প্রকাশিত: ০৫/১২/২০২১ ৯:৪৪ এএম

মনুষ্যঘটিত বেশ কয়েকটি প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি পরিবেশগত এক ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হয়েছে। অবিলম্বে এ দ্বীপে পরিবেশ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপটি সাগরগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। আজ শনিবার কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বুরি) বিজ্ঞানীদের ২০২০-২১ অর্থবছরে সম্পাদিত গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের ওপর আয়োজিত এক সেমিনারে বিজ্ঞানীরা এ আশংকা প্রকাশ করেন।

সেমিনারে বিজ্ঞানীরা বলেন, সমৃদ্ধ ‘জীববৈচিত্র্যের আঁধার’ হিসেবে বিবেচিত দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রবালগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। গত চার দশকে এ দ্বীপ উপকূল থেকে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার টন প্রবাল ও পাথর। এরফলে ক্ষয়ের শিকার হয়ে উপকূলের বিস্তীর্ণ ভূমি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, বিশেষ করে দ্বীপের উত্তর উপকূলে সৃষ্টি হয়েছে ভাঙনের।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন যথাক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) অধ্যাপক ড. মো. কাউসার আহাম্মদ।

প্রধান অতিথি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশ ও পর্যটনের উন্নয়নের মাধ্যমেই সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে। যদি আমাদের প্রাকৃতিক রিসোর্স বা সম্পদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে উন্নয়ন কখনও টেকসই হবে না। তাই প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে সরকার বদ্ধ পরিকর।

সেমিনারে ‘প্রবাল ও সেন্টসার্টিন দ্বীপ’ শীর্ষক মূল গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর (অতিরিক্ত সচিব)।

সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, সমৃদ্ধ ‘জীববৈচিত্র্যের আঁধার’ হিসেবে বিবেচিত দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপটির প্রবালগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিদর্শনকালে বিস্তীর্ণ এলাকায় মৃত প্রবাল পাথর দেখা গেছে। গত চার দশকে এ দ্বীপ উপকূল থেকে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার টন প্রবাল ও পাথর। এর ফলে ক্ষয়ের শিকার হয়ে উপকূলের বিস্তীর্ণ ভূমি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, বিশেষ করে দ্বীপের উত্তর উপকূলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর নব্বই দশকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে তার গবেষণা ও বর্তমান গবেষণার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলেন, মনুষ্যঘটিত বেশ কয়েকটি প্রভাবে দ্বীপটি যেভাবে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে এবং অবিলম্বে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া না হলে অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপটি সাগরগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য বুরির বিজ্ঞানীরা কয়েকটি প্রজাতি চিহ্নিত করেছেন এবং যার মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে কৃত্রিম উপায়ে কোরাল রিফ গড়ে তোলার কৌশলও অর্জন করেছেন বলে জানান মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি দ্বীপে পরিবেশগত বিপর্যয়ের জন্য প্রবাল মরে যাওয়া, আহরণের কারণে উপকূল থেকে প্রবাল ও পাথর হারিয়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। তিনি অপরিকল্পিতভাবে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা, প্লাস্টিক ও অন্যান্য দূষণ, ক্ষতিকর পদ্ধতিতে মাছ ধরা, অতিরিক্ত মাছ ধরা ও বড় বড় জাহাজ চলাচলসহ মনুষ্যঘটিত অন্যান্য কারণেই এ দ্বীপের প্রবালগুলোর রোগাক্রান্ত হওয়া ও মরে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন।

সেমিনারে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ অর্থবছরের গবেষণা ফলাফলসহ মোট সাতটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে থাকা বিরল খনিজ সম্পদের ভূতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভূতাত্ত্বিক ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, সেমিনারে সেন্টমার্টিনের কোরালের উপর দূষণের কারণে সৃষ্ট রাসায়নিক প্রভাব তুলে ধরেন কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাইদ মোহাম্মদ শরিফ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, সেমিনারে বঙ্গোপসাগরের রূপতত্ত্ব ও পরিবর্তন তুলে ধরেন ফিজিক্যাল ও স্পেস ওশানোগ্রাফি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রূপক লোধ ও শাহীনুর রহমান, সাগরের পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে গবেষণাপত্র তুলে ধরেন এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি ও ক্লাইমেট বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মীর কাশেম ও সুলতান আল নাহিয়ান।

সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক গবেষক উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাকাল্টি অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ ডিন প্রফেসর ড. মো. রাশেদ-উন-নবী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব আর্থ অ্যান্ড ওশান সায়েন্সের (এফইওএস) ডিন কমডোর এস জসীম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিজ্ঞানী।

সেমিনারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও মিডিয়াকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...