প্রকাশিত: ২৭/০৮/২০১৮ ৮:০২ এএম

মানিক মুনতাসির::
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এ খাতে বৈদেশিক সহায়তা কমে আসায় জাতীয় বাজেট থেকে খরচ করতে সরকার বাধ্য হচ্ছে।

ইতিমধ্যে অতিরিক্ত ৭০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বাজেট থেকে। অর্থবিভাগের একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চলতি বছরের প্রথমদিকে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইউএসএইড, ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা পেলেও বর্তমানে তা কমে এসেছে আশঙ্কাজনক হারে। গত দুই মাসে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ছাড়া অন্য কোনো সংস্থা উল্লেখযোগ্য কোনো আর্থিক সহায়তা দেয়নি। ফলে এ বছরের শুরুতে বিভিন্ন সংস্থা খাদ্যসহ যেসব সহায়তা পাঠিয়েছিল সেগুলো দিয়ে ১০ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্য, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। বর্তমানে কেবল বিভিন্ন খাদ্যপণ্যই ত্রাণ হিসেবে দিচ্ছে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা। কক্সবাজার এলাকার প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বনভূমি উজাড় করেছে রোহিঙ্গারা, যা দিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া গাছপালা কেটে তারা ঘরবাড়ি তৈরিও করছে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে উখিয়াসহ আশপাশে এলাকার প্রাকৃতিক পরেবেশের ওপর।

খবর। বিডি প্রতিদিনের
মাসে দুইবার ত্রাণ পেলেও তা সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা, যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারে। এ ছাড়া ক্যাম্পের ভিতরে ও ক্যাম্প এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান (দোকান পাট) গড়ে তুলেছেন তারা। জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ কাজ-কর্ম করার কথা নয়। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। এজন্য নারী রোহিঙ্গাদের সেলাই ও বিউটি পারলার চালানোয় দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (এনজিও) সমন্বিত ফোরামের সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ৪৩ শতাংশ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি প্রচণ্ড চাপে পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতি। বেহাত হচ্ছে কৃষি জমিও। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, কক্সবাজারের শিক্ষা খাতে স্থানীয়রা ২৬ শতাংশ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবায় ৩২ শতাংশ, কৃষি খাতের ক্ষতি ৭৮ শতাংশ স্থানীয় মানুষ। পরিবেশগত ক্ষতির শিকার কক্সবাজারের ৬১ শতাংশ বাসিন্দা। আইনশৃঙ্খলাজনিত ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় ৪৭ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠী। গত এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। এর ভারও বহন করতে হচ্ছে সরকারকে। রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবর্তন করতে না পারলে এই ক্ষতির মাত্রা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদন মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পবাসীর জন্য দোকান-পাট প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে ক্যাম্পের পাশে সামাজিক বনায়নের গাছপালা কেটে সারি সারি দোকানঘর তুলে স্থানীয় সুবিধাভোগী একটি চক্র। সেসব দোকানঘর রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দামে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কোনো বিকল্প নেই। তার ওই চিঠি পরে ইউএনএইচসিআরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বছরের পর বছর আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা খাতের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যয় ও অন্যান্য চাপ সরকারের অন্য খাতে চাপ সৃষ্টি করছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে বিষয়টি ইতিমধ্যে একাধিকবার অবহিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারসহ ওই অঞ্চলের পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমাধান করতে হবে কূটনৈতিকভাবে। এ ব্যাপারে কোনোভাবেই শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই। আর এত বেশি সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ধারণ করার মতো সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। ফলে তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো অত্যন্ত জরুরি।

পাঠকের মতামত