ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৯/১০/২০২৩ ৯:৪১ এএম , আপডেট: ১৯/১০/২০২৩ ১২:৩০ পিএম
আরসার শীর্ষ নেতা

মিয়ানমারের রাখাইনের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) নেতা আতাউল্লাহ সে দেশে বসেই কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় আরসা’র শতাধিক সন্ত্রাসী রয়েছে, যারা মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান করছে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য খুন-অপহরণসহ নানা অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে তারা। মিয়ানমার থেকে সরাসরি তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে আতাউল্লাহ। তার নির্দেশেই হত্যাকাণ্ড ঘটছে, আসছে অবৈধ অস্ত্রের চালান, সঙ্গে মাদকের ছড়াছড়ি। এছাড়া ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে অবৈধ অস্ত্র, এসবের পেছনেও রয়েছে আতাউল্লাহ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আরসা নেতা আতাউল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপতৎপরতা চলে আসছে। বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সন্ত্রাসী হিসেবে যারা কাজ করছে তারা অনেকেই বেতনভুক্ত। যারা জিম্মাদার বা দায়িত্বশীল রয়েছে সবাইকে মাসিক বেতন চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপরাধ ঘটিয়ে গাঢাকা দিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে তারা। এমনকি মিয়ানমারেও চলে যায় গাঢাকা দিতে। গহিন বনাঞ্চল ও পাহাড়কে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করছে এই সন্ত্রাসীরা।

সম্প্রতি র‌্যাব-১৫-এর অভিযানে আরসার মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান সন্দেহে নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দীনকে কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সাতটি বিদেশি অস্ত্র। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব জানতে পারে, আরসাপ্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ১২ জনের একটি গ্রুপ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মাস্টার মহিবুল্লাহর অফিসে ঢুকে তাকে গুলি করে। পরবর্তীতে ফাঁকা গুলি করে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের যৌথ মাদকবিরোধী অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় একজন নিহত হয়। সে হত্যাকাণ্ডেও সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল আতাউল্লাহ। এছাড়া হেড মাঝি শফিক, জসিম, সেলিম, নুর বশর, সালাম, সলিম, কালাবদ্দা, রহিমুল্লাহ ও খালেদ হত্যাকাণ্ড ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ছয়টি খুনের ঘটনাসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে আতাউল্লাহর নির্দেশে।

বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা বলেন, যখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক কিংবা অস্ত্রবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়, তখন দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে যারা স্থানীয় সন্ত্রাসী রয়েছে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য আরসার সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক বজায় রাখে। কিছু দিন আগে বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে র‌্যাবের অভিযানে। সেখানে আমরা জানতে পেরেছি, এই আরসার সঙ্গে স্থানীয় সন্ত্রাসীদেরও যোগসূত্র রয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আরসা নেতা আতাউল্লাহর সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা কাদের কাদের যোগাযোগ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা কোন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। যারা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র দেশে ঢোকাচ্ছে চোরাচালানের মাধ্যমে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ কিলার গ্রুপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র পৌঁছে দিচ্ছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হচ্ছে চড়া মূল্যে অস্ত্র বিক্রি করার জন্য। এসব কাজের জন্য আতাউল্লাহকে বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থান করতে হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মতামত

এমএসএফের প্রতিবেদন৮৪% রোহিঙ্গার আশঙ্কা—মিয়ানমারে ফেরা নিরাপদ নয়

ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস/মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ারস (এমএসএফ)-এর নতুন একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, মিয়ানমারে চরম সহিংসতার ...