প্রকাশিত: ৩১/১২/২০১৭ ৯:০৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৮:৪১ এএম

নিউজ ডেস্ক::
আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে মানুষের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়, মানুষের কল্যাণে কাজ করে। মানুষের জীবনে শান্তি দেখা দেয়। তাই অতীতে যেভাবে ভোট দিয়েছেন, সেভাবে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মানুষের সেবা করার সুযোগ দিন।

রোববার যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বেলন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়ন করে। সেখানে বিএনপি-জামায়াত জোট কী করে? তারা কেবল মানুষ হত্যা করে, খুন করতে পারে। দুর্নীতি-দখল-লুটপাট করতে পারে। আর আওয়ামী লীগ দেশে শান্তি দেখতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই এদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশে কোনো দারিদ্র থাকবে না। দেশের উন্নয়ন হবে। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীন করেছে। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। বিজয়ী দেশ হিসেবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এদেশের মানুষ কারও কাছে ভিক্ষা না করে মাথা উঁচু করে চলবে। তার সরকার দেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপবাদ দেওয়া হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম, কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমি শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি কোনো দুর্নীতি করতে আসিনি। আমি এসেছি মানুষের কল্যাণ করতে। অথচ বিশ্বব্যাংক মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করবো। এখন পদ্মায়, রেল সেতুও করা হচ্ছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী জনসভায় উপস্থিত লাখো মানুষের কাছে নৌকায় ভোট দেওয়ার অঙ্গিকার চাইলে জনতা দুই হাত তুলে তার প্রতি সমর্থন জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে দেশ চালায়। তারা বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তুলবে। তারা দেশকে শান্তি-শৃঙ্খলার দেশে পরিণত করবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই সেটা পারে।

সকালে যশোরে পৌঁছে বিমান বাহিনী একাডেমিতে রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ-২০১৭ (শীতকালীন) অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: বাসস।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর যশোর আগমন ও তার জনসভাকে ঘিরে গোটা জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার যশোরে এটি প্রথম জনসভা। এর আগে ২০১২ সালে এখানে সর্বশেষ জনসভায় যোগ দিয়ে যশোরকে দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে যশোর শহর ও সংলগ্ন এলাকা বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। জেলা শহর ও সবগুলো সড়কে ফুল, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি এবং দুই শতাধিক ছোটবড় সুসজ্জিত তোরণে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়। শহরের প্রবেশমুখের প্রতিটি রাস্তায় স্বাধীনতা তোরণ, শেখ রাসেল তোরণ ও শেখ ফজলুল হক মনি তোরণসহ যশোরের প্রয়াত কয়েকজন নেতার নামে তোরণ করা হয়।

জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন মানুষ। যশোর ছাড়াও খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও নড়াইলসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও হেঁটে জনসভায় যোগ দেন তারা। অনেকে নৌকা প্রতীক ও বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে গেয়ে জনসভাস্থল আনন্দমুখর করে তোলেন। দুপুর নাগাদ মানুষের ভিড় জনসভাস্থল ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে জনসভাস্থলের আশপাশের উঁচু ভবনে ভিড় জমান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার সুযোগ করে দিতে শহরের বিভিন্নস্থানে দুই শতাধিক মাইক বসানো হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে বিশাল প্রজেক্টরের সাহায্যে জনসভার কার্যক্রম প্রচার হয়। এসব মাইক ও প্রজেক্টরের সামনেও ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে সকাল ১১টায় জেলা শহরের বিমানবাহিনীর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাটিতে অবতরণ করেন। এরপর বিমান বাহিনী একাডেমিতে রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ-২০১৭ (শীতকালীন) অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরে স্থানীয় সার্কিট হাউজে মধ্যাহ্ন ভোজ ও বিশ্রাম শেষে বিকেল সোয়া ৩টায় জনসভাস্থলে এসে পৌঁছান তিনি। এ সময় জনতা বাধভাঙা উচ্ছ্বাস ও স্লোগানের মাধ্যমে স্বাগত জানান তাকে। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান থেকে ২৮টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস।
জনসভা শুরুর আগে যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান থেকে ২৮টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় বক্তব্য শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় রওয়ানা হন শেখ হাসিনা।

প্রায় ৩৩ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী পঁচাত্তর পরবর্তী স্বৈরশাসকদের দুঃশাসন তুলে ধরে বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল ও হত্যা-ষড়যন্ত্র ক্যুর রাজনীতি শুরু হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান প্রতিরাতে কার্ফ্যু দিয়ে দেশ চালাতো। যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এটাই ছিল তার বহুদলীয় গণতন্ত্র।

পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর বিয়োগান্তক হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা এদেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। আমি মা-বাবা-ভাই সবাইকে হারিয়েছি। আমার চাওয়া-পাওয়া কিংবা হারাবার কিছুই নেই। আমার জীবনে একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের কল্যাণ করা।

২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাস-দুর্নীতি-লুটপাট, হত্যা ও অত্যাচার-নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে এবং দেশের সম্পদ গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে দেশে সন্ত্রাস-দুর্নীতি-জঙ্গিবাদ ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সারাদেশে একই দিনে পাঁচশ জায়গায় বোমা হামলা, বাংলা ভাই সৃষ্টি- এগুলোই করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার এক ছেলে ঘুষ দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। আমেরিকার এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। আরেক ছেলে সিঙ্গাপুরে টাকা পাচার করেছে। সেই টাকা সরকার ফেরৎ এনেছে। এই গেল দুই ছেলে। মা-ও কম যান না। মা খালেদা জিয়া এতিমের নামে টাকা এনে টাকা মেরে খেয়েছেন। যারা এতিমের টাকা মেরে খায়, জনগণের টাকা বিদেশে পাচার করে- তারা আবার কোন মুখে কথা বলে?

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি বাঙালি জাতিকে বিশ্বে মর্যাদা এনেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। যশোরের উন্নয়নে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যশোরবাসীর কল্যাণে অনেকগুলো উন্নয়নে অনেকগুলো প্রকল্প উপহার দিয়ে গেলাম। গত নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনের সবকটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী করায় যশোরবাসীকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলম মিলনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, মাহবুবউল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, বীরেন সিকদার, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, পঙ্কজ দেবনাথ, নাজমা আক্তার, সাইফুর রহমান সোহাগ, শেখ আফিল উদ্দিন, কামরুন্নাহার লায়লা জলি, কাজী নাবিল আহমেদ, রনজিৎ রায়, মনিরুল ইসলাম মনির, স্বপন ভট্টাচার্য, অ্যাডভোকেট জহুর আহমেদ, আবদুল মজিদ, জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।

পাঠকের মতামত

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ভল্ট ঘিরে রেখেছে পুলিশ

রাজধানী‌র ধোলাইখা‌লে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এ‌নে‌ছে ফায়ার সা‌র্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ব্যাংকের ...

‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার রাজি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণ খুঁজতে হবে’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ...