প্রকাশিত: ২২/০৩/২০১৯ ৮:১৬ এএম

শফিক আজাদ,উখিয়া ::
কক্সবাজার-টেকনাফ টিভি রিলে কেন্দ্রের পশ্চিমে এবং কুতুপালং রোহিঙ্গা মেগা ক্যাম্পের-২ থেকে দক্ষিণে ৭নং ক্যাম্পে মধ্যখানে অবস্থিত স্থানটির রোহিঙ্গারা নাম দিয়েছে নৌকার মাঠ। কেউ কেউ এটি নাম দিয়েছে জানাজার মাঠ। কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝ খানে আর কোথাও এ ধরনের খালি মাঠ নেই, তাই কোন রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ,শিশু মারা গেলে ওখানেই জানাজা পড়াতে হয়। আর দুই দিকে উচু পাহাড় মাঝখানে সমতল দেখতে নৌকার মত, তাই সবাই চেনে নৌকার মাঠ হিসেবে। সরাসরি গাড়ী যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা না থাকায় নৌকার মাঠ এলাকায় সন্ত্রাসীরা গড়ে তুলে তাদের নিরাপদ আস্তানা। এছাড়াও নৌকার মাঠ সংলগ্ন এলাকায় শতাধিক দোকান বসিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছে একটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ। গ্রুপটি নেতৃত্বে রয়েছে রোহিঙ্গা আল ইয়াকিন নেতা মোঃ ইউনূছ। তার শতাধিক যুবক বাহিনী দিয়ে অনেকটা এই ক্যাম্প এলাকাটি নিয়ন্ত্রন করে আসছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক রোহিঙ্গা নাগরিক।
সরজমিন বৃহস্পতিবার উক্ত নৌকার মাঠ এলাকাটি ঘুরে বিভিন্ন রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি নৌকার মাঠের আধিপাত্যকে বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক (এরপর পৃষ্ঠা-২ ঃ কলাম- ১)
মুখোমুখি অবস্থানে
সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জ ও পুলিশের উপর হামলা চালায় রোহিঙ্গারা। আত্বরক্ষার্থে পুলিশ ৭/৮ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে। পরবর্তীতে আইনশৃংখলাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ১৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক করতে সক্ষম হয়। মূল সন্ত্রাসীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় এখনো বিরাজ করছে ক্যাম্পে উত্তেজনা। যেকোন সময় বড় ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সেখানে অবস্থিত রোহিঙ্গারা।
নৌকার মাঠে অবস্থিত এক দোকানের মালিক ও রোহিঙ্গা নাগরিক জানায়, নৌকার মাঠ সহ ক্যাম্প-৭ এর একটি বিশাল এলাকা দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল আল ইয়াকিন গ্রুপের নেতা মোঃ ইউনূছ। সেখানে কয়েক’শ দোকান-পাঠ রয়েছে। দোকান গুলো থেকে তারা নিয়মিত চাঁদা উত্তোলন করে থাকত। আবার রাতের বেলায় সেখানে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ভাবে সশস্ত্র প্রশিক্ষন দেওয়া হত। তিন মাস আগে ইউনুছ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার সুযোগে নৌকার মাঠ এলাকা দখল দেয় আরেক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা নামের লীডার মার্স প্রকাশ শাকের নাম ধারী এক দূধর্ষ সন্ত্রাসী। গত এক মাস পূর্বে ইউনুছ জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নৌকার মাঠ পুনুরুদ্ধারে চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে ইতি পূর্বে উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে আল ইয়াকিনের লীডার ইউনুছ গ্রুপ নৌকার মাঠটি দখলে নিতে গেলে আরসার নেতা মার্স প্রকাশ শাকের ও কেফায়াত উল্লাহ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিয়ানমারের ফকিরা বাজার ও নৌকার মাঠ এলাকায় আশ্রিত এক রোহিঙ্গা নাগরিক জানান, বর্তমান সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যে মানবতার পরিচয় দিয়েছে তা বিশে^র কোন দেশ পারেনি। তাই বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমরা (রোহিঙ্গারা) আজীবন কৃতজ্ঞ এবং ঋণী। কিন্তু কিছু কিছু রোহিঙ্গা নামধারী সন্ত্রাসীরা বিশে^র কাছে রোহিঙ্গাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য মিয়ানমারের দালাল হয়ে কাজ করছে। যেমন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘঠিত বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনার উদাহারণ দেন সে। সে আরো বলেন, মিয়ানমারেও এ ধরনের একটি গ্রুপ ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার সেনা চৌকিতে হামলা চালিয়ে রাখাইনের অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদেরকে দেশ ছাড়া করেছে।
কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, এখন নৌকার মাঠ এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা কোন ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে শক্ত হাতে দমন করা হবে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, নৌকার মাঠ এলাকার সার্বিক পরিস্তিতি বিভিন্ন ভাবে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...

ইসলামপুরে আটক রোহিঙ্গা যুবককে কুতুপালং ক্যাম্পে হস্তান্তর

জামালপুরের ইসলামপুরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার মো. রোবেল (২২) নামের সেই রোহিঙ্গা যুবককে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের ট্রানজিট ...