প্রকাশিত: ০৯/০৪/২০১৮ ৮:৫৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:২৫ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট::

রোহিঙ্গা সংকট গুরুতর নিরাপত্তাসংকট হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছে ভারত। এ কারণে দেশটি রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান চায়।

সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিজয় কেশব গোখলে গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে নাগরিকসমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এমন বার্তা দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সই করা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের কাজ দেখতে চায় ভারত। তবে বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতির আভাস দেননি ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব। এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতিও নেই। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে গতকাল বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে জেট এয়ারওয়েজের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। এরপর সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় সোনারগাঁও হোটেলে নাগরিকসমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেন। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জমির, সংসদ সদস্য মাহযাবীন খালেদ, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সমশের মবিন চৌধুরী, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিভিন্ন বাংলাদেশি প্রতিনিধির বক্তব্য শুনেছেন।

বৈঠকে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে চীনের সম্পৃক্ততার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
ঢাকা-দিল্লি ৭ এমওইউ বিবেচনায় : এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই পররাষ্ট্রসচিব আজ সোমবার ঢাকায় বৈঠকে বসছেন। পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক ও ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলের নেতৃত্বে এই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের পাশাপাশি এর আগে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা হবে বলে জানা গেছে।

ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠক শেষে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে সাতটি এমওইউ সই করা দুই দেশের বিবেচনায় আছে।

গত ২৯ জানুয়ারি পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিজয় গোখলের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশ অগ্রগতি দেখতে আগ্রহী। আজকের বৈঠকে ভারতকে এ ব্যাপারে আরো কাজ করার অনুরোধ জানাতে পারে বাংলাদেশ। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় আসবে। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ঘিরে বাংলাদেশের ওপর বিশাল চাপ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় এর প্রভাব বিষয়ে আলোচনা হবে।

ঢাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের যতটা জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করেছিল ততটা পায়নি। এর পরও ভারতের অবস্থান আগের চেয়ে বদলেছে। ভারত আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অবকাঠামো তৈরিতে সহযোগিতা দিচ্ছে। বাংলাদেশও এটি চায়। ’

ওই কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত আরো কী ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটে শুধু ভারতের মানবিক সহায়তাই নয়, জোরালো রাজনৈতিক ভূমিকাও চায় বাংলাদেশ।

চীন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত বিজয় গোখলের এ সফরে বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকেও দৃষ্টি থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। ভারত চীনের ‘এক বলয়, এক পথ’ পরিকল্পনায় যোগ না দিলেও বাংলাদেশ দিয়েছে। চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের ডুবোজাহাজ কেনা ভারতীয় গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ বিভিন্ন ফোরামে ভারতকে বলেছে, এ দেশে চীনের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ ও স্ট্র্যাটেজিক উপস্থিতিকে উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দেখা ঠিক নয়। কারণ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক, চীন কখনো তার বিকল্প হতে পারবে না।

এ মাসের মাঝামাঝি লন্ডনে কমনওয়েলথ সরকারপ্রধান পর্যায়ের সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য বৈঠক এবং বাংলাদেশে এ বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজয় গোখলের ঢাকা সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা।

গত বছরের ৮ এপ্রিল নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের প্রায় এক বছর পর লন্ডনে আবার তাঁরা বৈঠকে বসছেন। ওই বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আজ বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিবরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও এমওইউ সই শেষে গণমাধ্যমের সামনে বিবৃতি দেবেন। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আজ দুপুর ২টায় সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কবিষয়ক একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন। সফর শেষে তিনি আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ ছাড়বেন।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আশা বাংলাদেশ-গাম্বিয়ার

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া। ...

কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ...

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ায় হবে উন্মুক্ত কারাগার, শিগগির নির্মাণ শুরু

উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ...