প্রকাশিত: ২০/০৮/২০১৮ ৬:৩৬ পিএম

ডেস্ক নিউজ – বলা হয়ে থাকে বিশ্বের যেকোনো বিপর্যয় অথবা সংকট সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বারও উন্মুক্ত করে। যে কারণে দেখা যায় প্রলয়ঙ্করী কোনো যুদ্ধের মধ্যেও কেউ কেউ রাতারাতি অঢেল অর্থবিত্তের মালিক বনে যান। অথবা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হয় নতুন এক সমাজব্যবস্থা।

উদাহরণস্বরূপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমা আঘাতের পর শোচনীয়ভাবে পরাজিত জাপান যুদ্ধ-পরবর্তী সময় কঠোর পরিশ্রমী এক জাতিতে পরিণত হয়। আজকের বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এক দেশের নাম জাপান। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত ১০ লাখ রোহিঙ্গা নিঃসন্দেহে

দেশটির জন্য বিশাল এক সংকটের নাম। প্রশ্ন এসে যায়, এই সংকটও কি সঙ্গে করে কোনো সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে?

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই এক বছর আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও রাখাইন দুর্বৃত্তদের আক্রমণের মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে কিছু ক্যাম্পে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প এলাকা স্থানীয় পাহাড়, বনাঞ্চল ছাড়িয়ে চাষের জমিতেও বিস্তৃতি লাভ করছে।

এই বিশাল জনগোষ্ঠী ওই এলাকায় নতুন ও গতিশীল এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছে। নতুন এ অর্থনীতির পেছনে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ। এ বাজারে লাখ লাখ লোকের খাবার, আশ্রয় ও কাজ প্রয়োজন। কিছুটা সচ্ছলদের আরো প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য।

মজার বিষয় হচ্ছে, নতুন এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মূল ক্রীড়নকের ভূমিকায় বাংলাদেশীদের পাশাপাশি আছে দুই প্রবল প্রতিপক্ষ রোহিঙ্গা ও রাখাইনরা। বাণিজ্যের মাঠে এসে তারা নিজেদের মধ্যকার চিরশত্রুতার কথা বেমালুম ভুলে যায়।

গত বছরের আগস্টে রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দেয়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে বড় দেশান্তরির ঘটনায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ওই মর্মান্তিক ঘটনাও তাদের মধ্যকার বাণিজ্যে কোনো রকম ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারেনি।

মিয়ানমারের বৌদ্ধ মিন মিন আরো অনেক রাখাইনের মতো বাংলাদেশে চাল, আদা, নুডলস, বাদামসহ আরো কিছু উপকরণ সরবরাহের ব্যবসা করেন। তার সরবরাহ করা পণ্যের

অনেক কিছুই কক্সবাজারের উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের ছোট্ট ঝুপড়ি দোকানগুলোতে পাওয়া যায়। এমনকি টেকনাফ পোর্টে নোঙর করা মিন মিনের ‘মেইড ইন মিয়ানমার’ লেখা কার্গো থেকে বস্তাভর্তি মালামাল মাথায় করে নামানোর কাজে নিয়োজিত থাকে মুসলমান রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা। রোহিঙ্গা সংকট মিন মিন ও তার মতো আরো অনেকের জন্য এক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

মিন মিনের রাখাইন বন্ধু থাওইন লাইনও একজন ব্যবসায়ী। তিনি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে মিয়ানমার থেকে নানা ধরনের পণ্য আমদানি করে থাকেন। থাওইন লাইনও মনে করেন রোহিঙ্গাদের দেশান্তরি হওয়ার ঘটনা ব্যবসায়ের জন্য ভালো।

তার মতে, রোহিঙ্গারা দিন-রাত খাটতে পারে, আবার তাদের মজুরিও বেশি না; রোহিঙ্গারা একদিকে ভোক্তা আর অন্যদিকে সস্তা শ্রম দিয়ে ব্যবসায়ে অনুকূল ভূমিকা রাখছে।

কক্সবাজারে সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির কুতুপালং ক্যাম্পে ব্যবসা করেন বাংলাদেশী কামাল হোসেন। তিনি মূলত অর্থের বিনিময়ে ফোন চার্জ করার সেবা ও সস্তা মোবাইল ফোন সেট বিক্রি করেন। কামাল সব সময় বৃষ্টি হোক, এমন প্রত্যাশা করেন।

বৃষ্টি হলে ক্যাম্পের সোলার প্যানেলগুলো কাজ করে না, ফলে তার চার্জ বিক্রির ব্যবসা ভালো হয়। চার্জ সেবার ব্যবসা নিয়ে হতাশ হলেও মোবাইল সেট বিক্রি নিয়ে কামাল সন্তুষ্ট। গত আগস্টে যখন এ সংকটের শুরু তখন সপ্তাহে যেখানে পাঁচ-ছয়টি সেট বিক্রি হতো, সেখানে বর্তমানে সপ্তাহে প্রায় ৩০০ সেট বিক্রি হচ্ছে।

কামালের দোকানের আশপাশে গহনা মেরামত ও বন্ধক রাখা, কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকান রয়েছে। এমনকি এক দোকানে রয়েছে অর্থের বিনিময়ে টিভিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ সরাসরি দেখার সুযোগ। যার জন্য গুনতে হয় ম্যাচপ্রতি ৩০ মার্কিন সেন্ট।

এসবের বাইরে ওই এলাকায় কাজ করা অমুনাফাভোগী বা এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় বাঁশ, ত্রিপল, কংক্রিট, পাত্র, কড়াই ও কম্বলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। একই সঙ্গে তারা স্থানীয় হাজারো রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করছে।

গত জুনে রোহিঙ্গা সংকট অর্থনীতিতে যোগ দেয় বিশ্বব্যাংক। তারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্যানিটেশন খাতে অর্ধবিলিয়ন ডলার সহায়তা মঞ্জুর করে।

পাঠকের মতামত