
মায়ের কোল সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু পৃথিবীর আলো দেখেই সড়ক দুর্ঘটনায় সেই আশ্রয় চিরতরে হারালো একদিন বয়সী এক ফুট ফুটে কন্যাশিশু। শনিবার (২১ জুন) দুপুরে বরগুনার আমতলীতে বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুটির মাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত নবজাতক শিশুটি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ক্যানুতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে মোছাদ্দিকা (৩০) এবং মাওলানা জাহিদুল ইসলামের (৩৫) ঘরে নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে কন্যা শিশু। শনিবার দুপুরে নবজাতকের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্থানীয় আব্দুল ওহাব মিয়ার (৫৫) অটোরিকশায় করে পটুয়াখালী আসছিলেন জাহিদুল-মোছাদ্দিকা দম্পতি। সাথে ছিলেন মোছাদ্দিকার বাবা মাওলানা মো. আজিজ (৭০), দাদি শাশুড়ি মোসা খালেদা বেগম (৫৫) ও ফুফা শ্বশুর মাওলানা মো. কুদ্দুস (৬০)।
গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের বলোইবুনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে রওনা করে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের আমতলী উপজেলা কেওয়াবুনিয়া নামক এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা কুয়াকাটাগামী একটি বাসের সঙ্গে তাদের অটোরিকশাটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে সড়কের পাশে পড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই মোছাদ্দিকার বাবা মাওলানা মো. আজিজ (৭০), দাদি শাশুড়ি মোসা খালেদা বেগম (৫৫) নিহত হন।
মোছাদ্দিকা ও তার এক দিনের নবজাতক শিশু, ফুফা শ্বশুর মাওলানা মো. কুদ্দুস এবং অটোরিকশা চালক আব্দুল ওহাব মিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আনার সময় মোছাদ্দিকা মৃত্যুবরণ করেন। বাকি তিনজন পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
মোছাদ্দিকার স্বামী মাওলানা জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার সব শেষ! গতকালই আমার বাচ্চাটা দুনিয়ার মুখ দেখছে, আর আজকেই মাকে হারাইছে। ও কেমনে বাচবে? আর আমিও এই ধাক্কা কেমনে সহ্য করব?’
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. মো. ওয়াহিদ শামিম বলেন, শিশুটির অবস্থাআশঙ্কাজনক তার মাথা, মুখ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। এছাড়াও শিশুটি দীর্ঘক্ষণ পানির মধ্যে থাকায় ঠান্ডাজনিত রোগ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আমরা তার চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিবিড় পরিচর্যায় রেখেছি। সকলের কাছে বাচ্চাটির জন্য দোয়া চাচ্ছি যেন আল্লাহ তাকে সুস্থতা দান করেন।
পাঠকের মতামত