প্রকাশিত: ১২/০৪/২০১৮ ৮:০৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:১৬ এএম

গৃহকর্মী হিসেবে ২০১৭ সালের নভেম্বরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার তরুণী চম্পা আক্তার (২০)। আশা ছিল পরিবারে স্বচ্ছলতা আনার। কিন্তু তা তো হয়নি, উল্টো চম্পারই জীবন যায় যায় বলে দাবি করেছে তার পরিবার। তাকে দেশে আনতে সরকারের কাছে আবেদনও করা হয়েছে।

চম্পার পারিবারের ভাষ্য, সৌদি গৃহকর্তা ও তার তিন ছেলের শারীরিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন চম্পা। প্রতিদিন সকাল-বিকেল তার ওপর চলে নির্যাতন। ওই বাসার মালিক তাকে কিছুতেই বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। নির্যাতন সইতে না পেরে দেশে গোপনে ফোন করে পরিবারকে আত্মহত্যার কথা জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে উদ্ধার করে দ্রুত দেশে আনার আকুতিও জানান এই তরুণী।

চম্পা আক্তারের গ্রামের বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার বানিয়াচং গ্রামে। তার পাসপোর্ট নম্বর বিই-০১৮১৬১৭।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে তাদের এলাকার সিরাজ নামের এক দালাল বিনা খরচে সরকারিভাবে গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদি আরবে নারীদের পাঠানো হচ্ছে বলে চম্পার পরিবারকে বোঝায়। এরপর তারা মেয়ের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সৌদিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিদেশ পাঠানোর জন্য রাজধানীর মতিঝিলে রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের অফিসে চম্পাকে নিয়ে নিয়ে যান সিরাজ। সেখানে তাকে হাতে-কলমে গৃহকর্মীর প্রশিক্ষণও দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

পরে চম্পাকে সৌদি আরবের এজেন্টদের কাছে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে সৌদির এজেন্টরা একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দেন। এরপরই তার আর কোনো খোঁজ ছিল না। সম্প্রতি চম্পা তার পরিবারকে ফোন করে জানিয়েছে, তিনি একটি বাসায় আছেন। কিন্তু সেখানে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে। অধিকাংশ দিনই তাকে খেতে দেওয়া হয় না।

চম্পা আক্তারের বোন হেলেনা আক্তার জানান, রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে গত বছরের নভেম্বর মাসে গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদিতে যান চম্পা। সেখানে যাওয়ার এক মাস পর দেশটির দালালরা তাকে আলকান এলাকার ২০১০১২ নম্বর বাসার কর্তার কাছে বিক্রি করে দেন। বিক্রি করে দেওয়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চম্পার। তবে কিছুদিন আগে চম্পা তার পরিবারকে ফোন করে বিষয়গুলো জানিয়েছে। সেখান থেকে উদ্ধার না করা হলে আত্মহত্যা করবে বলেও জানিয়েছে সে।

হেলেনার ভাষ্য, চম্পা ফোনে এ-ও জানিয়েছে যে, সে এখনো সেই বাসাতেই অবস্থান করছে। কিছুতেই বের হতে পারছে না। সারাক্ষণ তাকে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। বাসার গৃহকর্তা ও তার তিন ছেলে চম্পাকে একটি ছোট ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখছে।

হেলেনা জানান, চম্পা গৃহকর্তার কাছে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছে। তবে গৃহকর্তা চম্পাকে বলেছেন, তাকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি কিনে নিয়েছেন। এ কারণে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো তার কাজ নয়।

‘নয় বোনের মধ্যে হেলেনা সবার ছোট। ভাবছিলাম তাকে বিদেশে পাঠালে পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসবে এবং তার ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় হবে। কিন্তু এ কী হলো!’, বলেন হেলেনা।

চম্পা এখনো ওই বাসাতেই অবস্থান করছে বলে তার পরিবার মনে করছে। চম্পাকে উদ্ধারের জন্য তারা রেজা ট্রেড ইন্ট্যারন্যাশনালের দালাল সিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে সেই সিরাজ তার পরিবারকে জানিয়েছেন, সৌদি আরবের আবু আহম্মেদ নামের একজনের কাছে চম্পাকে পাঠানো হয়। সেখানে তিনিই বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। আবু বর্তমানে উগান্ডায় থাকায় চম্পাকে ফেরত আনা যাচ্ছে না।

সৌদিপ্রবাসী তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, এ বিষয়ে রেজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কিছুতেই যোগাযোগ করার সুযোগ দিচ্ছেন না  সিরাজ। এমন অবস্থায় তারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়েছেন। চম্পাকে দেশে ফেরত আনার জন্য সম্প্রতি একটি আবেদনও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার প্রিয়.কমকে বলেন, ‘সৌদি আরব বা বিদেশের কোনো দেশে বাংলাদেশ কেউ সমস্যার সম্মুখীন হলে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হয়। মেয়েটি যদি সে দেশের দূতাবাসে আবেদন করে থাকে, তবে বিষয়টি আমরা দেখছি।’

মেয়েটির পরিবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আবেদন করেছে জানালে নমিতা বলেন, ‘যেদিন থেকে আবেদন করা হয়, সেদিন থেকেই কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। মেয়েটি কোন বাসায় এবং কোন এলাকায় আছে, তা জেনে উদ্ধারের সময় লাগবে। আর তাকে দেশে ফেরত আনাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’

প্রিয় সংবাদ

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...