প্রকাশিত: ১০/০৪/২০১৭ ৭:২৭ এএম

নিউজ ডেস্ক::

বিরোধ নিরসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগের মাঝেই নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আজ লালদিঘি ময়দানে তার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সমাবেশ ডেকেছেন। বর্ধিত হারে হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর) আদায়ের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং মৎস্যজীবীদের অধিকার আদায়ে আজ লালদিঘি ময়দানে ডাকা সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশের প্রধান অতিথিও তিনি। অর্থাৎ আজ থেকে আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মাঠে নামছেন তিনি।
গত শনিবার নাতনির আকিকা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কথা একটাই, অযোগ্য-অথর্ব লোক চট্টগ্রামবাসী চায় না। দীর্ঘদিন ধরে আমি মহানগর আওয়ামী লীগকে তৈরি করেছি। চট্টগ্রামে রাজনীতির ক্ষেত্রে তৈরি করেছি। আজ যা ইচ্ছা তা-ই করে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে। আমি বঙ্গবন্ধুর কর্মী। অন্যায়কে জীবনে প্রশ্রয় দিই-নাই। আগামীতে যারা অন্যায় করবে, দলের ক্ষতি করবে, তাদেরকে ছাড় দেব না। সে আমার ছেলে হোক কিংবা দলের কোন কর্মী হোক। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই রুখে দাঁড়াব। সমাবেশে গরম কথা বলব। সবাই আসবেন।’
আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নানা বিষয় নিয়ে সরব হয়ে তাকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করেছেন। বন্দর রক্ষা কমিটির ব্যানারে একবার প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছিলেন সাবেক মেয়র। ওই সময় তিনি বলেছিলেন আ জ ম নাছির, সামশুল হক চৌধুরী এমপি, এমএ লতিফ এমপি, তরফদার রুহুল আমিন এবং বন্দরের তৎকালীন চেয়ারম্যান বন্দরকে ধ্বংস করছেন। তারা ডাকাতি করছেন। এনিয়ে তিনি সভা-সমাবেশও করেন। ধীরে ধীরে সেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।
বিরোধের আরেকটি ইস্যু হল আউটার স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) সুইমিংপুল নির্মাণের উদ্যোগ। এই কাজের জন্য একটি জায়গা চিহ্নিত করে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করা হয়েছে। এবিষয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অভিযোগ হল সুইমিংপুলের নামে অতিরিক্ত জায়গা নিয়ে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
ফটোশপের কারসাজির মাধ্যমে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মাথার সাথে বন্দর এলাকার সাংসদ এম এ লতিফের ছবি লাগিয়ে ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর বিষয়টিও নিয়েও উভয়ের মাঝে মতবিরোধ হয়। আলোচিত এই বিষয়টি নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সভা-সমাবেশে কোন মন্তব্য না করলেও মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের ধারণা এমপি লতিফকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আ জ ম নাছির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এরপর সিটি কর্পোরেশন গত বছরের ২১ মার্চ নগরীর ১১টি ওয়ার্ডে গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন কাজ শুরু করলে মহিউদ্দিন চৌধুরী এনিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। সভা সমাবেশে গৃহকরের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন এবং গৃহকর না দেয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান। মহিউদ্দিন চৌধুরীর এই বিরোধিতার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে গৃহকর আদায়ের বিষয়টি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়। গৃহকর বাড়ানোর ক্ষেত্রে সিটি মেয়রের যে কোন ক্ষমতা নেই এবং ১৯৯৫ সাল থেকে যে হারে কর আদায় করা হচ্ছে বর্তমানেও নগরবাসী সেই হারে কর দিচ্ছেন এসব বিষয় খোলাসা করার চেষ্টা করা হয়। তবে সিটি মেয়র সভা সমাবেশে কিংবা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ্যে কখনো মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ না এনে এই ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে শাহ আমানত সেতুর অদূরে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন দেশের প্রথম আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চালু করে বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। একইসাথে পাথরঘাটাস্থ পুরাতন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়। তাদের এই কাজে বর্তমান মেয়রের সহযোগিতা ছিল। এই ঘটনায় আড়তদারদের একাংশকে নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী পুরোনো অবতরণ কেন্দ্রটি ফের চালু করেন। তারই পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আজ সমাবেশ ডেকেছেন তিনি।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরী একটি প্যানেলের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু তার সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবি হয়।
সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের মেয়াদ পর্যন্ত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি যা বলতেন তাই কার্যকর হতো। ট্রাস্টি বোর্ডের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাবেক মেয়র ওই বোর্ডের সদস্য হবেন এমন একটি ধারার কল্যাণে তিনি বোর্ডে ছিলেন। কিন্তু মনজুর আলমের পর আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র নির্বাচিত হলে সাবেক মেয়র হিসেবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবর্তে মনজুর আলম বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত হওয়ার কথা। তাতে মহিউদ্দিন চৌধুরী অটোমেটিক বাদ পড়ে যান। এনিয়ে বিবাদের জের ধরে শেষ পর্যন্ত তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিনের বক্তব্য হল, সিটি কর্পোরেশনের জায়গায়, সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়েছে। তাই এই প্রতিষ্ঠানের মালিক সিটি কর্পোরেশন।
তবে চট্টগ্রামের এই প্রভাবশালী দুই নেতার বিরোধ অনেক পুরানো। একসময় তাদের মাঝে সাংগঠনিক বিরোধ ছিল। আকতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এবং এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মধ্যে বিরোধ ছিল। সে সময় আ জ ম নাছির উদ্দিন ছিলেন বাবুর পক্ষে। বাবু-মহিউদ্দিন বিরোধটি একপর্যায়ে এসে মহিউদ্দিন-নাছির বিরোধে পরিণত হয়। চট্টগ্রামে রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করার পরও আ জ ম নাছির উদ্দিন কখনোই সাংগঠনিক পদ-পদবি পাননি। সর্বশেষ তাকে নগর আওয়ামী লীগের সদস্য করা হয়েছিল। আ জ ম নাছির উদ্দিনকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করার আগ পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন কলেজ এবং ওয়ার্ডে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের মধ্যে যেসব মারামারি এবং বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটতো অধিকাংশই এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যেই। মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রথম মেয়র নির্বাচন হতে শুরু করে নগরের এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতারা বার বার চেষ্টা করেছেন। কেউই তাতে সফল হননি। তাদের বিরোধ নিরসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে কতটুকু সফলতা আসবে তা নিয়ে উভয়ের অনুসারীদের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে।
চট্টগ্রামের এই শীর্ষ দুই নেতার বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম পূর্বকোণকে বলেন, সমাবেশের বিষয়টি তার জানা নেই। দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য তিনি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে কথা বলেছেন এবং আ জ ম নাছির উদ্দিন ঢাকায় অবস্থান করার কারণে তার সাথে মোবাইলে কথা বলেছেন। উভয়ের সাথে কথা বলেই প্রতিনিধি সভার তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এখানে আর কোন বিরোধ থাকবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোন্দল নিরসনে প্রতিনিধি সভার আয়োজনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রামের বিষয়গুলি নিয়ে তিনি স্টাডি করছেন।
আয়োজিত সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে তিনি স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘ ১৭ বছর দায়িত্বপালনকালে চট্টগ্রাম শহরকে জঞ্জালের শহরে পরিণত করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র এক বছর আট মাস। এরই মাঝে বিলবোর্ডের জঞ্জাল অপসারণ করেছি। ডোর-টু-ডোর আবর্জনা সংগ্রহের মাধ্যমে শহরকে দুর্গন্ধ ও আবর্জনামুক্ত করার কাজ শুরু করেছি।’ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে চট্টগ্রাম শহরের মাস্টারপ্ল্যানের বিন্দুমাত্র বাস্তবায়ন হয়নি উল্লেখ করে বলেন, ‘এই শহরে খাল-নালা এবং ফুটপাত দখরের সংস্কৃতি চালু করেছেন তিনি। তিনিই খাল-নালার ওপর বিশ্ববিদ্যালয় এবং মার্কেট নির্মাণ করেছেন।’ চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও এখানে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা নেই একথা উল্লেখ করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতার জন্য তিনিই দায়ী। খাল-নালা খোঁড়ার কথা দূরে থাক। যেগুলি ছিল তা তিনি নিজে ভরাট করে অন্যকে ভরাটের উৎসাহ যুগিয়েছেন। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান নির্মাণ করেছেন।’
সিটি মেয়র বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজেই জানেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জানেন, একজন মেয়রের পক্ষে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। স্থানীয় সরকার আইনের আওতায় একজন মেয়র তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। তবুও এই সাবেক মেয়র জনগণকে বোকা ভাবছেন। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছেন। সুস্থ মস্তিষ্কের কোন লোক এরকম আচরণ করতে পারেন না। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, ডিজেলসহ অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। সেসব নিয়ে তো তিনি কোন কথা বলছেন না। এতেই বুঝা যায় তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তবে যত বাধাই আসুক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। নগরবাসী এই দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিয়েছেন। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে এই শহরকে জঞ্জাল এবং দুর্গন্ধমুক্ত গ্রিন ও ক্লিন সিটিতে পরিণত করবো।পূর্বকোণ

পাঠকের মতামত

বাঁচানো গেল না শিশু আয়মানকেও

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন শিশু আয়মান ...

চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলায় পর্যটন উন্নয়নে প্রমোশনাল পরিকল্পনা কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আয়োজক কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনা এবং বিশৃঙ্খলা মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের নির্বাচিত আটটি ট্যুরিজম ডেস্টিনেশনের প্রোমোশন পরিকল্পনার ...

ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসককে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ জালিয়াতি করে কোটি টাকার সম্পদ দখলের অভিযোগ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে

সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলমের প্রভাব বলয় কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ব্যক্তি ...