প্রকাশিত: ২৭/০২/২০১৮ ৯:৪০ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৬:০৫ এএম

হাসান আল জাভেদ::
প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত করছেন ৮০০ থেকে ১২০০ বিদেশি নাগরিক। সেই সঙ্গে কারণে-অকারণে সেখানে যাওয়া-আসা করছেন বাংলাদেশিরাও। ক্যাম্পে এত দেশি-বিদেশির যাতায়াত কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহারের আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ জন্য পার্বত্য এলাকার মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রে ভিজিট পাস নেওয়া বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি কক্সবাজার জেলায় কর্মরত দুটি গোয়েন্দা সংস্থা এই আশঙ্কার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠায়। গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সারা দিন জনসাধারণের মাত্রাতিরিক্ত যাতায়াতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায়। ওই সব চিঠির আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা দিতে কাজ করছে বিভিন্ন এনজিও। যেগুলোর সঙ্গে আছেন অনেক বিদেশি। একইভাবে মানবতার খাতিরে কিংবা রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে জানতে ক্যাম্পে রহস্যজনকভাবে ঘোরাঘুরি করছেন বিদেশি পর্যটকরাও।

চিঠিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বা উগ্রবাদী কার্যক্রম করা সহজতর। গত আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে ইয়াবা সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে হানাহানি করায় ইতোমধ্যে কয়েকটি খুনোখুনির ঘটনাও ঘটেছে। গত বছর মিয়ানমারে গণহত্যার আগেও ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা আনসারের অস্ত্র লুটসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- করে। বর্তমান এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের পেছনে অর্থায়ন করে দেশি-বিদেশি যে কেউ তাদের ব্যবহার করে সহজেই নাশকতামূলক কর্মকা- ঘটাতে পারে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শীত মৌসুমে কক্সবাজার ভ্রমণের সুযোগে বিদেশি পর্যটকরা অনায়াসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে পড়েন। কোনো ধরনের নজরদারি বা পাহারা ছাড়াই তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আবার ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জরুরি সেবাদানের নামে বাংলাদেশি নাগরিক ছাড়াও এনজিওর ব্যানারে বিদেশি নাগরিকরা সন্দেহজনকহারে যাতায়াত করছেন।

সূত্র বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণে গিয়েও বিদেশিরা সরাসরি স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকসহ যোগাযোগ করে থাকেন। এতে পার্বত্য এলাকায় অভ্যন্তরীণ সমস্যাসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পার্বত্য তিন জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে বিদেশি নাগরিকদের পূর্বানুমতি ছাড়া ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও সেভাবে বিদেশিদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (বদলিকৃত, বর্তমানে যুগ্মসচিব) মো. আলী হোসেন বলেন, দেশি-বিদেশি সবাই মিলেই রোহিঙ্গা সংকট উত্তরণ করতে হবে। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন ৮০০-১২০০ বিদেশির যাতায়াতের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এ ছাড়া ভ্রমণকারী বিদেশিরাও ক্যাম্পে ঢুকছেন। এ অবস্থায় আমি অভিযানও চালিয়েছি।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এতসব বিদেশি প্রবেশে এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে না হলেও ভবিষ্যতে বিষয়টি ভাবতে হবে। তবে সব কিছু কেন্দ্রকেই (মন্ত্রণালয়) সিদ্ধান্ত নিতে হবে।সুত্র: আমাদের সময়

পাঠকের মতামত