প্রকাশিত: ১৪/০৪/২০১৮ ৭:১৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:১১ এএম

ঢাকা: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এক সময় আরাকান নামে পরিচিত ছিল এবং বাংলার সাথে তার সংযোগ বহু দিনের পুরনো। কয়েক শতাব্দী আগে রোসাং রাজসভায় আরাকান শাসকেরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে একটা দীর্ঘ সময় ধরে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।

এক সময়ের সেই আরাকান থেকে কয়েক মাস আগে হত্যা নির্যাতনের শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। খবর বিবিসি

দেশটির কর্তৃপক্ষ এই রোহিঙ্গাদের সব সময় সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে। তাদের বলা হয় তারা বাঙালি। যদিও আরাকানের মানুষের ভাষা আরাকানি, তবে তাদের সঙ্গে বাংলার একটি ঐতিহাসিক সংযোগ রয়েছে।

এর অন্যতম বড় কারণটি ভৌগলিক। আর সাংস্কৃতিক নানা আদান প্রদানের মধ্যে ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রেই যোগাযোগ হয়েছে বেশি।

এজন্যে ছিলো আরাকান রাজসভা, যা ‘রোসাং’ রাজসভা নামেও পরিচিত, তার ভূমিকাও। বিশেষ করে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে। লেখক ও গবেষক সলিমুল্লাহ খান বলছেন তেমনটাই।

‘আরাকান রাজসভা মানে বর্তমান চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সিতওয়ে পর্যন্ত একটা দেশ ছিল। চট্টগ্রাম আজকের যে বাংলাদেশ তার অংশ হয়েছে সপ্তদশ শতাব্দীতে। ১৪০০ শতকের পর প্রায় দুশো বছর বাংলা স্বাধীন ছিল,ছিল দিল্লি থেকে মুক্ত। তাদের প্রধান রাজ ভাষা ছিল ফার্সি। কিন্তু তাদের সময় বাংলা ভাষার বিকাশ বেশি হয়েছে। যেমন রামায়ণ ও মহাভারতের অনুবাদ বাংলায় প্রথম হয় ঐ সময়ে,’ বলেন সলিমুল্লাহ খান।

আরাকান রাজসভায় যেসব কবি বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা অর্জন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন দৌলত কাজী, মারদান কোরেশী, মাগন ঠাকুর, মহাকবি আলাওল, আবদুল করীম খোন্দকার প্রমুখ। এঁরা আরবি-ফারসি কিংবা হিন্দি থেকে উপকরণ গ্রহণ করলেও মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কাব্য রচনা করে স্বকীয় প্রতিভার পরিচয় রেখেছেন।

এ সময়ে বাংলা সাহিত্যের নতুন নির্মাণে ভূমিকা রাখে আরাকান সভা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আযম বলছেন, এর রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দুটি প্রয়োজনই ছিল।

‘আরাকান রাজ সভায় বাংলা সাহিত্যের বেশ কয়েকজন কবি কাজ করেছেন, ফলে কবি ও কাব্যগ্রন্থের দিক থেকে সংখ্যাটা বেশ উল্লেখযোগ্য। আর আরাকান ঠিক বাংলাভাষী অঞ্চলের মধ্যে নয়, যে কারণে মূল ভূখণ্ডের বাইরে বাংলা ভাষার চর্চার দিক থেকেও বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ।’

‘আর লেখাগুলোও মধ্যযুগের অন্যান্য সাহিত্যের ধরন থেকে ভিন্ন, যেমন এ সময় মানবিক ও প্রেমের আখ্যান নিয়ে লেখা হয়েছে,’ বলেন অধ্যাপক আযম।

কিন্তু আরাকান রাজসভায় মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের এই বিকাশের পেছনের আর্থ-সামাজিক কারণ কি ছিল?

লেখক ও গবেষক সলিমুল্লাহ খান বলছেন, ভাষা হিসেবেও বাংলা সে সময়ে এ অঞ্চলে ছিল অন্যতম প্রধান, যে কারণে বাংলাকে উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব ছিল।

‘ইংরেজরা আসার আগে বাংলার রাজ ভাষা ছিল ফার্সি, কিন্তু আরাকানের রাজসভায় বাংলা ছিল অন্যতম রাজ ভাষা। অহম, ত্রিপুরা সব জায়গার রাজ ভাষা সে সময় ছিল বাংলা। বাংলা সে সময় নিজের ভূখণ্ডের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আরাকানের রাজারা পঞ্চদশ শতাব্দীতে যখন ক্ষমতা হারায়, তাদের সিংহাসন উদ্ধার করে দিয়েছে বাংলার রাজারা। এটা ১৪৩০ সনের কথা। এরপর থেকে আরাকান রাজসভায় বাংলাই ছিল, বলা যেতে পারে, এক নম্বর রাজ ভাষা।’

তবে তিনি বলেন, পরবর্তীতে যখন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখা হয়েছে, সেখানে আরাকান রাজসভায় মধ্যযুগের এই বিকাশকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যে কারণে এ অঞ্চলে ইংরেজদের শাসন শুরুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ বছর ধরে চলা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান সময়টি অনেক সময়ই আলোচনার বাইরে থেকে যায়।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...