ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১০/০৬/২০২৩ ১১:৫০ এএম

মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ধনী দাতা দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ মিলছে না। তহবিল সংকটের কারণে চলতি মাস থেকে মাসিক খাদ্যসহায়তা জনপ্রতি ১০ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলার করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। জাতিসংঘের এই সংস্থা বলেছে, খাদ্যসহায়তার এ ঘাটতি বাংলাদেশকেই পূরণ করতে হবে। এতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ। ডব্লিউএফপিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রোহিঙ্গাদের লালন-পালনের দায়িত্ব বিশ্ব সম্প্রদায়ের, বাংলাদেশের নয়। কোনোভাবেই খাদ্যসহায়তার পরিমাণ কমানো যাবে না, বরং বাড়াতে হবে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা কমানোর ফলে আশ্রয়শিবিরগুলোতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র চোরাচালান এবং অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়বে। খাবারের অভাবে ক্যাম্পে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. কামরুল হাসান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্যসহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। ঘাটতি সহায়তা বাংলাদেশকে পূরণ করতে বলা হয়েছে। আমরা তাতে সম্মতি দিইনি। তাদের চিঠি দিয়ে বলেছি, রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব সম্প্রদায়ের। খাদ্যসহায়তা কমানো নয় বরং বাড়ানো উচিত।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ করতে আগামীকাল বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে বসছেন সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের’ সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমবিষয়ক এই সভা হবে। উপস্থিত থাকবেন জননিরাপত্তা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদেরও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে তাদের জন্য খাদ্য, পুষ্টিসহ অন্যান্য অতি জরুরি সহায়তা দিয়ে আসছে ডব্লিউএফপি। দাতাগোষ্ঠী ও অংশীদার সংস্থাগুলোর সহায়তায় এই জরুরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা থাকলেও বাস্তবে এ সংখ্যা ১১ লাখের ওপরে। সবাইকে ভাউচারের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১২ মার্কিন ডলার সমমূল্যের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই ভাউচার ব্যবহার করে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো সব ক্যাম্পে অবস্থিত ডব্লিউএফপির আউটলেট থেকে খাবার বেছে নিতে পারে। কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তহবিল ঘাটতির কারণে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে জাতিসংঘ।

ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ডব্লিউএফপি খাদ্যসহায়তা কাটছাঁট করছে। একইভাবে গত মার্চে ডব্লিউএফপির ১২ ডলারের খাদ্যসহায়তার পরিমাণ কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়। রোহিঙ্গা সংকটের প্রায় ৬ বছর পর প্রথমবার কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে আনে সংস্থাটি। মাত্র তিন মাসের মাথায় একই কারণে আবারও ১ জুন থেকে ১০ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলার করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের দৈনিক রেশনের ৩৩ শতাংশ কমবে। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের প্রত্যেককে মাত্র ৮ ডলার (৮৪০ টাকা) সমমূল্যের ফুড ভাউচার দেওয়া হবে প্রতি মাসে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাপান সফরকালে এনএইচকে টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘জ্বালানি ও খাদ্যের খরচ বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।’

তহবিল সংকটের কারণে জাতিসংঘ গত মার্চে রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা ১৭ শতাংশ কমিয়েছে। মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ গত ২৮ এপ্রিল সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘তহবিল না পেলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে আরও ২০ শতাংশ খাদ্যসহায়তা কমাতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারে নিয়োজিত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এতে তীব্র পুষ্টিহীনতায় পড়বে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা জন্ম নেবে। তাদের বেপরোয়া আচরণ বাড়বে। মারামারি, খুনোখুনিসহ অসন্তোষ ও অরাজকতা বাড়বে। ক্যাম্পে মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসার পাশাপাশি অসামাজিক কার্যকলাপ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এতে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হবে। সুত্র:আজকের পত্রিকা

পাঠকের মতামত

কুতুপালং পশ্চিমপাড়ায় পরিচয় যাচাইহীন রোহিঙ্গা ভাড়া, বাড়ছে শঙ্কা

মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি ও সেনা জান্তার সংঘর্ষে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ইউনাইটেড নেশন টিম

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ইউনাইটেড নেশন ফোরাম বাংলাদেশ স্টাডি প্রোগ্রাম (BSP) এর ...

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ধর্ম ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ

কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো “বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ...