উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২/০৩/২০২৩ ৯:৫৯ এএম

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তথাকথিত হিজরতের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীনে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া ৪ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের পটিয়া বাইপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার চার জঙ্গি হলেন— হোসাইন আহমদ (২২), নিহাল আব্দুল্লাহ (১৯), আল আমিন (২২) এবং আল আমিন ওরফে পার্থ কুমার দাস (২১)। এদের মধ্যে হোসাইন আহমদের বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনায়, নিহাল ও আল আমিনের কুমিল্লার সদরে এবং আল আমিন ওরফে পার্থের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়।

বুধবার (১ মার্চ) সকালে নগরের চান্দগাঁও র‌্যাব-৭ মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ।

তিনি বলেন, গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ জন তরুণ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবার কুমিল্লার কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধারে অভিযান চালাতে গিয়ে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায়। একইসঙ্গে ওই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার কথাও জানতে পারে র‌্যাব।

পরে পার্বত্য এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত বছরের ২০ অক্টোবর রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের ৭ জন ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালায়।

আগের অভিযানের কথা জানিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫ সদস্যকে, ২৩ জানুয়ারি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে ওই সংগঠনের শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে, ৭ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচির রেমাক্রী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, গোলাবারুদ ও নগদ ৭ লাখ টাকাসহ জঙ্গি সংগঠনের ১৭ জন, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে র‌্যাবের পরিচালিত অভিযানে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৫৫ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’র ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এই সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রধান মাইমুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব এবং ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির, দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থসরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারের সঙ্গে ‘কেএনএফ’র প্রধান নাথাম বমের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে নাথাম বমের সঙ্গে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয়। এরপর পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করত।

তিনি আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের ফলে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে বের হয়ে সমতলে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭ এর অভিযানে চট্টগ্রামের পটিয়া বাইপাস এলাকা থেকে তাদের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, তথাকথিত হিজরতের প্রথমে তাদের সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার চর এলাকা, ঢাকা ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শারীরিক কসরত, জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, তাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়া হতো। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে তাদের সমতল থেকে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয় এবং শূরা সদস্য রাকিরের মাধ্যমে তারা পার্বত্য অঞ্চলের বাকলাই পাড়া হয়ে কেটিসি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে পৌঁছায়। পার্বত্য অঞ্চলে তারা বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।

গ্রেপ্তার চারজন যেভাবে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’য় যুক্ত হন—

পটুয়াখালীর হোসাইন আহমদ: হোসাইন রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় পড়তো। তিনি ২০২১ সালে সিরাজের মাধ্যমে এই সংগঠনে যোগদান করে। পরে সিরাজ তাকে সংগঠনের শূরা সদস্য রাকিবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সংগঠনের শূরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বাকলাই পাড়া হয়ে পাহাড়ে কেটিসিতে গমন করে। পাহাড়ে গমনের পর একে-৪৭ সহ বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, বোমা প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সামরিক কৌশল বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সে পাশ্ববর্তী দেশের সীমান্তবর্তী রেংক্লাং পাহাড়সহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অবস্থান করে। পরে পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তারা ভাগ হয়ে ছোট একটি গ্রুপে পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করে।

কুমিল্লার নিহাল আব্দুল্লাহ: নিহাল আব্দুল্লাহ এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০২০ সালের শেষের দিকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে কুবা মসজিদের আগে গ্রেপ্তার ইমাম হাবিবুল্লাহ’র সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই সংগঠনে যোগদান করেন। তিনি গত বছরের ২৩ আগস্ট তথাকথিত হিজরতের জন্য বাসা থেকে বের হয়। এসময় কুমিল্লা, পটুয়াখালী, সাভার ও চাঁদপুর এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থেকে জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তিনি হিজরতে থাকাকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনার উপর তার নেতৃত্বে একটি হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে তাদের সেই হামলার পরিকল্পনা নসাৎ হয়ে যায়। পরে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে সংগঠনের শূরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বাকলাই পাড়া হয়ে কেটিসিতে গমন করে। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ তরুণের মধ্যে তিনি একজন। পাহাড়ে আসার পর সে সব ধরনের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল।

কুমিল্লার আল আমিন: আল আমিন কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল। ২০২১ সালে মাদ্রাসার এক সহপাঠীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন তিনি এবং আগে গ্রেপ্তার ফাহিমের মাধ্যমে উগ্রবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন বই ও পাশ্ববর্তী দেশে মুসলিম নির্যাতনের ভিডিও কন্টেন্ট দেখে সংগঠনে যোগদান করে। পরে তথাকথিত হিজরতের নামে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে পরিবার থেকে নিরুদ্দেশ হয়। এসময় বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থেকে জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এরপর গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সংগঠনের শূরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে গমন করেন। পাহাড়ে আসার পর তিনিও সব ধরনের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল।

খুলনার আল আমিন ওরফে পার্থ কুমার দাস: আল আমিন (নও মুসলিম) স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ২০১৮ সালে স্থানীয় এক ইমামের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তিনি রাজধানীতে চলে আসেন এবং সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করা শুরু করে। তিনি সিরাজের মাধ্যমে সংগঠনটিতে যোগদান করে। পরে ২০২১ সালের নভেম্বরে শূরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে আসার পর সব ধরনের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনিও।

আটকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের কথা জানিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন সময় ‘কেএনএফ’র নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যেত। প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ তারা অর্থের বিনিময়ে ‘কেএনএফ’র সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করত এবং ‘কেএনএফ’র সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে ওই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। পরে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা সংগঠনের আমীরের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করে। তারা ছোট ছোট গ্রুপে সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া এবং তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। গত ৪ দিন আগে তারা সমতলে আসার উদ্দেশ্যে পাহাড়ের গহীন থেকে হেঁটে বান্দরবানের টঙ্কাবতী এলাকায় আসেন। পরে অটোরিকশাযোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আসার পথে পটিয়া বাইপাস এলাকা থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়। এসময় আরও ৪-৫ জন পালিয়ে যায়

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...