ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৪/০৪/২০২৪ ৯:৫২ এএম

দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে বস্তিতে থাকেন রিকশাচালক আব্বাস আলী। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন সকালে বের হন রিকশা নিয়ে। চলমান তাপপ্রবাহে বেশ বিপদে পড়েছেন তিনি। গরমের কারণে তার রোজগার কমেছে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

আব্বাস আলী বলেন, ‘গরমে জানটা বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কী করব? রিকশা না চালাইলে তো পেট চলব না। একটা ভাড়া টানলেই শরীর একদম ক্লান্ত হয়ে যায়, মাথা ঘোরে। সপ্তাহখানেক ধরে বড় কোনো ভাড়া টানতে পারি না। ২০ থেকে ৫০-৬০ টাকার ভাড়া টানি। আগে দিনে ২০ থেকে ২২টা ভাড়া টানতাম, এখন ১০ থেকে ১২টির বেশি পারি না। এক ঘণ্টা রিকশা চালালে আবার এক ঘণ্টা রেস্ট নিতে হয়।’

এই গরমে চরম কষ্টে আছেন আব্বাস আলীর মতো বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ। দুই সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে অনুভূত হচ্ছে ‘মরুর উষ্ণতা’। তেতে ওঠা রোদ, লু হাওয়ায় হাঁসফাঁস অবস্থা। হিটস্ট্রোক ও গরমজনিত নানা রোগে গত চার দিনে দেশে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশজুড়ে নেমে গেছে পানির স্তর। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের গরম রীতিমতো আপদ থেকে দুর্যোগে রূপ নিচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমের ঝুঁকিতে রয়েছেন। আর ঢাকার ৫৩ লাখ মানুষ গরমের সময়ে বাইরে কাজ করতে বের হন। গ্রাম ও শহরের এই অধিবাসীরা অতি উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন। জীববৈচিত্র্য ও কৃষিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের ৬৫ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। যেভাবে উষ্ণতা বাড়ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে তিন থেকে চার কোটি মানুষ বাস্তুহারা হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতি উষ্ণ তাপের মধ্যে কেউ যদি টানা ছয় ঘণ্টা থাকেন, তাহলে তার শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, ফুসফুস ও যকৃতের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে।

১৯৮১ থেকে ২০২৩—এই ৪৩ বছরের এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা তথ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো বছর নেই এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ হয়নি। ৪৩ বছরে প্রতিবারই এপ্রিলে অন্তত দুই দিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। তাপপ্রবাহের সবচেয়ে কম সময়কাল ছিল দুই দিন এবং দীর্ঘতম সময় ছিল ২৩ দিন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কখনো কখনো তিন সপ্তাহের বেশি এই তাপমাত্রা অব্যাহত ছিল। তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ সর্বোচ্চ সাত দিন স্থায়ী হয়। সাধারণত দুই থেকে চার দিন বেশি স্থায়ী হয়। এপ্রিলে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির প্রবণতা না থাকলেও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের সংখ্যা এবং ব্যাপ্তিকাল বেড়েছে। তাপপ্রবাহ শুধু এখন মার্চ, এপ্রিল, মে মাসেই নেই; গতবছর বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরেও তাপপ্রবাহ ছিল। এ ধরনের চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় বর্ষাকালেও তাপপ্রবাহ থাকা স্বাভাবিক চরিত্র নয়।’

আবুল কালাম মল্লিকের ওই গবেষণায় দেখা গেছে, এপ্রিলে দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি রেকর্ড করা হয়। রাজশাহী, যশোর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরায় সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ৪৩ বছর মিলিয়ে এপ্রিল মাসে সর্বমোট দিন সংখ্যা ১ হাজার ২৯০। এর মধ্যে ঢাকায় ১৮৬ দিন, টাঙ্গাইলে ১৯৩ দিন, সাতক্ষীরায় ২৮৪ দিন, রাঙামাটিতে ১৩৫ দিন, বগুড়া ও মাদারীপুরে ১৪৬ দিন এবং ফরিদপুরে ২৬৫ দিন মৃদু থেকে চরম তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সময়ে এপ্রিলে তাপপ্রবাহ ছিল দুই দিন। ১৯৮৮ সালে ছিল ৫ দিন, ১৯৯১ সালে ছিল ১০ দিন, ১৯৯২ সালে ৯ দিন, ১৯৯৪ সালে ১৬ দিন, ১৯৯৫ সালে ২৩ দিন, ২০০১ সালে ১৭ দিন, ২০০৮ সালে ১৬ দিন, ২০০৯ সালে ১৭ দিন, ২০১৪ সালে ২৩ দিন ও ২০২৩ সালের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ ছিল ১৭ দিন।

১৯৮৯ সালে এপ্রিলে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ তিন দিন স্থায়ী ছিল। ১৯৯২ সালে পাঁচ দিন, ১৯৯৫ সালে চার দিন; ১৯৯৭-২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরেই দুই দিন, ২০০৯-২০১০ সালে প্রতি বছর চার দিন, ২০১৪ সালে ছয় দিন, ২০১৬ সালে দুই দিন এবং ২০২২-২০২৩ সালে প্রতি বছর তিন দিন করে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত ছিল।

দেশে গত কয়েক বছর ধরে দাবদাহ বা তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও নতুন নতুন রেকর্ড হয়েই চলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। তারও আগে ১৯৯৫ সালে এবং ২০০২ সালে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, দেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ। এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ২০ এপ্রিল যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এ বছর দেশের বেশিরভাগ জায়গায় ৪০ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে এবার।

বাংলাদেশের ৬০ বছরের (১৯৬১-২০২০) আবহাওয়া এবং তাপমাত্রার ধরন ব্যাখ্যা করে গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চল এবং দেশের উপকূলীয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পর উষ্ণতার বিপদ দ্রুত বাড়ছে।

‘নগরায়ণে পরিবর্তন ও ঢাকা শহরে তাপীয় দ্বীপের প্রভাব’ শীর্ষক এই গবেষণায় বলা হয়, ঢাকার উষ্ণতম স্থানের সঙ্গে শহরের বাইরের শীতলতম স্থানের দিন-রাতের ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য যথাক্রমে ৭ ও ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিষয়টি অনেকটা এমন, ঢাকার অদূরে সাভার বা মানিকগঞ্জের সিংগাইরে যখন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে, তখন রাজধানীর তেজগাঁও-ফার্মগেট এলাকার ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার ঢাকার ভেতরেও ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায়। যেমন দিনের সবচেয়ে উত্তপ্ত সময়ে মিরপুরের চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার তাপমাত্রা গুলশানের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।

ঢাকার সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে তেজগাঁও, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পল্টন, মতিঝিল, গুলশান, বনানী, রামপুরা, বনশ্রী ও মাদানী অ্যাভিনিউ। এর পরই আছে উত্তরা, মিরপুর, শেওড়াপাড়া। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৬১ সালে ঢাকায় সারা বছর আরামদায়ক দিনের সংখ্যা ছিল ৮০। আর তীব্র গরমে কষ্টকর দিনের সংখ্যা ছিল সাত। ২০২০ সালে আরামদায়ক দিনের সংখ্যা কমে ৬৬ এবং কষ্টকর দিন বেড়ে হয়েছে ২১। একই সময়ে সিলেটে আরামদায়ক দিন ৮০ থেকে কমে ৬৭ এবং কষ্টকর দিন ১৪ থেকে বেড়ে ২০ হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও গরমের কষ্টের দিনের সংখ্যা তিন ও দুই গুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) হিসাব বলছে, গত ২৮ বছরে রাজধানী থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাধার উধাও হয়ে গেছে। এ সময় প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার সবুজের মৃত্যু হয়েছে।

সংগঠনটি সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘শুধু ঢাকা নয়, এখন জেলা-উপজেলা পর্যায়েও পুকুর বা জলাধার ভরাট করে পরিকল্পনাহীন ভবন উঠেই চলেছে। নগরগুলোর প্রতিটি ভবন পরিকল্পিত না হলে এবং এলাকাগুলোতে সবুজের ভারসাম্য আনা না হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক গবেষণা বলছে, ক্রমেই জলবায়ু পরিস্থিতি উষ্ণ হচ্ছে। সব ঋতুতেই তাপমাত্রা আগের চেয়ে বাড়ছে। ৪০ বছরে দেখা গেছে প্রাক-বর্ষা, বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী তিন সময়েই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৯, শূন্য দশমিক ৩৩ এবং শূন্য দশমিক ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। শুধু শীতকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গেছে শূন্য দশমিক ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে চারটি কালেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে। দেখা গেছে, ঢাকাসহ আট বিভাগেই বর্ষাকালে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে খরাপ্রবণ রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিবহুল সিলেটেও এ সময় তাপমাত্রা বেড়েছে একই ধরনের মাত্রায়। ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির এ হার ছিল শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে তাপপ্রবাহ শুরু হতো মার্চের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। তবে ১৯৯৭ সালের পর থেকে এতে ভিন্নতা দেখা গেছে। এখন দেখা গেছে, এটিও পিছিয়ে যাচ্ছে। এপ্রিল ও মে মাসজুড়েই তাপপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এমনকি ২০১০ সালের পর থেকে বর্ষা মৌসুমেও তাপপ্রবাহ বেড়েছে। উত্তর-পশ্চিমের জনপদ রাজশাহীতে দেখা গেছে, ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে বর্ষা মৌসুমে দুই থেকে তিনটি করে তাপপ্রবাহ বয়ে যেত। সেটি ২০১০ থেকে ২০২০ সালের দিকে আট থেকে ১২টি পর্যন্ত হয়ে গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, রংপুর, খুলনাসহ প্রায় সব বিভাগে বর্ষা মৌসুমেও তাপপ্রবাহের সংখ্যা বেড়েছে। চট্টগ্রামে তাপপ্রবাহের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম।

ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, ‘গরমে দেশের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গরমের সময় বাড়ছে। ২০১০ সালের পর ঢাকা বিভাগে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। বর্ষার সময় তাপমাত্রা বাড়ছে সারা দেশে। গত ১০-১২ বছর ধরে তাপপ্রবাহ বেড়েই চলেছে। দেশে তাপদাহ আগে এপ্রিল-মে মাসে অনুভূত হতো এবং জুনে বৃষ্টি শুরু হলে ধীরে ধীরে তা কমে যেত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে আগস্ট পর্যন্ত তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ফাতিমা আক্তার বলেন, ‘সারা বছরের বৃষ্টিপাতের ১০ শতাংশ বৃষ্টি হয় গ্রীষ্মে। এবার এখনো সেভাবে বৃষ্টি হয়নি। প্রতি বছর এপ্রিলে যে পরিস্থিতিতে কালবৈশাখী সৃষ্টি হয় এবার আমরা তা পাচ্ছি না। এ কারণে গরমটা বেশি অনুভূত হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন তো আছেই। মনুষ্যসৃষ্ট কারণ যেমন, গাছপালা কেটে ফেলা, গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলাশয় ভরাটের কারণেই দিন দিন তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের কৃষি এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর পড়ছে। ফলন বিপর্যয় হতে পারে। আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা, অবকাঠামো ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে ভবিষ্যতে।’

তিনি বলেন, ‘উষ্ণ আবহাওয়া কখনো সুফল বয়ে আনে না। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড়সহ দুর্যোগ বেশি হবে। আমরা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আছি, তাই কিছুটা গরম সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে আমাদের। এখন যেভাবে মাত্রাতিরিক্ত তাপ দেখা যাচ্ছে তা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে সংক্রামক রোগব্যাধি বেড়ে যাবে, পেটের পীড়া হতে পারে। খাবার দ্রুত পচে যাবে।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত কালবেলাকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক ঘটনা ঘটছে। আগের চেয়ে গরমের ব্যাপ্তিকাল বেড়েছে। গত বছর আমরা দেখেছি, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি হয়নি।

ভূগর্ভস্থ পানি পেতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবে সবকিছুর জন্য একমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী নয়। এখন সবার পকেটে মোবাইলে ওয়েদারের অ্যাপ আছে। মোবাইলে দেখা যাচ্ছে, তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি, আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে ৩৮ ডিগ্রি। ৪ ডিগ্রির তফাত। তারা মাপছে আগারগাঁওয়ে সেখানে একরকম গরম, আর আমি মহাখালীতে আছি সেখানে গরম বেশি।’

তিনি বলেন, ‘যারা নিম্নআয়ের মানুষ, তাদের দিক থেকে চিন্তা করলে ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ। তাই সরকারের দিক থেকে এখন নতুন কিছু চিন্তা করার সময় এসেছে। আমরা স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থার একটু পরিবর্তন ঘটিয়ে, এ নিম্নআয়ের মানুষের ক্ষেত্রে রাত্রিকালীন কাজের সুবিধা আরও বাড়াতে পারি কি না, সেটা ভেবে দেখতে হবে। এর ফলে হয়তো বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ হবে। কিন্তু ভালো ফলাফল এবং নাগরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। এ ধরনের তাপপ্রবাহের মধ্যে কোনোভাবেই অকারণে বাইরে যাওয়া উচিত হবে না। উন্মুক্ত স্থানে বা অপ্রয়োজনে বাইরে গেলে নিজের ক্ষতি ডেকে আনা হবে এক্ষেত্রে।’

তীব্র তাপদাহের এমন পরিস্থিতিতে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। কৃষিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. কামরুজ্জামান মিলন বলেন, ‘উষ্ণ আবহাওয়ায় ভবিষ্যতে অস্বস্তি আরও বাড়বে। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে গেলে যে ধান পরাগায়ন পর্যায়ে ফুল এসেছে, সে ধানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চিটা হয়ে যাবে। তবে এ বছর বেশিরভাগ ধানের ওই অবস্থা পার হয়েছে। কিছু কিছু অঞ্চলে যারা দেরিতে চাষ করেছেন, এ অবস্থায় তাদের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গত বছরও এ ক্ষতি হয়েছিল। ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সেবার অনেক কৃষকের ধান পুড়ে গিয়েছিল। এ বছর আমাদের পরামর্শ ছিল, তাপপ্রবাহের কারণে কিছু ধানক্ষেতে পানি রাখার। এ কারণে কৃষকের সেচের খরচ বেড়ে যাবে।’

অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক ও দিনমজুররা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন। হিটস্ট্রোকসহ নানা ধরনের প্রাণঘাতী সমস্যা হতে পারে তাদের।

তীব্র গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনাগুলো হলো, তীব্র গরম থেকে দূরে থাকা, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করা, হেপাটাইটিস এ, ই, ডায়রিয়াসহ প্রাণঘাতী পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলা, প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করা এবং ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরা। অধিদপ্তরের পরামর্শ, গরমে কারও ঘাম বন্ধ হয়ে গেলে, বমি বমি ভাব, তীব্র মাথাব্যথা, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সুত্র: কালবেলা

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আশা বাংলাদেশ-গাম্বিয়ার

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া। ...

কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ...

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ায় হবে উন্মুক্ত কারাগার, শিগগির নির্মাণ শুরু

উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ...