প্রকাশিত: ২১/১১/২০১৬ ৮:০১ এএম

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপির প্রস্তাবকে অনেকেই আগামী নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণের ইঙ্গিত মনে করছেন।

বিএনপি বলছে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশর্ত একটি স্বাধীন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। সে লক্ষ্যেই তাদের প্রস্তাব। তাদের কথা আছে নির্বাচনকালীন সরকারের চেহারা কী হবে তা নিয়েও।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অবশ্য বিএনপির প্রস্তাবকে অন্তঃসারশূন্য আখ্যা দিয়ে বলেছে, ইসি  পুনর্গঠন থেকে আগামী নির্বাচন—সবই হবে সংবিধানের আলোকে।

সোমবার দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবদন হুবহু তুলে ধরা হলো।

সরকারের মনোভাব দেখে প্রয়োজনে ‘ছাড়’ দেবে বিএনপি

ইসি পুনর্গঠন নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব বা রূপরেখাই বলে দিচ্ছে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে বিএনপি। তবে কি ইসি পুনর্গঠনই শেষ কথা বিএনপির কাছে?

বিএনপির দলীয় প্রধানের প্রস্তাবে যা আছে আর দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যে ধারণা মিলেছে তাতে এটিকে তাঁরা ‘টেস্ট কেস’ হিসেবেই দেখছেন। ইসি পুনর্গঠন ‘গ্রহণযোগ্য’ হলে এর পরের প্রশ্ন কী ধরনের সরকার কাঠামোয় নির্বাচন চায় বিএনপি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নাকি তাদের বাদ দিয়ে—এ প্রশ্নের সুরাহা দলটির মধ্যে এখনো হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ প্রশ্নে আসলে সরকারের সদিচ্ছা বা মনোভাব দেখেই দলটি সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারি মনোভাব পজিটিভ হলে সে ক্ষেত্রে বিএনপি ‘ছাড়’ দিয়ে হলেও নির্বাচনে যাবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

বিএনপি নেতাদের মতে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন প্রশ্নে বিএনপির উত্থাপিত প্রস্তাবটি যদি সরকার একেবারে উড়িয়ে দেয় তাহলে বুঝতে হবে; সরকার আগের পথেই অর্থাৎ ফের আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকেই হাঁটছে। কিন্তু ইসি পুনর্গঠন প্রশ্নে বিএনপির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে সরকার আমলে নিলে সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিএনপি কঠোর অবস্থানে যাবে না।

সরকার সত্যি সত্যি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়—এমন বার্তা পেতে চায় বিএনপি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কর্মকাণ্ডে আন্তরিকতা প্রকাশ পেলে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে মেনে নেওয়াও কঠিন নয়—এমনটিও ভাবনায় আছে বলে দলটির নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান।

এদিকে ইসি পুনর্গঠন ইস্যুটি সচল রাখতে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করছে বিএনপি। ইসি পুনর্গঠন প্রশ্নে গত শুক্রবার খালেদা জিয়ার উত্থাপিত প্রস্তাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা উল্লেখ নেই। তার বদলে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারে’র কথা বলা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারকে ‘ছাড়’ দেওয়ার বার্তা যেমন দেওয়া হয়েছে; তেমনি বোঝানো হয়েছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে বিএনপি ‘অনড়’ নয়।

যেমনটি অনড় ছিল তারা আগের নির্বাচনের ক্ষেত্রে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের গত কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যকে তারা ‘ইঙ্গিতপূর্ণ ও ইতিবাচক’ বলেও মনে করে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচন বিতর্কিত হোক তা তিনি চান না। ফলে প্রথম প্রস্তাবের (ইসি পুনর্গঠন) প্রতি সরকার ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করলে দলটির দ্বিতীয় প্রস্তাব অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে ইতিবাচক আরো নানা প্রস্তাবনা আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি চরম অবস্থানে যাবে না।

দলটির নীতিনির্ধারকরা এও মনে করেন, কৌশলগত কারণে বিএনপির আগামী নির্বাচন বর্জন করা যেমন কঠিন; তেমনি সরকারের পক্ষেও কঠিন বিগত ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ীও বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া বাধ্যতামূলক—এ বিষয়টিও দলটির বিবেচনায় আছে। ওই আদেশের ৯০‘জ’-এর ‘ঙ’ ধারা অনুসারে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল পরপর দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে ইসি সে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিস্থিতি হলেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। ইসি পুনর্গঠনের প্রস্তাবও সেদিকে লক্ষ রেখেই দেওয়া হয়েছে। ফলে সরকার কী করে বা তাদের সদিচ্ছাই বা কতটুকু বিএনপির কাছে এখন এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার আন্তরিক হলে অনেক সংকটের সমাধান আলোচনার টেবিলেই হতে পারে। কিন্তু কোনো ইস্যুতে ছাড় দেওয়া না দেওয়ার বিষয়টি এখনই বলা যাবে না। পরিস্থিতিই সেটি বলে দেবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বল এখন সরকারের কোর্টে। সরকার সদিচ্ছা দেখালে বিএনপিও যেকোনো ইস্যুতে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো নাকি অন্য কোনো ইস্যুতে সেটি সময় বলে দেবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া পরের কথা। আগে জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা জরুরি।

তার মতে, ইসি পুনর্গঠন প্রশ্নে বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী এখন বাছাই কমিটিতেই যদি সরকার গলদ তৈরি করে, একতরফা নিয়োগ দেয় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মত না নেয় তাহলে তো অঙ্কুরেই সব বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাই দেখা যাক সরকার কী পদক্ষেপ নেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এমন পরিস্থিতি হলে বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার কোনো কারণ নেই।

জানা গেছে, নির্বাচনে যাওয়ার আগাম পদক্ষেপ বা প্রস্তুতি হিসেবে দলটি  সরকারকে কিছুটা চাপের মধ্যেই রাখতে চায়। উদ্দেশ্য হলো, ইসি পুনর্গঠনসহ নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামোর বিষয়ে যতটা পারা যায় দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা।

আর এ জন্যই ইসি পুনর্গঠনের প্রস্তাবের ইস্যু আলোচনায় রাখতে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচিও পালন করবে। সভা-সেমিনার আয়োজনের পাশাপাশি ঢাকাস্থ কূটনীতিকদের এ ইস্যুতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শিগগিরই ব্রিফ করবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সম্পাদক ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।

একটি সূত্রের দাবি, ইসি পুনর্গঠনের প্রস্তাবটি বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছেও আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে তার সাক্ষাতের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে।

ইসি পুনর্গঠন সংবলিত ১৩ দফা প্রস্তাব গত শুক্রবার জনসমক্ষে উপস্থাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন মহলে নানামুখী ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাত্ক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এ প্রস্তাবকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ বলে অভিহিত করলেও বিষয়টি একেবারে নাকচ হয়ে গেছে বলে বিএনপি মনে করে না। বরং সুধীসমাজের মধ্যে এ প্রস্তাব নিয়ে এখনো নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে।

এ অবস্থায় বিএনপি মনে করছে, ইসি পুনর্গঠনের প্রস্তাব যেমন সাড়া ফেলছে তেমনি তাতে জনসমর্থনও মিলেছে।

সংবিধানের বাইরে কোনো প্রস্তাব মানবে না আওয়ামী লীগ

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে সংবিধান নির্ধারিত পথেই হাঁটতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রস্তাব আমলে নেবে না দলটি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, গত নির্বাচন যে ব্যবস্থায় এবং যে পদ্ধতিতে হয়েছে এবারও সেভাবেই হবে। আর সেটি মেনে নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্যই বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করছে। তাদের কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা না হলেও আগামী নির্বাচন বর্জন করবে না বিএনপি।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে অস্তিত্বের সংকটে আছে বিএনপি। সেই একই কাজ (আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে) আবারো করলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও বাতিল হবে বিএনপির। তাই দৃশ্যত বেকায়দায় থাকা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে বড় কোনো বেগ পোহাতে হবে না আওয়ামী লীগকে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্রগুলো জানায়, ২০১২ সালে যেভাবে গঠন হয়েছিল সেই একই পদ্ধতিতে এবারো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব। বিএনপির প্রস্তাবে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে উন্নততর কিছু নেই। ফলে বিএনপির এ প্রস্তাবকে আমলে নেওয়া হবে না। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের জন্য ক্ষমতাসীনরা উদ্যোগী হবে না।

সংবিধান নির্ধারিত উপায়েই নির্বাচনের বন্দোবস্ত করবে সরকার। গতবারের মতো এবারো নির্বাচনকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। এর বাইরে বিএনপিকে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। সে নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হোক। সে জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষে আমরা। কিন্তু সেই নির্বাচন কমিশন গঠন তো সাংবিধানিক উপায়ে হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাকিয়ে ছিলাম খালেদা জিয়া একটি গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব দেবেন। কিন্তু তিনি যে প্রস্তাবগুলো দিলেন তা বাস্তবসম্মত নয়। নির্বাচনকালে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রস্তাব উনি করেছেন এর পেছনে ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধি আছে বলে মনে করি।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন সেগুলো বিবেচনার যোগ্য নয়। এগুলোর বেশ কয়েকটি অসাংবিধানিক ও দেশবিরোধী। তবে তাদের প্রস্তাব দেখে মনে হয়েছে তারা আগামী নির্বাচনে আসতে চায়। তারা নির্বাচনে আসতে চাইলে আসুক, সেটি ভালো। তারা এখন যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছে তেমনি অন্য সব অবাস্তব দাবি থেকেও সরে আসবে, এটাই আমরা আশা করি। তাদের বলব, সাংবিধানিক উপায়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবে হবে। এ নির্বাচনে সকলকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাই। আমরা চাই সকলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে নতুন কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলে এই প্রস্তাবে গ্রহণ করার কিছু নেই।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দায়িত্ব মহামান্য রাষ্ট্রপতির। তিনি তার সুবিবেচনা দিয়ে ঠিক করবেন কার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তবে খালেদা জিয়া যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন সেগুলোর কিছু অলীক, আর কিছু ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। আর জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিষয়গুলোতে তো আমাদের কখনোই আপত্তি ছিল না। খালেদা জিয়ার অন্তঃসারশূন্য বক্তব্যের উদ্দেশ্য হলো আগামী নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করা।’

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘খালেদা জিয়া যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন তা বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসার লক্ষণ। এখন তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে কিছু দাবি পূরণ করে জনগণের সামনে নিজেদের একটা কিছু অর্জন দেখাতে চায়। আমরা সেই সুযোগ কেন দেব?’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘যথাসময়ে আগামী নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে বিএনপি আসবে। আমরা যখন নিশ্চিত জানি তারা আসবে তখন নমনীয় হওয়ার দরকার কী?’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগে ওদের (বিএনপি) সঙ্গে আলোচনার জন্য আমরা কী করি নাই? কিন্তু ওরা সাড়া দেয়নি। এখন ওদের মতো করে চাইলে তো আলোচনা হবে না। এখন ওদের নির্বাচনে না আসার কোনো বিকল্প নেই। দল টিকিয়ে রাখতে হলে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতেই হবে।’

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলোর মতে, খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে। তিনি নির্বাচনে প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সিভিল প্রশাসনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চান। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে যেসব নির্বাচনী কর্মকর্তা বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে নির্বাচনের কাজের বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়া প্রেষণে নিযুক্ত কর্মকর্তাদেরও চিহ্নিত করার কথা বলেছেন। এগুলো তাঁর ষড়যন্ত্রের অংশ। চার দলের আমলে মাঠপর্যায়ে বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মীকে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আগামী নির্বাচনে ওই সব দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিশেষ সুবিধা নিতে চায় বিএনপি। এ জন্য তিনি ওই দাবিগুলো তুলেছেন।

সূত্রগুলোর মতে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে ক্ষমতাসীনদের পছন্দের তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে দায়িত্ব পালন করা একজন সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব। এ বিষয়টি বুঝতে পেরেই খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যুক্ত ছিলেন এমন কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োগ না দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার আগাম ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখতে চাইছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চান না বলে মন্তব্য করেছেন। বিএনপির কোনো কোনো নেতা এ বক্তব্যকে সরকারের নমনীয় হওয়ার লক্ষণ বলে মনে করে থাকতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। শেখ হাসিনা ‘প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চাই না’ মানে গণতান্ত্রিক বিধান অনুসরণ ও একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনে তার আন্তরিকতার ইচ্ছা জানিয়েছেন। এর মানে কারো অযৌক্তিক দাবি প্রধানমন্ত্রী মেনে নেবেন, এমন নয়।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আশা বাংলাদেশ-গাম্বিয়ার

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া। ...

কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ...

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ায় হবে উন্মুক্ত কারাগার, শিগগির নির্মাণ শুরু

উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ...