ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৪/০৯/২০২৩ ৫:৪২ পিএম

এম.এ আজিজ রাসেল
পুনরায় চালু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কস্তুরাঘাট। কক্সবাজার পৌরসভার বাস্তবায়নে ঘাটটি অত্যাধুনিকভাবে চালু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শেষে বদরমোকাম এলাকা থেকে বাঁকখালী নদীর খনন কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমার জন্ম থেকে এই ফেরি ঘাটটি দেখছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাঁকখালী নদী খনন কার্যক্রম শুরু হবে। শিগগিরই একটি আধুনিক জেটি নির্মাণ করা হবে।”

জানা যায়, প্রায় দেড় যুগ আগে একটি অসাধু সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় বন্ধ হয়ে যায় কক্সবাজার—মহেশখালীর একমাত্র নৌপথ এই ঘাট। ওই সময় ষড়যন্ত্র করে চক্রটি শহরের নতুন বাহারছড়ার বাঁকখালী পয়েন্টে ঘাটটি স্থানান্তর করে। সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় কস্তুরাঘাট। ঘাটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুযোগ লুপে নেয় দখলবাজ চক্র। চক্রটি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করার অপচেষ্টায় মেতে উঠে। এতে সফলও হয় তাঁরা। নদীর কুল ঘেঁষে জেগে উঠা প্যারাবন নির্বিচারে নিধন করে ভরাট করা হয়। ভরাটের পর বিভিন্ন ব্যক্তিকে দখলবাজ চক্রের সদস্যরা নদীর জায়গা প্লট আকারে বিক্রি শুরু করে। ধীরে ধীরে দুই তীর দখল করে গড়ে উঠে চিংড়িঘের, লবণমাঠ, পোলট্রি খামার, চাল ও ময়দার মিল, ঘরবাড়ি—দোকানপাটসহ কয়েক শ স্থাপনা। অবৈধ দখলদারের কবলে পড়ে স্রোতস্বিনী এ বাঁকখালী নদী হারিয়েছে তার পুরনো ঐতিহ্য আর নাব্যতা। তবে জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় দখলমুক্ত হয়েছে নদীর জায়গা।

অপরদিকে নতুন বাহারছড়া পয়েন্টের ঘাটটি জেলা প্রশাসনের স্থানীয় মন্ত্রণালয় শাখার মাধ্যমে খাস কালেকশন করা হচ্ছে। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে এভাবে চলছে। জেলা প্রশাসনের লোকজন এই প্রক্রিয়া দেখাশোনা করছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানী ও ভোগান্তি পোহাচ্ছে দু’পাড়ের মানুষ। অবশেষে কস্তুরা ঘাট পুনরায় চালুর উদ্যোগের খবরে স্বস্তি ফিরেছে দুই পাড়ের মানুষের মাঝে। ঘাটটি নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

কস্তুরাঘাট এলাকার প্রবীণ ব্যবসায়ি আবদুস সালাম বলেন, “আমি ৪০ বছর ধরে কলার ব্যবসা করছি এখানে। প্রায় ২ যুগ আগে আমরা কস্তুরাঘাট রাস্তার পাশ থেকেই নৌকা দিয়ে মালামাল ওঠানামা করেছি। ওইসময় মহেশখালী, খুরুশকুল, সোনাদিয়সহ অনেক এলাকা থেকে মালামাল আসতো। কিন্তু এখন দেখছি সেই কস্তুরাঘাটের জমি দখল হয়ে গেছে। এটি চালু হলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারতার পাশাপাশি প্রাণ ফিরবে কস্তুরাঘাট এলাকার।”

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব সাংবাদিক এইচ,এম নজরুল ইসলাম বলেন, “শৈশব থেকে দেখেছি বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় যাত্রীবাহি বড় বড় লঞ্চ—স্টীমার ভীড় করতে। জোয়ারের সময় পানি শহরের বাজারঘাটায় ঢুকে পড়ত। চট্টগ্রাম—কক্সবাজার নৌপথে প্রতিদিনই যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানের যাতায়াত ছিল লক্ষনীয়। নদীকে কেন্দ্র করে একসময় গড়ে উঠেছিল বাণিজ্যিক কেন্দ্র। কিন্তু হঠাৎ ঘাটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দখল উৎসবে মেতে উঠে দখলবাজ চক্র। ঐতিহ্যবাহী ঘাটটি আবারও চালু করার উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। ঘাটের পাশে সরকার কক্সবাজার—খুরুশকুল সেতু নির্মাণ করেছে। সেতু ও ঘাটের সম্মিলনে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। পাশাপাশি পর্যটনের নতুন দুয়ার খুলবে। এছাড়া বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত রাখতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন—বাপা কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, “এক সময় বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে উৎপত্তি হয়ে কক্সবাজার জেলা শহরকে প্রাণবন্ত করে রেখেছিল এই বাঁকখালী নদী। কিন্তু ভরাট—দখলে সংকূচিত হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী এ নদীটি। তাই কস্তুরাঘাট চালু হলে দখলবাজদের দৌরাত্ম্য কমবে। পাশাপাশি নৌপথে মানুষের ভোগান্তিও রোধ হবে।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, “এই নদীর অবস্থা ঢাকার বুড়িগঙ্গার চেয়েও ভয়াবহ। চোখের সামনে ভূমিদস্যুরা নদীর তীর দখল করে নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। তবে প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি নদীর জায়গা দখলমুক্ত করায়। শুনেছি এখানে একটি ঘাট ছিল। যেখানে বড় বড় লঞ্চ ও স্টীমার ভিড়ত। ঘাটটি চালু হলে নদী ফিরে পারে তাঁর পুরোনো রূপ।

পাঠকের মতামত

এমএসএফের প্রতিবেদন৮৪% রোহিঙ্গার আশঙ্কা—মিয়ানমারে ফেরা নিরাপদ নয়

ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস/মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ারস (এমএসএফ)-এর নতুন একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, মিয়ানমারে চরম সহিংসতার ...