উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯/১০/২০২২ ৭:৩৪ এএম , আপডেট: ০৯/১০/২০২২ ৭:৩৭ এএম

বঙ্গোপসাগরের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে সরকারিভাবে অনুমতি না থাকলেও থেমে নেই হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরাঁ নির্মাণের কাজ। আর এসব স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহারের জন্য ভেঙে আনা হচ্ছে দ্বীপে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট চুনাপাথর। সৈকত থেকে বালু তুলে দেওয়া হচ্ছে স্থাপনা রক্ষার বাঁধ।

দ্বীপের মধ্যভাগে গলাচিপা এলাকায় রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়। ওই কার্যালয়ের চারপাশে তৈরি হচ্ছে নানা স্থাপনা। অথচ এসব দেখার যেন কেউ নেই।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে এর চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা চুনাপাথর, শামুক, ঝিনুক ও প্রবাল-শৈবাল আহরণসহ সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারি এ আইন অমান্য করে ইতিমধ্যে দ্বীপে তৈরি হয়েছে ১২০টির বেশি হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ এবং ৫০টির বেশি রেস্তোরাঁ। এখন আরও ২০-২৫টি রিসোর্ট-কটেজ তৈরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সেন্ট মার্টিন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপে অবকাঠামো নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রশাসন থেকে দ্বীপে ইট, সিমেন্ট ও রড নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এসব নির্মাণসামগ্রী দিয়ে দ্বীপে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। সৈকতের পাথর-বালু তুলেও স্থাপনার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের একার পক্ষে এসব বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কক্সবাজারে অবস্থান করছেন জানিয়ে পরিবেশের এই কর্মকর্তা বলেন, শিগগরিরই সেন্ট মার্টিনে যাবেন তিনি।

সৈকত থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করে তা স্থাপনা ও বাঁধ নির্মাণে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, গত ২২ জুলাই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবকাঠামো নির্মাণ ও বালু উত্তোলনের দায়ে ‘জ্যোৎস্নালয়’ ও ‘সীমানা পেরিয়ে’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এ সময় নির্মাণাধীন আরও ১০টি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা ভেঙে দেওয়া ও মালিকপক্ষকে সতর্ক করা হয়। এখন আরও স্থাপনা হচ্ছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনাসহ ১৩টি সুপারিশ বাস্তবায়নে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে তৎপর ছিল প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী । ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েক দফায় দ্বীপে উচ্ছেদাভিযান চালিয়ে ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেন। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা। এরপর তৎপরতা থেমে যায়। এই সুযোগে শুরু হয় নতুন স্থাপনা নির্মাণের কাজ।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দ্বীপের চারদিকে বর্তমানে নতুন ২০-২৫টি হোটেল–রিসোর্ট নির্মাণের কাজ চলছে। এসব কাজে দ্বীপের প্রাকৃতিক চুনাপাথর ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। পাথর ও বালু তুলে আনার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় ব্যক্তিদের।
দ্বীপে ১২০টির বেশি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০০ জন। সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এ কারণে গতকাল শুক্রবার এসব হোটেল–রিসোর্টের কোনোটিতে কক্ষ খালি ছিল না বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা।

পশ্চিম সৈকতে আটলান্টিক রিসোর্টের জমিতে তিনতলা তিনটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। দুটি ভবনের নির্মাণকাজ কয়েক মাস আগে শেষ হয়েছে। আরেকটি ভবনের কাজ চলছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ওই ভবন নির্মাণে পাথর ও বালু আনা হচ্ছে পাশের সৈকত থেকে। জোয়ারের প্লাবন ঠেকাতে হোটেলের পশ্চিম পাশে বস্তাভর্তি বালুর বাঁধ দেওয়া হয়েছে সৈকতের কেয়া বাগান ধ্বংস করে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দ্বীপে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম সৈকতে আটলান্টিক রিসোর্টের জমিতে তিনতলা তিনটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। দুটি ভবনের নির্মাণকাজ কয়েক মাস আগে শেষ হয়েছে। আরেকটি ভবনের কাজ চলছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ওই ভবন নির্মাণে পাথর ও বালু আনা হচ্ছে পাশের সৈকত থেকে। জোয়ারের প্লাবন ঠেকাতে হোটেলের পশ্চিম পাশে বস্তাভর্তি বালুর বাঁধ দেওয়া হয়েছে সৈকতের কেয়া বাগান ধ্বংস করে।

জানতে চাইলে আটলান্টিক রিসোর্টের ম্যানেজার আমজাদ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, সৈকত থেকে বালু ও পাথর তোলা হচ্ছে না। এরপরই কল কেটে দেন তিনি।
পশ্চিম সৈকতে হোটেল জ্যোৎস্নালয় কর্তৃপক্ষও সৈকত থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করে প্রতিরক্ষা বাঁধ দিয়েছে। পাশের ‘দ্বীপান্তর’, ‘সায়রী রিসোর্ট’, ‘বেলি ইকো রিসোর্ট’এবং ‘হোটেল কিংশুক’–এরও একই অবস্থা।

  • দ্বীপের বহু হোটেল-কটেজের মালিক সৈকত থেকে পাথর-বালু তুলে বাঁধ দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত কেউ বাঁধা দেয়নি।
    মোহাম্মদ সরোয়ার, মালিক, হোটেল কিংশুক, সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজার

জানতে চাইলে হোটেল কিংশুকের মালিক মোহাম্মদ সরোয়ার বলেন, তিনি একা নন, দ্বীপের বহু হোটেল-কটেজের মালিক সৈকত থেকে পাথর-বালু তুলে বাঁধ দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত কেউ বাঁধা দেয়নি।

সৈকত ভ্রমণে আসা ঢাকার মগবাজারের স্কুলশিক্ষক সাজ্জাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তিনি যে সেন্ট মার্টিন দেখেছিলেন, এখন আর তেমনটি নেই। সৈকতসহ সবখানে গড়ে তোলা হয়েছে হোটেল–রিসোর্ট। সৈকত ও হাঁটার রাস্তাগুলোও দেখলাম আবর্জনায় ভরা।’

জানতে চাইলে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমেদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের বাঁধার কারণে দ্বীপের ১০ হাজার মানুষ ১০-১২ বছর ধরে ঘরবাড়ি সংস্কার করতে পারছেন না। অথচ সরকারি আইন লঙ্ঘন করে দ্বীপে বহুতল ভবন নির্মাণ চলছেই। দ্বীপে কোনো ইটভাটা নেই, নেই রড-সিমেন্ট বিক্রির দোকানও। এর মধ্যেও কারা ভবন তৈরি করছেন, কেন করছেন—খোঁজ নিলেই জানা যাবে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, পুলিশ এসব দেখেও ব্যবস্থা নেয় না। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সেন্ট মার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, প্রায়ই সৈকত এলাকা থেকে পাথর ও বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু গিয়ে কাউকে পাওয়া যায় না। সুত্র: প্রথম আলো

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...