নতুন মানুষের সাথে। মিশন-ভিশনে স্থির কায়সার নিজের লক্ষ্য অর্জনে বিন্দু পরিমাণ বিচ্যুত হননি। ভাষাগত দক্ষতা, প্রশিক্ষন দেওয়া, বক্তৃতা ও টিম লিড করার সুনিপুন দক্ষতা অর্জন করেন ধীরে ধীরে।

টানা ১০ বছর বিভিন্ন স্হানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন সাথে দেশি-বিদেশি অনেক সংস্থায় দুভাষীর কাজ করেন কায়সার। এরপর মোটা অংকের বেতনে চাকরিতেও যোগদান করার সুযোগ হলেও কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাড়নায় লোভনীয় চাকরি থেকে সড়ে আসতে এক মিনিটও সময় নেননি তিনি।

২০২০ সালে শুরু করেন ইয়াসিদের পথচলা। শুরু হয় দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের যাত্রা। কিন্তু তখন পৃথিবীজুড়ে নেমে আসা করোনা মহামারী শুরুতেই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় ইয়াসিদের।

তবে করোনা মহামারীও দমন করতে পারেনি তাদের অগ্রযাত্রা। করোনাকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম শুরু করে ইয়াসিদ। আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অল্প সময়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় তারা।

বিভিন্ন দেশি-বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বিশেষ করে পিস ট্রু মিউজিক ইন্টারন্যাশনাল ও বিল কুক ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায় অর্থাভাবে অনাহারে থাকা এবং করোনায় চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুরু করেন কায়সার হামিদের ইয়াসিদ। যা সফলতা এনে দেয় এই সংগঠনকে।

করোনায় মহামারী ভীতি উপেক্ষা করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইয়াসিদকে আর পেছনে থাকাতে হয়নি। যে সংগঠন শুরুর সময় কায়সারের পাশে হাতেগুনা ৪ থেকে ৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ছিলো সেখানে সময়ের ব্যবধানে বাড়তে থাকে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা। বাড়তে থাকে কর্ম পরিধি। প্রতিটি স্হানীয় ও জাতিয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে ইয়াসিদের অকুতোভয় স্বেচ্ছাসেবকরা ছুটে যান দুর্গত মানুষের পাশে। যেখানে সমস্যা সেখানেই নিজেদের আবিস্কার করেন এই সংগঠনের সেচ্ছাসেবী রা ।

এখন ইয়াসিদের বহুমুখী কার্যক্রম চলমান। কায়সার গল্পে গল্পে তুলে ধরলেন চলমান কাজের ফিরিস্তি।

মিউজিকের মাধ্যমে শান্তি: এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মিউজিক শেখাচ্ছেন তারা। যা সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি মেন্টাল হেলথের কাজ করছে।

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে ইয়াসিদ। উচ্চ মাধ্যমিকে অর্থাভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে না পারা ৫০ জন শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ পড়াশোনার দায়িত্ববহন করছে সংগঠন টি , যা চলছে তিন বছর ধরে।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও কাজ করছে তারা। ইয়াসিদের স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্গম এলাকায় গিয়ে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করছে নারীদের।

দক্ষতা উন্নয়ন নিয়েও কাজ করছে ইয়াসিদ। নিয়মিত ব্যাচে বছরের পর বছর ধরে ইংরেজি ভাষা শেখাচ্ছে তারা। গত ৫ বছরে ৬৫০ জনকে ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারা, যারা বর্তমানে বিভিন্ন দেশি বিদেশি সংস্হায় কাজ করে পরিবারকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সোশ্যাল কোহেশন ও পিস বিল্ডিং নিয়েও কাজ করছে ইয়াসিদ। রোহিঙ্গা শিশুদের ইংরেজী ভাষা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মিউজিকও শেখাচ্ছেন তারা।

ইয়াসিদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন কায়সার হামিদ। তার স্বপ্ন যুবকরা যেন স্হানীয় ও জাতীয় উন্নয়নের অংশগ্রহণ থেকে পিছিয়ে না পড়ে সেভাবে তাদেরকে গড়ে তোলা। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করাও তার অন্যতম উদ্দেশ্যে। সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তৈরী করে তরুণদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গড়ে তোলাই তার অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান কায়সার হামিদ। বিশেষ করে নারীদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গড়ে তুলতে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অগোচরে সমাজের জন্য অসামান্য অবদান রাখলেও স্বীকৃতির বেলায় পিছিয়ে কায়সার হামিদের মত অনেক সেচ্ছাসেবী ও ইয়াসিদের মত অনেক সংগঠন। তবুও এক মুহুর্তের জন্য দমে যায়নি কায়সার ও তার সংগঠন ।
তবে ইতোমধ্যে ইউএন ভলাটিয়ার্স ফর বাংলাদেশের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস পুরস্কার ২০২২ ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড থেকে ভলান্টিয়ার্স ফর সাসটেইনেবল ট্যুরিজম এওয়ার্ড ২৫ লাভ করেন কায়সার হামিদ।

কায়সার হামিদের মতো তরুণরা এগিয়ে আসে বলেই স্বেচ্ছায় শ্রম দিতে আসে অসংখ্য তরুণ-যুবক। অর্জন করে দক্ষতা। আর এভাবেই নিরবে দেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

পাঠকের মতামত

দেশজুড়ে মাদকের ভয়ংকর আগ্রাসন,সীমান্তপথে ঢোকে, ছড়ায় ট্রেনে

মধ্যবয়সী আক্তার হোসেনের হাতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ একটি ফাইল। যাত্রীবেশে চড়েছেন ঢাকাগামী তিতাস কমিউটার ট্রেনে। ট্রেনে ...

শিশুদের সৃজনশীলতা বাড়াবে ‘এনগেজ টুলকিট’: ব্র্যাক আইইডি

প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষকেরা একাডেমিক কারিকুলামকে প্রাধান্য দিয়ে ও নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ...

কোটবাজার দোকান-মালিক সমিতির নবনির্বাচিতদের শপথ ও দায়িত্বভার গ্রহণ

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কোটবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির শপথ গ্রহণ, দায়িত্বভার ...