প্রকাশিত: ১৩/০৮/২০১৯ ৬:৫৯ পিএম , আপডেট: ১৩/০৮/২০১৯ ৭:০০ পিএম

এই বর্ষার পর রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ সরকারের৷ সেই পরিকল্পনা বাদ না হলেও এখন ভাসানচরের চেয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ওপরই জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার৷
ডয়চে ভেলেকে এই তথ্য দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান আরো বলেন, ‘‘তবে ভাসানচরে পাঠানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী৷ প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন সবার সঙ্গে আলোচনা করে, সমন্বয় করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিতে৷ কারো দ্বিমত থাকলে তিনি এটা করবেন না৷”

তিনি বলেন, ‘‘এখন ভাসানচর বিষয়টি অনেকটা চাপা পড়ে গেছে৷ কারণ, আমরা চাচ্ছি, মিয়ানমার চাচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাচ্ছে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাক৷ তারাও পূর্নাঙ্গ নাগরিকত্ব পেলে মিয়ামারে ফিরে যেতে রাজি আছেন৷ তাই ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমরাও এখন জোর দিচ্ছি৷”

তবে এর আগে গত মে মাসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোহাম্মদ শাহ কামাল কক্সকাবাজারে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘বর্ষা মৌসুমের পরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে৷” আর গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে সুন্দর আবাসনের ব্যবস্থা করা হলেও এনজিওগুলো নিজেদের সুবিধার কথা চিন্তা করে স্থানান্তরের বিরেধিতা করছে৷”

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচর এক দুর্গম দ্বীপ৷ এই দ্বীপেই বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক আবাসস্থল গড়ে তোলা হয়েছে৷ ১৬ হাজার একর জমির ১৫ হাজার একরে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসস্থল ছাড়াও আরো প্রয়োজনীয় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর তত্ত্বাবধানে৷ এটি দুই হাজার ৩১২ কোটি বেশি টাকার প্রকল্প৷

বিজ্ঞাপন

প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘‘আরসিসি পিলারের ওপর ইট ও টিন দিয়ে রোহিঙ্গাদের এক লাখ পরিবার থাকার জন্য ঘর তৈরি করা হয়েছে৷ প্রতিটি ঘরে দু’টি বেডরুম, বারান্দা, টয়লেট, কিচেনসহ অন্যান্য সুবিধা আছে৷ তাছাড়া পানি সরবরাহের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে৷ সেখানে পুলিশ স্টেশন, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিকও তৈরি শেষ হয়েছে৷ অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে৷”

রোহিঙ্গারা ভাসানচরে তাদের স্থানান্তরের বিরোধিতা করছে৷ তারা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগ পর্যন্ত কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতেই থাকতে চায়৷ আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায় না রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো হোক৷

এই পরিস্থিতির মধ্যে গত জুলাইয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিন্ট থোয়ে বাংলাদেশ সফর করেন৷ তিনি কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন৷ সেখানে তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলেন৷ মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পেতে হলে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে৷

এই আবেদন তারা কিভাবে করবেন? সরাসরি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখান থেকে আবেদন নেবে, নাকি বাংলাদেশ সরকার সহায়তা করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ তবে বাংলাদেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য এ পর্যন্ত ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা তৈরি করেছে৷ তালিকা তৈরির কাজ অব্যাহত আছে৷

এনামুর রহমান বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর ব্যাপারে জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামসহ আরো যেসব সংশ্লিষ্ট এনজিও আছে তাদের সাথে আমরা সমঝোতায় আসতে পারিনি৷ মিয়নমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছে৷ তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলেছে, যদিও তারা মিয়ানমারের শর্তে রাজি হয়নি৷ ফলে এখন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার বিষয়টিই সামনে চলে এসেছে৷ এ নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে৷”

এদিকে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের মুখপাত্র ইউনূস আরমান মনে করেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নেয়া কোনো সমাধান নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো আমাদের দেশে ফিরতে চাই৷ কিন্তু মিয়ানমার যে প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলছে, এটা দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া৷ আসলে তারা নাগরিকত্ব দিতে চায় না৷ তাই বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের আবেদন তারা যেন মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করে আমাদের নিরাপত্তা এবং পূর্ণ নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করে৷ তাহলে আমরা এই কক্সবাজার থেকে সহজেই আমাদের দেশে ফেরত যেতে পারব৷ ভাসানচরে নিলে বিষয়টি কঠিন হয়ে যাবে৷ আমরা আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব৷”

পাঠকের মতামত