উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১/০৯/২০২৫ ৮:৪৬ এএম
ফাইল ছবি

গবেষণায় দেখা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় যৌন হয়রানিকে সবচেয়ে ‘বড় উদ্বেগের’ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আইনি সুরক্ষার ক্ষেত্রেও রয়েছে বড় ধরনের ঘাটতি।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় আশ্রয় নেয়া নারী ও কিশোরীদের মধ্যে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে প্রবল আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। সম্প্রতি পরিচালিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৮২ শতাংশ রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী নিজেদের দেশ মিয়ানমারে নিরাপদে ফিরতে আগ্রহী। তবে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা তৃতীয় কোনো দেশে অভিবাসনের কথা বলেছেন। অন্যদিকে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয়ার পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যেও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ ও সংলাপ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উঠে আসে।

গবেষণার মূল তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করেন সংস্থার পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার তামাজের আহমেদ। পরে রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি সংলাপ পরিচালনা করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। অনুষ্ঠানে সরকারি সংস্থা, জাতিসংঘ, দূতাবাস, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, দাতা সংস্থা, গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় যৌন হয়রানিকে সবচেয়ে ‘বড় উদ্বেগের’ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আইনি সুরক্ষার ক্ষেত্রেও রয়েছে বড় ধরনের ঘাটতি। মাত্র ৭ শতাংশ নারী স্বাধীনভাবে আইনি সহায়তা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন, যা বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের সীমিত প্রবেশাধিকার ও আস্থার অভাবকেই ইঙ্গিত করে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ মনে করেন, পুরুষ ও ছেলেদের জন্য কাউন্সেলিং জরুরি। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরে গড়ে ওঠা সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য ও মাদকের বিস্তার তাদের নিরাপত্তা ও সুস্থতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যথাযথ সুরক্ষার অভাবে রোহিঙ্গারা প্রাথমিক সুরক্ষার জন্য মাঝি (ব্লক লিডার), ধর্মীয় নেতা বা কমিউনিটি নেতাদের কাছে যান। তবে পাল্টা আঘাত বা ক্যাম্পের সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে অনেকেই অভিযোগ করতে পারেন না। অধিকাংশ নারী জানিয়েছেন, শাস্তিস্বরূপ শারীরিক নির্যাতন বা রেশন কার্ড বাতিল করা হয়। কিছু ঘটনা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলেও তার ফলাফল অস্পষ্ট।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পর্যাপ্ত আলো ও পৃথক শৌচাগার-গোসলের স্থান নিশ্চিত করা; নারী নিরাপত্তা কর্মী ও নারী নেতৃত্বাধীন সুরক্ষা কমিটি গঠন করা; সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব কমাতে স্বাধীন আইনি সহায়তা ডেস্ক স্থাপন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম জোরদার করা; পুরুষ ও ছেলেদের জন্য সচেতনতা ও কাউন্সেলিং কর্মসূচি চালু করা; নারীদের জন্য নিরাপদ স্থান, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করা।

অ্যাকশনএইড ইউকে ও পিপলস পোস্টকোড লটারির অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অগ্রযাত্রার সহযোগিতায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ‘উইমেন প্রটেকশন ইন নেগলেক্টেড ক্রাইসিস রিসার্চ প্রকল্প-বাংলাদেশ: আরার হেফাজত (রোহিঙ্গা ভাষায় আমাদের সুরক্ষা) সুরক্ষার ঝুঁকির মুখে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের কণ্ঠস্বর’ শীর্ষক গবেষণায় রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের সুরক্ষাজনিত ঝুঁকি এবং তাদের নিজস্ব ভবিষ্যৎ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। গবেষণাটি ছিল অংশগ্রহণমূলক, যেখানে তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৬৬ জন নারী ও কিশোরী এবং উখিয়ার ৩০ জন স্থানীয় নারী অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী।

পাঠকের মতামত

এনজিও স্কাসের জেপি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে ভয়াবহ অনিয়ম

# এনজিও স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমার মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের জন‍্য মাথাপিছু বরাদ্দ ২৪০০ টাকা, দেওয়া ...

উখিয়া-টেকনাফের তরুণদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আবদুল্লাহ

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের রাজনীতিতে দ্রুত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। ...

কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ প্রশাসনেরপ্যারাসেলিং থেকে ছিটকে গিয়ে ঝাউগাছে ঝুলেছিলেন পর্যটক

কক্সবাজার সৈকতে রোমাঞ্চকর ‘প্যারাসেলিং’ নিয়ম না নেমে পরিচালিত হওয়ায় বারবার দুর্ঘটনার কারণে বিপদজ্জনক হয়ে উঠেছে। ...