প্রকাশিত: ২৫/০১/২০১৭ ১০:১৫ এএম

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার::
অভিজাত নোহা গাড়ি নিয়ে ঘোরা ‘রহস্যময়’ একটি অপরাধীচক্র মফস্বলে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আদলে পোশাক পরিহিত ১০-১২ দুর্বৃত্ত সন্ধ্যার পর গতিবিধি বাড়াচ্ছে।

কক্সবাজারের প্রতিটি উপজেলায় ঘুরছে এ চক্রটি। মাঝে মাঝে তারা ট্যুরিস্টের আদলে মিউজিক গাড়ি নিয়ে ঘুরছে। ক্ষেত্রবিশেষে পরিচয় দিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থার লোক। সরকারি দায়িত্ব পালনে নেমেছে মনে করে সাধারণ লোকজন তাদের কাজের তদারকি করে না।

সূত্র জানিয়েছে, চক্রটি গত এক মাসে কক্সবাজার জেলার পাঁচ উপজেলার শতাধিক দোকান থেকে প্রায় কোটি টাকা লুট করেছে। থেমে নেই চক্রটির দৌরাত্ম্য। লুটের খবর প্রচার পাওয়ার পর উপজেলার বিভিন্ন বাজারের দোকানিরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপরাধী চক্রটি গত ২০ দিনের ব্যবধানে মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালীর নতুনবাজার, হোয়ানকের পানিরছড়া বাজার, কেরুনতলী বাজার, ছনখোলাপাড়া বাজার, ডেইল্যাঘোনা বাজার, কালারমারছড়ার আঁধারঘোনা আনন্দ মার্কেটে হানা দেয়। এর মধ্যে পানিরছড়া, কেরুনতলী, ছনখোলাপাড়া বাজার, ডেইল্যাঘোনা বাজার, আঁধারঘোনা আনন্দ মার্কেটে একদিনেই হানা দিয়েছে।

এর পাঁচদিন পরই হানা দেয় নতুনবাজারে। চক্রটি এই পাঁচ বাজারের অন্তত ৩০টির বেশি দোকান থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। একই সময়ে চকরিয়ার বদরখালী বাজার, পেকুয়ার কয়েকটি বাজার, উখিয়ার কোটবাজার, কক্সবাজার সদরের ঈদগা বাজারের বেশকিছু দোকান থেকে অর্ধ কোটি টাকার বেশি লুট করে নিয়ে যায়। বিশেষ ধাতু ব্যবহার করে দোকানের তালা খুলে তারা সহজে সর্বস্ব লুট করে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, চক্রটি অধিকাংশ সময় একটি কালো রঙের নোহা গাড়ি নিয়ে ঘোরাফেরা করে। রাত ১১-১২টার পর থেকে শুরু হয় তাদের বিচরণ। টার্গেটকৃত বাজারের মূল পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে তারা। এসময় বাজার পরিচালনা কমিটির লোকজনসহ কেউ পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের বেশির ভাগ সময় র‌্যাবের টিম বলে পরিচয় দেয়। কিছু ক্ষেত্রে পরিচয় দেয়া হয় গোয়েন্দা সংস্থার লোক।

সরকারি কোনো অভিযানে এসেছে মনে করে সাধারণ ব্যবসায়ী কিংবা বাজার সমিতির নেতারা তাদের বিষয়ে আর মাথা ঘামান না। এ সুযোগে গভীর রাতে তারা মিশনে নামেন।

মহেশখালীর নতুনবাজার বণিক সমিতির সভাপতি সিরাজ বাশি জানান, চক্রটি এক রাতেই নতুনবাজারের ১৩টি দোকানে ঢুকে ক্যাশ বাক্সে থাকা টাকা নিয়ে গেছে। কোনো মালামালে হাত দেয়নি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোনো বিশেষ ধাতু ব্যবহার করে তালা খুলেছে তারা।

হোয়ানক টাইমবাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম জানান, ১৫ জানুয়ারি রাত ২টার দিকে কালো রংয়ের নোহা গাড়িটি টাইমবাজারে অবস্থান করে। বাজারের পাহাদার তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের র্যাবের টিম বলে পরিচয় দিয়ে আসামি ধরতে বিশেষ অভিযানে এসেছেন বলে উল্লেখ করে।

সন্দেহ হওয়ায় নাইট গার্ড সমিতির সভাপতিসহ আশেপাশের ব্যবসায়ীদের ডেকে তুলেন। লোকজন জড়ো হচ্ছে দেখে রহস্যময় চক্রটি গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

ওই বাজারের দোকানদার আবদুল করিম জানান, গাড়িটি ওই দিন রাত ৯টার দিকে বাজার হয়ে দক্ষিণ দিকে চলে যায়। এর ঘণ্টাখানেক পর গাড়িটি বাজারের উত্তর পাশে গিয়ে অবস্থান করে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আন্তঃজেলা ডাকাত দল ডিজিটাল সিন্ডিকেট গঠন করেছে। র‌্যাব ও গোয়েন্দা সদস্যদের সফল অভিযানকে পুঁজি করে তারা অভিনব পন্থায় ডাকাতিতে নেমেছে। এতে বিনা বাধায় অঢেল টাকার নাগাল পাচ্ছেন তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহেশখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল কামাল জাগো নিউজকে বলেন, অভিনব পন্থায় বেশ কয়েকটি বাজারের দোকান লুটের খবর পেয়েছি। এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. কমান্ডার আশেকুর রহমান বলেন, র‌্যাব-গোয়েন্দাদের বেশ ধরে এ অপকর্ম সত্যি উদ্বেগজনক। বিষয়টি আমাদের নজরে ছিল না। যেকোনো জায়গায় এ রকম কোনো চক্রের সন্ধান পেলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি র‌্যাব অফিসে ফোন করতে বলেন। খবর পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কেউ শুধু গাড়ির নাম্বার ও অবস্থানটি জানাতে পারলেই পুলিশ দ্রুত ওই এলাকায় পৌঁছাবে। পুলিশ ইতোমধ্যেই চক্রটি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সুত্র: জাগো নিউজ

পাঠকের মতামত