

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের উত্তর জনাব আলী পাড়ায় বর্ষাকাল মানেই দুঃসহ অপেক্ষার সময়। খালের পানি বাড়লেই অচল হয়ে পড়ে গ্রামের প্রধান যোগাযোগপথ। কখন পানি নামবে—জানতে না জানতেই কেটে যায় ঘন্টা, কখনও দিন। এমনকি কেউ মারা গেলেও মরদেহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় পানি কমার জন্য। মাত্র একটি স্থায়ী সেতুর অভাবে বছরের পর বছর এই মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর উদ্যোগে জোড়াতালি দিয়ে নির্মিত পাটাতনের সেতুই এখন তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেই সেতুও এতটাই নড়বড়ে যে প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে লুকিয়ে থাকে মৃত্যুভয়। ধুরুমখালী উত্তর জনাব আলী পাড়ার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই পথেই চলাফেরা করে আসছেন। একসময় কাঠের সাঁকো ছিলো যাতায়াতের একমাত্র উপায়। সেটি ভেঙে গেলে তৈরি হয় বর্তমান পাটাতনের সাঁকো—যা এখন প্রায় অকার্যকর।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাফর আলম ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন,“দেশ এগোচ্ছে, রাস্তাঘাট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের গ্রামে সেই উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। শত শত মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এই পাটাতনের ওপর দিয়ে চলাফেরা করছে।”
বর্ষায় খাল উপচে পড়লেই সাঁকো বন্ধ। তখন অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নেওয়া তো দূরের কথা—মরদেহও পারাপার করা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে দাফনের জন্যও অপেক্ষা করতে হয় পানি কমা পর্যন্ত। স্থানীয়দের ভাষায়—এ এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণা।
স্কুলগামী শিশুদের দুর্ভোগ আরও ভয়াবহ। ভেজা পাটাতনে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা এখন নিত্যদিনের। এক শিশুর অভিভাবক বলেন,“আমার বাচ্চা একদিন স্লিপ করে পড়ে গিয়েছিল। ভয় পেয়েও প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয় স্কুল-কলেজে।”
স্থানীয় যুবক সাইফুল ইসলাম রোহান দীর্ঘদিনের কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন,
“একটা স্থায়ী সেতুর জন্য আমরা কতকিছু সহ্য করছি। সেতু হলে আমাদের চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা—সবই বদলে যাবে।”
উত্তর জনাব আলী পাড়ার মানুষের একটাই দাবি—একটি স্থায়ী ও নিরাপদ সেতু।
এই সেতু কেবল যাতায়াত নয়, বরং মানুষের জীবনরক্ষা, মর্যাদা ও নিত্যদিনের বেঁচে থাকার নিশ্চিত পথ। যখন দেশের সর্বত্র উন্নয়নের ঢেউ পৌঁছে গেছে, তখন এখানকার মানুষও সেই ঢেউয়ের সামান্য স্পর্শ পেতে চায়—চায় একটি ভরসার সেতু।

পাঠকের মতামত