প্রকাশিত: ২৫/০৯/২০১৬ ৭:১৮ এএম

nc-news-bnp-24-09-2016শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি ::
একই দলের নেতা। একজন ম্য ম্যা চিং সমর্থিত অন্যজন সাচিং প্রু জেরীর। তাদের নিয়েই চলছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বিএনপি। দীর্ঘদিন ঐক্যবদ্ধ থাকলেও শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ম্যা ম্যা চিং এর সফরকে কেন্দ্র করে নাইক্ষ্যংছড়ি জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তে এভাবেই আর্বিভাব ঘটল তাদের। যার কারণে আবারো গ্রুপিংয়ের রাজনীতি শুরু হয়েছে উপজেলা বিএনপিতে। শনিবার ২৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী বিষয়ক সম্পাদক ম্য ম্যা চিং এর সফরকে কেন্দ্র করে এ গ্রুপিং লক্ষ্য করা যায়। বন্ধনে ঘুরপাক খাওয়া উপজেলা বিএনপির এ কর্মকন্ডকে সমন্বয় করেই গ্রুপিং করছে বলে মনে করছেন সচেতন জনগণ।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেত্রী ম্য ম্যা চিং ‘ঈদ শুভেচ্ছা’র অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই লামা-আলীকদম শেষে নাইক্ষ্যংছড়ি সফর করেছেন। তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে বিভক্ত তৈরী হয় জেলা-উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে। তাঁর সফরে উপজেলা বিএনপির কেউ অংশ না নিলেও উপজেলার দায়িত্বরত নেতাদের অংগ সংগঠনে থাকা স্বজনরা ঠিকই উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। শনিবার নাইক্ষ্যংছড়ি জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় অনুষ্ঠানে কয়েকজন বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার স্বর্থে ক্ষোভের সাথে এ প্রতিবেদককে জানান- উপজেলা বিএনপি নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাচিং প্রু জেরী ও ম্য ম্যা চিং গ্রুপে একই পরিবারের সদস্যরা লিয়াজোর ভিত্তিতে রাজনীতি করা মানেই হচ্ছে বিএনপিকে ধ্বংস করা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল কাসেম। তিনি সাচিং প্রু জেরীর নিকটজন হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁর ছোট ভাই উপজেলা ছাত্রদল সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুল আবছার সোহেল বর্তমানে ম্য ম্যা চিং গ্রুপের হয়ে রাজনীতির মাঠে নতুন করে পরিচয় হয়ে উঠেছে। জেলা মহিলাদল নেত্রী হামিদা চৌধুরীর ছেলে আবু সুফিয়ান চৌধুরী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে মা হামিদা চৌধুরী সাচিং প্রু জেরী গ্রুপ নামে পরিচয় থাকলেও ছেলে করছেন ম্য ম্যা চিং এর রাজনীতি। এছাড়াও যুবদল সভাপতি মোঃ শাহাজাহান-সোলেমান সও, জিয়াবুল হক, হোসাইন, পারভেজসহ উপস্থিত থাকা একাধিক নেতাকর্মীর স্বজনরা দুই গ্রুপে লিয়াজোর ভিত্তিতে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তবে বিষয়টিকে লিয়াজো নয় দাবী করে, আবু সুফিয়ান চৌধুরী, নুরুল আবছার সোহেল, জিয়াবুল হক জানান- ম্য ম্যাং চিং কেন্দ্রী বিএনপির নেত্রী। তার সফরে যারা উপস্থিত হননি তারাই গ্রুপিং করছে বলে অভিযোগ তোলেন।

এদিকে শনিবার নাইক্ষ্যংছড়ি সফরে ম্য ম্যা চিং বলেন- পরিবারের টানের চেয়ে জনগণের টান আমার কাছে অনেক বেশি। সাচিং প্রু জেরীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন- ‘একটা প্রবাদ আছে জন জামাই-ভাগ্না তিন নয় আপনা’। কিন্তু আমি উনাকে আপন মনে করি বলেই ১৯৯৬ সনে আমার জেলা সভাপতিত্ব পদ ছাড় দেওয়া হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির মাটি বিএনপির ঘাটি। এই ঘাটিতে রাজনীতি করে আজকে যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন তারা আমারই সৃষ্টি। গ্রুপিং না হওয়ার জন্য নিশ্চুপ থেকেছেন দাবী করে ম্য ম্যা চিং আরো বলেন- ক্ষমতা পেয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি-লামা-আলীকদমকে তছনচ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে বিএনপির একটি পক্ষ নিজেদের পদ রক্ষার জন্য আন্দোলন করছে। এ জন্য দলের মধ্যে নেকড়ে বাঘের ভূমিকায় থাকা নেতাদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানান তিনি। কেন্দ্রীয় বিএনপির এ নেত্রী প্রায় ১৮ মিনিটের পুরো বক্তব্য জুড়েই সাচিং প্রু জেরীকে ইঙ্গিত করে আলোচনা করেন। সরকারী বিরোধী আন্দোলন কিংবা সংগঠনে গতিশীলতা আনার পরামর্শ ছিলনা। যার কারণে হতাশ হয়েছেন উপস্থিত থাকা কর্মীরা।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ও বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মাবুদ,বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক বান্দরবান পৌর মেয়র জাবেদ রেজা,প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন তুষার জেলা যুবদল আহ্বায়ক আবু বক্কর, যুগ্ন আহ্বায়ক আবিদুর রহমান, আবছার উদ্দিন, সেলিম উদ্দিন, সিরাজ, সালেহ, কাশেম, রিপন, রশিদ, বশির, কফি, রকি, সাবিকুর রহমান জুয়েল, ইয়াছিনুল হক রিপন, আলী হায়দার, হারুনুর রশিদ, ফরহাদ হোসেন, রণি সুশীল, মোরশেদ বিন ওমর, মো: জয়নাল, শহিদুল ইসলাম, মো: রাসেল চনু মং মার্মা, রশিদ, রাজু কর্মকর্তা, মমতাজ উদ্দিন, আয়েশা ছিদ্দিকা, পম্পি সেন, নুরুল ইসলাম, কামাল হোসেন, ফরিদ উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি আবু সুফিয়ান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আবু কাইছারসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মীরা অংশ নেন বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বিএনপির এ নেত্রীর সফরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে শুরু করে প্রভাবশালী কোন নেতাই উপস্থিত ছিলেন না।

পাঠকের মতামত