উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫/০৩/২০২৪ ৯:৫৪ এএম

কক্সবাজারের টেকনাফে অপহৃত পাঁচ কৃষকের মধ্যে চারজনকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীদের স্বজনরা। এখনও জিম্মি অপর কৃষকের মুক্তি জন্য ৫ লাখ টাকা দাবি করেছে অপহরণকারীরা।

কিন্তু পুলিশের দাবি, অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়ে তারা অবহিত নন। উদ্ধার হওয়াদের চোখ-মুখ ও হাত-পা খোলা ছিল।

এদিকে মুক্তিপণের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা কাকে বা কী মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে দুই ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন মুক্তি ব্যক্তি ও তাদের স্বজনরা।

স্বজনদের একটি পক্ষ জানিয়েছে, মুক্তিপণের টাকা শনিবার (২৩ মার্চ) রাতে স্থানীয় একজন ইউপি সদস্যের হাতে দেওয়ার পরেই চারজনকে ছাড়া হয়েছে। অপর পক্ষের দাবি, মুক্তিপণের টাকা পাহাড়ের একটি স্থানে রেখে আসার পর তাদের ছাড়া হয়েছে।

মুক্ত চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিবার টাকা দিয়েছে। মো. জিহানের পরিবার থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।

উদ্ধার বাকি তিনজন হলেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী এলাকার ফকির আহম্মদের ছেলে রফিক, ছৈয়দুল্লাহের ছেলে মো. শামীম ও নুরুল আমিনের ছেলে আব্দুর রহমান। মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে জিহানও একই গ্রামের।

মুক্তদের বর্ণনা অনুযায়ী, দুর্বৃত্তরা ছেড়ে দেওয়ার আগেই তাদের চোখের বাঁধন খুলে দেয়। জিন্মি হওয়ার পর থেকেই তাদের চোখ বেশি ভাগ সময় বাধা অবস্থায় রাখা হয়। কেবল কিছু খাওয়ার সময় খোলা হতো চোখ।

টেকনাফের হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, পুলিশ যে চারজনকে উদ্ধার করেছে তাদের জন্য স্বজনরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে স্বজনরা পরিষ্কার করে কিছুই বলছেন না।

এর আগে জানা গিয়েছিল, শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের শালবন ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পশ্চিমের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে জিম্মি চার কৃষককে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এখনও দুর্বৃত্তদের হাতে জিম্মি রয়েছে একই এলাকার আব্দুর রকিমের ছেলে মোহাম্মদ নুর।

এদিকে অপহরণের ঘটনাটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী শাহ আলম এবং নুরুল আবছারের নেতৃত্বে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেরত আসা চারজনের দুজন। নুরুল আবছার ২০১৬ সালের মে টেকনাফের নয়াপাড়া শালবান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আনসার ক্যাম্পের হামলাকারীদের একজন।

মুক্তিপণের বিষয়টি এখনও পুলিশকে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি।

তিনি জানান, অপহরণের পর পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান শুরু করে। শনিবারও টানা পুলিশ ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালায়। পরে রাতে পুলিশের অভিযানের মুখে দুর্বৃত্তরা চারজনকে ছেড়ে দিয়েছে। অপহৃতদের মধ্যে একজন এখনও জিম্মি রয়েছে। তাকে উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গত ৯ মার্চ টেকনাফ উপজেলার হ্নীলায় অপহৃত মাদ্রাসা পড়ুয়া ছয় বছর বয়সি শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ এখনও উদ্ধার হয়নি। তবে পুলিশ অপহরণ ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্যসহ চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সদর থেকে অপহৃত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রাশিকুল ইসলামকেও এখনও উদ্ধার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এ ঘটনায় র‌্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এনিয়ে গত এক বছরে শুধু টেকনাফে অপহরণের ঘটনা ঘটে ১০৬টি। এর মধ্যে ৫৬ জন স্থানীয় এবং ৫০ জন রোহিঙ্গা। ৫০ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। এ পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি দুই শিশুর। জিম্মি আছে একজন।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...