প্রকাশিত: ০৪/০৮/২০১৭ ৬:৩০ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:৪২ পিএম

শফিক আজাদ, উখিয়া নিউজ ডটকম::
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প ও বস্তি পরিদর্শন করেছেন বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের জোট ‘ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা’র (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন। তিনি শুক্রবার দুুপুর সাড়ে ১২দিকে গাড়ী যুগে রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে উপস্থিত হয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতে মিলিত হন। এরপর তিনি আন-রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের ডি-ব্লকে একটি রোহিঙ্গা ঝুপড়িতে ঢুকে সেখানে অবস্থানকারী নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী মিয়ানমারের মংডু এলাকার নারীরবিল গ্রামের নজির আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম(২৫) একই থানার ছালিপাড়া গ্রামের শাহীনের স্ত্রী শফি নুর (২৬) এবং একই এলাকার আব্দুর রহিমের স্ত্রী মিসফালা (২২) সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে তাদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন,নিপিড়ন ও অত্যাচারের কাহিনী শোনেন। পরে ওআইসি মহাসচিব ডি-ব্লকের আইওএমের একটি স্কুলে পূর্বে থেকে অপেক্ষমান নির্যাতিত ৩০জন নারী-পুরুষের সাথে একান্ত আলাপ করেন। মিয়ানমারে মংডু থানার হাতগইজ্জাপাড়া গ্রামের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা গৃহবধু জামালিকা (২২) মহাসচিবকে বলেন, মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা তার স্বামী খাইরুল আমিন (৩০) দোকান থেকে বের করে রাতের আধারে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাঁকেও পাশর্^বর্তী জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষন করে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা। নির্যাতনের পা হারানো মংডু থানার গুয়াছি গ্রামের মোঃ জাকারিয়া (৩০) বলেন, সেনা বাহিনীর সদস্যরা তাঁর বসতবাড়ীতে আগুন নিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়। তাঁকে ধরে নিয়ে গুলি করলে ডান পা চির দিনের জন্য হারিয়ে যায়। তাঁদের এসব নির্যাতনের বর্ণনা মনযোগ দিয়ে শোনেন ওআইসি’র মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন।

দেড় ঘন্টা ব্যাপী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তি এলাকা ঘুরে কুতুপালং ক্যাম্পের অভ্যান্তরে খেলার মাঠে ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ১৯৯১সাল থেকে বাংলাদেশ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া সরকারকে সাধুবাদ জানান। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নাগরিকত্ব সহ তাঁদের সহায় সম্পত্তি ফেরত দিয়ে স্ব দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা হবে। রোহিঙ্গাদের মূখ থেকে শোনা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নানান নির্যাতনের বর্ণনার কথা বর্হিবিশে^ জানান দেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের আশ^স্থ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের এ দেশীয় আইনকানুন মেনে চলার অনুরোধ জানান। পরিশেষে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে চরম নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়া করা হবে জানান ওআইসির মহাসচিব। এসময় তিনি রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের সহ-সভাপতি সিরাজ মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আমিনসহ একাধিক রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা বলেন।

এসময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওআইসি মহাসচিবের সাথে ছিলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সচিব বাকি বিল্লাহ, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, ৩৪বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান, কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মার্মা, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন, সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুরুদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের সহ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও বিভিন্ন এনজিও’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ওআইসি’র মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমাদ আল-অথাইমিন বুধবার (২ আগস্ট) চারদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। নভেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। ঢাকায় তিনি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য এবং তাদের সঙ্গে ওআইসি’র একাত্বতা প্রকাশের জন্য তিনি উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ও বস্তি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

পাঠকের মতামত

কঠোর নির্দেশনার পরও মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা ছাড়ছে না ভোটের মাঠ

সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিতে কঠোর নির্দেশনা ...