প্রকাশিত: ১৯/১২/২০১৭ ৮:৪২ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৯:২৪ এএম

নিউইয়র্ক: জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি প্রত্যাহারে নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্র এই ভেটো দেয়। খবর রয়টার্সের।

এর আগে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি প্রত্যাহারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জেরুজালেম সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাব প্রনয়ণ করে। এতে জেরুজালেমের অবস্থানের যে কোনো ধরনের পরিবর্তনের বৈধতা নেই এবং তার পূর্বের অবস্থান সংরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।

সোমবার সেই খসড়া প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের উত্থাপিত হলে তাতে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রদান করে। এরফলে প্রমাণিত হলো বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ-নিন্দা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা একতরফাভাবেই ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছে।

সম্প্রতি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা এই খসড়া প্রস্তাব প্রণয়ণ করেছিল।

এর আগে শনিবার মিশর এই খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল।

আন্তর্জাতিক মতামত উপেক্ষা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি মাসে জেরুজালেমকে ইসলাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তিনি মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে আনারও ঘোষণা দেন।

তার এই ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় ওঠে।

জাতিসংঘের খসড়া প্রস্তাবটিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে ‘আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মধ্য দিয়েই’ জেরুজালেম ইস্যুর সমাধান করতে হবে। এছাড়াও এতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার কথা সরাসরি উল্লেখ না করে ‘জেরুজালেমকে নিয়ে সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।’

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তোপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি আর ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বীকৃতি অসহযোগিতামুলক।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেছেন, জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষা করার বদলে শান্তি নষ্টের চেষ্টা করছে।

নিকি হ্যালে বলছেন, বহুবছর ধরেই জাতিসংঘ ইসরাইলের প্রতি অসংযতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে যা কিনা ক্ষতি এনেছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে থাকতে পারেনা।

পুরো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থান নিলো যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা ও নিন্দা জানানো হয় বৈঠকে।

ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে আবারো বিষয়টির মীমাংসায় দুই দেশের আলোচনার প্রতি জোড় দেন। আর ফরাসী প্রতিনিধি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যেই আরো ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসছে। জরুরি বৈঠকে কার্যত যুক্তরাষ্ট্র সবার প্রতিপক্ষে পরিণত হয়।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে মদদ দেবার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন।

তিনি বলেন, এখানে খারাপ কাজের সহযোগিতাকে স্বীকার করতে হবে। অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের দমন পীড়ন আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আরো উস্কে দিয়েছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শান্তির মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান হারিয়েছে।

তবে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানোন বুধবারে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন।

এদিকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে জেরুসালেমের মার্কিন স্বীকৃতির প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো ফিলিস্তিনে বিক্ষোভ চলছে।

দক্ষিণ ইসরাইলের শহর সেডেরোটে গাযা থেকে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে, অন্যদিকে ইসরাইলি বিমান গাযার কিছু লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে

এদিকে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার জেরে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ বেঁধেছে। অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজায় সংঘর্ষে অন্তত দু’জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদে বলা হয়েছে, গাজায় শুক্রবারের সংঘর্ষে অন্তত দু’জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

রেড ক্রিসেন্ট শুক্রবার জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমে অন্তত দুইশ ১৭ জন আহত হয়েছে। গাজা উপত্যকায় অন্তত ২০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাদের সবাইকে রাবার বুলেট লেগেছে এবং তাদের লক্ষ করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে।

ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা বলছে, তাদের মধ্যে ৫০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি।

তবে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার হ্যারি ফাওসেট জানান, সেখানে বিক্ষোভ অনেকটাই শান্তিপূর্ণ রয়েছে। দু’দিনের মধ্যে আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত।

তিনি আরও জানান, সেখানকার বিক্ষোভকারীদের আবেগ অনেকটাই বেশি। তবে সেখানে ব্যাপক চেঁচামেচি হচ্ছে। ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানো হচ্ছে। জোরে স্লোগান দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়েছে ইসরাইলি সেনারা। গাজাতেও রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে ইসরাইলি সেনারা।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে ফিলিস্তিনিরা। এমনকি ফিলিস্তিনের বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যালয় এবং সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়া হয়েছে

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আসিয়ান

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি ...

ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচির সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ...