ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১১/০৩/২০২৪ ১০:০১ এএম

রামু সরকারি কলেজের এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক অভিযুক্ত মোহাম্মদ হোছাইনকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান এবং দ্রুত অপসারণ করে ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। রোববার (১০ মার্চ) সকালে কলেজের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে এ কর্মসুচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তারা ‘যৌন নির্যাতনকারী হোছাইনের শাস্তি চাই’, ‘অধ্যক্ষের মদদপুষ্ট শিক্ষক হোছাইনের অপসারণ চাই’, ‘যৌন নির্যাতনমুক্ত নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন চাই’, ‘দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই’, ‘কলেজের দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ও তার মদদপুষ্ট হোছাইনের শাস্তি চাই’সহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মানববন্ধনে ছাত্রছাত্রীরা কলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নানা অনিয়ম-দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত করে অধ্যক্ষসহ জড়িতদের শাস্তির দাবিও তোলেন।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ৭ই মার্চের অনুষ্ঠান ফেলে রামু সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কাজ করার চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী তার সহপাঠী ও অভিভাবকদের বিষয়টি অবহিত করেন। পরে সহপাঠীরা হোছাইনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং তাকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে কক্সবাজার আদালতপাড়ায় নিয়ে যান। সেখানে এডভোকেট রেজাউল করিম কাজলের চেম্বারে ৩০০ টাকা নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা (অঙ্গীকারনামা) দিয়ে মুক্তি পান হোছাইন।
অঙ্গীকারনামায় হোছাইন নিজের অপরাধ স্বীকার করেন এবং ভবিষ্যতে কোনো ছাত্রী বা অন্য কোনো মেয়ের সাথে কোনো প্রকার অনৈতিক আচরণ করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
এদিকে রোববার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শতাধিক ছাত্রছাত্রী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মোশারেফা খানম বলেন, ‘অধ্যক্ষের মদদপুষ্ট হোছাইন স্যার এভাবে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করার সাহস কোথায় পেলেন? একজনের জন্য আমরা কি কলেজে আসতে পারব না?’
‘আমরা নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন চাই। যৌন হয়রানিকরী শিক্ষকের শাস্তি চাই। বলেন নাইয়া ইসলাম নিহা।
কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষকের হাতে যদি ছাত্রীরা নিরাপদ না থাকে তাহলে কোথায় নিরাপদ থাকবে? আমাদের সহপাঠীরা, মেয়েরা যদি নিরাপত্তা না পায়, তাহলে বাসা থেকে কলেজে আসবে কিভাবে? তাই আমরা নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন চাই৷’
কলেজ ছাত্র সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকই যদি এরকম অনৈতিক কাজ করেন তাহলে আমরা নতুন প্রজন্ম কি শিখব?’
‘এ রকম ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এরকম ঘটনা যেন আর না হয় সে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি,’ যোগ করেন তিনি।
দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মফিজুর রহমান বলেন, ‘স্যার যে এরকম কাজ করবেন তা আমরা কখনো ভাবতেও পারি না। এ ধরনের ঘটনায় যদি আমরা ছাড় দেই তাহলে ভবিষ্যতে আরো ঘটবে। আমরা এর বিচার চাই।’
শুধু শিক্ষার্থী নন,কলেজ শিক্ষক হয়ে ছাত্রীর সাথে এমন অশোভরন আচরণে ক্ষুব্দ কলেজটি শিক্ষকেরাও।
প্রতিক্রিয়ায় আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অধ্যাপক আকতার জাহান কাকলী বলেন, ‘ব্যাপারটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। আমাদের অধ্যক্ষও খুবই লজ্জিত।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমরা তো ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক। ওরা যদি আমাদের কাছেই নিরাপদ না হয়, মা-বাবারা তাদের সন্তানদের আমাদের কাছে কিভাবে পাঠাবে?’
অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয়। অভিভবাবকরা যেন আমাদের কাছে তাদের সন্তানদের পাঠিয়ে কোন রকম দুশ্চিন্তায় না থাকেন, সুন্দর একটা পরিবেশ যাতে আমাদের মাঝে বিরাজ করে সেই উদ্যোগ নেয়া জরুরি।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ওহিদুল কবির বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমরা খুবই লজ্জা বোধ করছি। রামু কলেজে চাকরি করি, কোথাও বের হতে পারছি না। ফোনে বা সামনাসামনি আমাদের শুনতে হচ্ছে আপনারা শিক্ষক হয়ে কিভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটান!‘
শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবদুল হক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য দুঃখজনক। আমি আশা করি অধ্যক্ষ মহোদয় বিষয়টা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।’
অধ্যক্ষের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রতিম বড়ুয়া বলেন, ‘অধ্যক্ষ মহোদয় জরুরি কাজে বাইরে আছেন। যৌন নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে কলেজের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও কলেজে উপস্থিত ছিলেন না অভিযুক্ত বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন। বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমও কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি মুঠেোফোনে জানান, ইতিমধ্যে তাকে শোকজ করার প্রস্তুতি চলছে। এবং ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাল থেকে কমিটি কাজ শুরু করবে।
কলেজের শিক্ষকরা জানান, মোহাম্মদ হোছাইনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নতুন কোন ঘটনা নয়। এর আগে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে একাধিকবার তিনি ধরা পড়েছেন এবং মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
যৌন নির্যাতন ছাড়াও এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলেজের বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি এবং সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ অক্টোবর কলেজের অধ্যক্ষ ও একাধিক সিনিয়র শিক্ষকের সামনে এক নারী শিক্ষককে মারতে তেড়ে যান তিনি। সবার সামনেই যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করেন।

পাঠকের মতামত

বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়ে-মুচড়ে গেল ইউএনওর গাড়ি

নির্বাচনী দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দুর্ঘটনায় ...

সময়ের আলো’র নাইক্ষ‌্যংছড়ি প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ পেলেন সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ

দেশের শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে চুড়ান্ত নিয়োগ পেলেন ...