
কক্সবাজার শহরে আলিশান অফিস-হোটেল, আর শহর থেকে ১৫–২০ কিমি দূরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। প্রতিটি কর্মকর্তার জন্য আলাদা গাড়ি, যাতায়াতে দৈনন্দিন ২–৫ ঘণ্টা ব্যয়। এভাবেই রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ টাকার ৭০ শতাংশ খরচ হচ্ছে বিদেশি এনজিও কর্মকর্তাদের ব্যয়ভোগে। অথচ দিন যত গড়াচ্ছে, দাতাসংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের বরাদ্দ ক্রমেই কমিয়ে আনছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করার দাবি তুলেছে দেশের বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলো।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।‘সাশ্রয়ী রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার জন্য চাই স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্ব’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কোস্ট ফাউন্ডেশন। আয়োজক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের যুগ্ম পরিচালক মো. ইকবাল উদ্দিনসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ আট বছর ধরে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। দিন যত যাচ্ছে তাদের পেছনে বিদেশি সংস্থাগুলোর বরাদ্দের পরিমাণ ততই কমছে। আবার যে সব বিদেশি সংস্থা কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত রয়েছে; তাদের পেছনেই রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দের মোট ৭০ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাই স্থানীয় এনজিও প্রতিনিধিদের যুক্ত করলে এই খরচ অনেক অংশ কমে যাবে।
বিদেশি এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা কক্সবাজার শহরের বিশাল অফিস এবং হোটেলে থেকে রোহিঙ্গাশিবিরে কার্যক্রম পরিচালনা করেন জানিয়ে বক্তারা বলেন, কক্সবাজার শহর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যেতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। প্রতিটি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা আলাদা গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। ফলে এভাবেই তাদের পেছনে টাকা খরচ হয়ে যায়। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসে মাত্র ১২ ডলার করে খাবার খরচ দেওয়া হয়। আবার তাদের শিক্ষায় বরাদ্দ ক্রমেই কমে আসছে।
তারা আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু তারা এখন দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের কারণে কক্সবাজারের মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। অন্য দিকে দেশের উপকূলে যারা থাকেন, তাদের চেয়ে অনেক ভালো জীবন যাপন করছেন রোহিঙ্গারা। অথচ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে বসে খাওয়াচ্ছে সরকার।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের বসিয়ে না রেখে দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত করার আহ্বান জানান বক্তারা। তারা বলেন, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের তদারকি করছে। তাদের উৎপাদনশীল কাজে লাগানো যেতে পারে। তাদের উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ-আমেরিকায় বিনা শুল্কে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার মান আরও ভালো হবে।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানকারী বিদেশি সংস্থাগুলোর সংখ্যা শতাধিক। এই সংস্থাগুলো জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সুরক্ষা ও জীবিকা উন্নয়নসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে।

পাঠকের মতামত