প্রকাশিত: ২২/০৫/২০১৬ ১১:২০ পিএম
ফাইল ছবি

manob নিউজ ডেস্ক::

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায় কিংবা সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রশ্নে সু চির অবস্থান কারও অজানা নেই এখন।  রোহিঙ্গাদের প্রশ্নেও সু চি বরাবরই নীরব ছিলেন। তবে এরইমধ্যে ফাঁস হয়ে গেছে, ভোটের রাজনীতিতে সাফল্য পেতে মুসলিমদের প্রার্থী করেননি তিনি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি মুসলমানদের নিয়ে তার এক বিতর্কিত মন্তব্যও ফাঁস হয়েছে। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিও মানতে চান না সু চি। মানতে চান না একটা জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়।

সেই ধারাবাহিকতাতেই এবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে আলাপে সু চি পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গা শব্দটি নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, এই শব্দ ব্যবহারে তার আপত্তি রয়েছে।  সু চির অবস্থান অনুযায়ী, রোহিঙ্গা বলে যেন কিছু নেই, থাকতে পারে না। ওই সম্প্রদায়ের মানবাধিকার ও জীবনমানের প্রশ্নে তাই কেরির চাপের মুখে তিনি কেবল সময় আর সুযোগ চেয়েছেন। দুনিয়ার ভাগ্যহারা জনগোষ্ঠীর অন্যতম এই রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিয়ে কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি কথিত এই গণতন্ত্রপন্থী।

রবিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা উঠে আসে। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভিয়েতনাম সফর। এর আগে সংক্ষিপ্ত সফরে মিয়ানমারে এসেছেন জন কেরি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার প্রশ্নে সু চিকে চাপ দিয়েছেন সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।  চাপের মুখে ‘পর্যাপ্ত সুযোগ’ চান বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আং সান সু চি। রোহিঙ্গা শব্দটির দিকে ইঙ্গিত করে  সু চি বলেন, ‘আবেগকে উসকে দেয়, এমন শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে সমস্যার শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য সমাধান কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা শুধু চাই মানুষ বুঝতে চেষ্টা করুক আমরা যে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি। আমরা চাই সমস্যা সমাধানে আমাদের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হোক।’

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য সু চিকে দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।  চলতি মাসে মিয়ানমারের মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানদের রোহিঙ্গা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এরপর মিয়ানমার যুক্তরাষ্ট্রকে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার আহ্বান জানায়।

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সু চি আরও বলেন, ‘আমরা এমন কোনও শব্দ ব্যবহার করতে চাই না যা আগুনে জ্বালানি সরবরাহ করে। আমি কোনও নির্দিষ্ট শব্দের কথা বলতে চাচ্ছি না। আমি সেই সব শব্দের ব্যবহারের কথা বলছি যেগুলো রাখাইনসহ অন্যান্য অঞ্চলে বিভেদ সৃষ্টি করে।’

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে কেরি জানান, সু চি’র সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বিষয়টিকে বেশ ‘স্পর্শকাতর’ ও ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেন। কেরি বলেন, ‘আমি জানি বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে মূল বিষয় হলো, সমস্যাটির সমাধান করা।  এ জন্য পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। মিয়ানমারজুড়ে রাখাইনদের উন্নয়ন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সবার জীবনের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা গুরুত্বপূর্ণ।’

মিয়ানমারের নতুন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন কেরি। তবে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, সামরিক শাসন থেকে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আসতে আরও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হবে মিয়ানমারকে। মিয়ানমারের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশটির পদার্পণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও উল্লেখ করেন কেরি। তিনি জানান, বর্তমান সংবিধান বহাল থাকলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না। কারণ এ সংবিধানের কারণে  সু চি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারছেন না।

 

২০১২ সালে দেশটির রাখাইন প্রদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলমানদের দাঙ্গার পর প্রায় সোয়া লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দারিদ্র্য ও নিপীড়নে দেশ ছেড়েছেন আরও বহু রোহিঙ্গা।

উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবরে মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের আগে সু চির দলে মুসলিম প্রার্থী না থাকা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইচ্ছে করেই মুসলিমদের প্রার্থী করেননি সু চি। এর কিছুদিন পর একই বছর অক্টোবরে সু চির দলের একজন জেষ্ঠ্য নেতার বরাত দিয়ে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে একই কথা বলা হয়। আর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ফাঁস হয় মুসলমানেদের নিয়ে সু চির বিতর্কিত মন্তব্য। বিবিসি টুডের ২০১৩ সালের এক সাক্ষাৎকারকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই সাক্ষাৎকারে সম্প্রচার শুরুর আগে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন সু চি। সম্প্রতি প্রকাশিত পিটার পোপহামের ‘দ্য লেডি অ্যান্ড দ্য জেনারেল: অং সান সু চি এবং মিয়ানমারের গণতন্ত্রের লড়াই’ শীর্ষক বইয়ে ওই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ এসেছে। সেখানেই বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের বরাতে লেখক দাবি করেছেন, সু চি ওই সাক্ষাৎকারে ‘কোনও মুসলমান আমার সাক্ষাৎকার নেবে সেটা আগে আমাকে বলা হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, ইন্ডিপেনডেন্ট।

পাঠকের মতামত