প্রকাশিত: ২৯/০১/২০১৭ ১২:৪৬ এএম , আপডেট: ২৯/০১/২০১৭ ৮:৪৯ এএম
Single Page Top

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে::

রাখাইনে মংডুতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশের (বিজিপি) নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার বিষয়টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের পূর্ব পরিকল্পিত বলে তথ্য মিলেছে। মিয়ানমারে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ধেয়ে আসার পরিকল্পণা নিয়ে ডাকু প্রকৃতির সন্ত্রাসীদের ছক তৈরী করে দেয়া হয়। হামলার পর মংডুতে আরও একাধিক বিদ্রোহী গ্র“পের ক্যাডারদের পাঠানোর কথা ছিল। পরিকল্পণা মতে ঘটনা বাস্তবায়নের পর প্রথম সারির জঙ্গীদের সাড়া না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র জঙ্গী গ্র“প আল এ্যাকিনের সদস্যরা। তারা রোহিঙ্গা জঙ্গী শায়খ আয়ুব গাজীর মাথার মূল্য বাবদ এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এদিকে দুই দফায় রাখাইন রাজ্যে সফর করে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে কফি আনান কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল কাল রবিবার কক্সবাজারে আসছে।
সূত্রে জানা যায়, গত ৯অক্টোবর একই সময়ে মিয়ানমারে বিজিপির আরও দুইটি সেন্ট্রি পোস্টে হামলা করার পরিকল্পণা ছিল আল এ্যাকিন সদস্যদের। কিন্তু যথা সময়ে ঐ দু’টি পোস্টের কাছাকাছি পৌছেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ওয়ামির একাংশের আমির সৌদি আরবে বসবাসরত প্রথম সারির জঙ্গী আয়ুব গাজীসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্র“পের নেতা ডা: ইউনুস, নুরুল ইসলাম, প্রফেসর জাকারিয়া সহ অন্তত ১০ জঙ্গী নেতার পরামর্শে আল এ্যাকিনের ক্যাডাররা মিয়ানমারে বিজিপি চৌকিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর সামরিক জান্তার নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ থাকলে আরএসও জঙ্গীদের কাছে বিদেশী সাহায্য প্রবেশের দরজা বন্ধ থাকে। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসলে দারুণভাবে লাভবান হয়ে থাকে ওসব বিদ্রোহী জঙ্গী। তারা ইতোপূর্বে ফাউন্ডেশন তথা ভিন্ন ভিন্ন নামে সেবা সংগঠন করার মাধ্যমে সুকৌশলে বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে অর্থ এনে লাভবান হয়েছে। ওসব সংগঠনের পক্ষে বিদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা নেতারা ফান্ড সৃষ্টি ও মোটা অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের সাহায্য নাম দিয়ে ভাগবাটোয়ারা করেছে। গত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে না- বিধায় আরএসও ক্যাডারদের হাতে অর্থের ফান্ড আসা কমে যায়। এজন্য তারা বিদেশে বসে মিয়ানমারের জঙ্গলে অবস্থানকারী ও বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা বিদ্রোহী গ্র“পগুলোর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে-দেশটির বিজিপি চৌকিতে সশস্ত্র হামলার ছক কষে। তবে হামলা ঘটনায় শর্ত ছিল, মিয়ানমার অভ্যন্তরে অবস্থানকারী (আয়ুব মাষ্টারের অস্ত্র প্রশিক্ষন ঘাঁটিসহ) আরও একাধিক সশস্ত্রগ্র“প আল এ্যাকিনের সঙ্গে যুক্ত হবে। এদের জন্য ব্যয়ভার মেঠাতে শায়খ আয়ুব গাজী, ডা: ইউনুস, নুরুল ইসলাম ও প্রফেসর জাকারিয়ারা অঢেল অর্থ পাঠাবে। কিন্তু ঐ শর্ত বা প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করায় আল এ্যাকিনের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ওই রোহিঙ্গা জঙ্গী নেতাদের উপর।

জঙ্গীদের গোপন বৈঠক ॥ কক্সবাজারে র‌্যাব ৭৮টি পাইপ বোমা তৈরীর কেচিংসহ আল এ্যাকিনের ২সদস্যকে আটকের পর তটস্থ অবস্থায় রয়েছে ঐ গ্র“পের সদস্যরা। কফি আনান কমিশনের প্রতিনিধিদলের সম্মুখে বিবরণ তুলে ধরা ও কারাগারে বন্দি দুই ক্যাডারকে মুক্ত করতে বৃহস্পতিবার রাতে সন্ত্রাসী গ্র“প আল এ্যাকিনের কয়েক নেতার মধ্যে গোপন বৈঠক অনুষ্টিত হয়েছে। শহরের পাহাড়তলী ওয়ামি ভবণের অদূরে মৌলবি নুর হোসেনের (রোহিঙ্গা) বাড়িতে রাত ৮টা থেকে ১ঘন্টা স্থায়ী গোপন বৈঠকে আল এ্যাকিনের বাংলাদেশ প্রধান মৌলবি শফিকুর রহমান, টেকনাফ মুচনি ক্যাম্পের মৌলবি ইয়াছিন, নুরুল হক, আমান উল্লাহ, উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের মাষ্টার একরাম, আবু ছিদ্দিক, মৌলবি জালাল, সোয়াইব, শহরের রোমালিয়ারছড়ায় বসবাসরত মৌলবি নুর হোসেন, পাহাড়তলীতে ঘাপটি মেরে থাকা জামিয়ায়ে খায়রিয়ার প্রধান জঙ্গী হাফেজ এমদাদ সহ মোট ১১জন রোহিঙ্গা নেতা উপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে রাত ৯টায় মাইক্রোবাস ও সিএনজি টেক্স্রিতে করে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা দ্রুত সটকে পড়ে বলে সূত্রটি দাবী করেছে। কক্সবাজার র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা গত মঙ্গলবার ৭৮টি বোমা তৈরীর কেচিংসহ আটক আল এ্যাকিন সদস্য মৃত নূরুল ইসলামের পুত্র মৌলবি করিম উল্লাহ ও মৃত জাফর হোসেনের পুত্র মোহাম্মদ রমিজকে জামিনে মুক্ত করার জন্য তদ্বির চালাচ্ছে ঐ গ্র“পের ক্যাডাররা। র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের সদস্যরা একটি ব্যাটারি চালিত টমটম গাড়ি থেকে দু’টি বস্তায় ভর্তি ৭৮টি পাইপ বোমার কেচিংসহ ওই দু’রোহিঙ্গাকে আটক করেছিল। র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার লে. আশেকুর রহমান জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে আটক দু’জন কোন নিষিদ্ধ রোহিঙ্গা সংগঠনের সদস্য। কোনো নাশকতায় ব্যবহারে বোমা তৈরির জন্য সরঞ্জামগুলো আনা হচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, আটকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, বোমা তৈরির সরঞ্জামগুলো জনৈক মৌলবি শফিকের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

জঙ্গীপনা রোধে সিদ্ধান্ত ॥ ছদ্মবেশে টমটক চালক ও টেইলার্স দোকানির কাছ থেকে দুই বস্তা বোমা তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার ঘটনায় ভাবিয়ে তুলেছে সমাজপতিদের। সমাজের মানুষকে মিটিং ডেকে ওসব রোহিঙ্গা জঙ্গীকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার রাতে রুমালিছরা সমাজ উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দীন আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্টিত সভায় মৌলবি শফিকের গোপন গেট বন্ধ করা সহ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বিজিবি কর্মকর্তা (অব:) আমির উদ্দিন চৌধুরী, সাহাব উদ্দিন ও রায়হান উদ্দিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়তে বদ্ধ পরিকর। তাই জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ার সহযোগিতায় কক্সবাজার থেকেই আন্দোলন শুরু করতে হবে। সভায় ওই পাড়ার চতুর্দিকে ৪টি গেট ও সিসি ক্যামরা স্থাপন, নতুন জমি-জমা ক্রেতা ও ভাড়াটিয়াদের বিস্তারিত তথ্য সমাজের কাছে জমা করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। উল্লেখ্য রুমালিয়াছরা এলাকায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্র“প আল এ্যাকিনের বাংলাদেশ প্রধান মৌলবি শফিক, হাফেজ জাবের, আবু ছিদ্দিক আরমান, মৌলবি নুর হোসেন ও ইসমাইলসহ অনেকের বাসা এবং ভিটা-বাড়ি বিদ্যমান।
কফি আনান কমিশনের সফর ॥ আগে থেকেই বাংলাদেশে আশ্রিত কয়েক লাখ রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমার থেকে নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখার জন্য কফি আনান কমিশনের নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কাল (২৯জানুয়ারি) কক্সবাজারে আসছেন। তারা ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি কক্সবাজার পরিদর্শন শেষে ৩১ তারিখ ঢাকায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। রাখাইন রাজ্যের সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমার সরকারকে পরামর্শ দিতে রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আউং সান সু চির উদ্যোগে কফি আনান কমিশন গঠন করা হয়। ৯ সদস্যের এই কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। কমিশন ইতোমধ্যে দুই দফায় রাখাইন রাজ্যে গিয়েছিলেন। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখা ও তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কমিশনের প্রতিনিধিদল কাল রবিবার কক্সবাজারে আসছেন। কমিশনের ম্যান্ডেট অনুযায়ী তারা ২০১৭ সালের দ্বিতীয়ার্ধে তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

রাখাইনে বঞ্চনা বন্ধে ওআইসি’র অনুরোধ ॥ রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বঞ্চনা বন্ধের জন্য ওআইসি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বলেছে মিয়ানমারকে। এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ওআইসির বিশেষ বৈঠকে মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন এনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে দেশটির কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে ৫৭টি মুসলিম দেশের এই জোট। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠক শেষে প্রচারিত ১০ দফার ইশতেহারে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
ওআইসির বিশেষ ওই সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম। তিনি রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি থেকে বাস্তুচ্যুতির কারণে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর বারবার অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানান। অবিলম্বে রাখাইনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি। সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য তিনি রাখাইনের রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন।
রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে মিয়ানমারকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বঞ্চনা রোধে সব পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি তাদের সংস্কৃতি পরিচয় অস্বীকারের অব্যাহত চেষ্টা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ওআইসি। # সূত্র: জনকণ্ঠ

পাঠকের মতামত

Single Page Bottom

বিসিআরসি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড- ২০২৫ এ ভূষিত হলেন পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক পিপিএম

পর্যটন খাতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ নাইমুল হক পিপিএম ময়মনসিংহ ...

সাজেদা বেগমকে গর্জনিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পন

শামীম ইকবাল চৌধুরী,নাইক্ষ্যংছড়ি:: গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ...

সাংবাদিক জসিম আজাদের বসতভিটা দখলের ঘটনায় বাবু সহ ৩ জন কারাগারে

কক্সবাজারের উখিয়ায় সাংবাদিকের বসতভিটা দখলের অভিযোগে স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাহফুজ উদ্দিন বাবু ও তাঁর দুই সহযোগীকে ...
Single Page Footer