প্রকাশিত: ৩০/০৬/২০১৮ ৯:১২ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:২২ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
এক রাজনৈতিক সফরে আজ ঢাকা আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। নির্বাচনী বছরে জাতিসংঘের প্রধান নির্বাহীর বাংলাদেশ সফরটি হবে তিন দিনের। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তার বৈঠক হবে। সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, প্রায় সাত বছর পর জাতিসংঘের কোনো মহাসচিব বাংলাদেশ সফর করছেন। তাছাড়া গুতেরেস মহাসচিব হওয়ার পর এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। এটি রাজনৈতিক সফর হবে জানিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন- গুতেরেসের সফরে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতি, শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ কীভাবে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সেই আলোচনায় বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বিশেষত নির্বাচনটি সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের আকাঙ্ক্ষা, পর্যবেক্ষণ, সুপারিশ ও সহায়তার বিষয়েও কথা হবে। এশিয়ার কয়েকটি দেশ সফরের অংশ হিসাবে ২০১১ সালে তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ওই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেই সময়ের বিরোধী দলের নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। শান্তিরক্ষায় নিহত বাংলাদেশি সৈন্যদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ছাড়াও ঢাকার বাইরে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প ঘুরে দেখেছিলেন তিনি। এবারের সিঙ্গেল কান্ট্রি সফরে আসা গুতেরেসের প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকের সূচি ঠিক হলেও বিরোধী কোনো রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তার বৈঠক হচ্ছে কি না- এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে সফরের দ্বিতীয় তৃতীয় দিনে (২রা জুলাই) কক্সবাজার ক্যাম্পে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এবং শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডিসহ জাতিসংঘের অধীন বিভিন্ন সংন্থার ডজন খানেক কর্মকর্তা ঢাকা আসছেন। ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এরই মধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তারা ২রা জুলাই বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন।

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সরব গুতেরেস ২০০৮-এ সর্বশেষ কক্সবাজার ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন: এদিকে কূটনৈতিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সংস্থাটির শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র প্রধান থাকাকালে ২০০৮ সালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছিলেন। রোহিঙ্গা সংকটের একটি সম্মানজনক এবং টেকসই সমাধানে বরাবরই তিনি সোচ্চার। গত বছর আগস্টে রোহিঙ্গা সংকট ভয়াবহ রূপ নেয়ার পর থেকে অ্যান্তোনিও গুতেরেজ পুঞ্জীভূত ওই সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের প্রতি বিরামহীনভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল চেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধসহ রাখাইনে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বানও জানিয়ে আসছেন তিনি। এবারের সফরে ২রা জুলাই বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরজমিনে দেখবেন তিনি। ক্যাম্প সফরকালে তার সঙ্গে থাকছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের এটি দ্বিতীয় সফর। গত বছর বিশ্ব দারিদ্র্য নিরসন দিবস পালনের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাকে নিজ দেশের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি হলেও এখনো পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো উপযুক্ত পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি মিয়ানমারে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে এই দুই আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র আরো জানায়, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও বাংলাদেশের পক্ষে তাদের ভরণপোষণ ও যত দিন এখানে অবস্থান করবেন ততদিন সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তাদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা এগিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাংকও রোহিঙ্গাদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিব রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জন্য মিয়ানমার সামরিক জান্তার কঠোর সমালোচনা করেন এবং রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য বিশ্ববাসীকে পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের উদারতা এবং রোহিঙ্গাদের আরো অনুদানের প্রয়োজনীয়তার কথা বিশ্ববাসীকে জানাবে গুতেরেস: ওদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর বিষয়ে তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন- মহাসচিব তার সফরকালে ২০১৭ সালে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থীদের আশ্রয়দানে বাংলাদেশের উদারতা এবং আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়েরর আরো অনুদানের প্রয়োজনীয়তার কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন। তিনি বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গাদের অবস্থার পর্যালোচনা করবেন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদার সঙ্গে তাদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কে অগ্রগতি মূল্যায়ন করবেন। নিউইয়র্ক জানিয়েছে- জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপো গ্র্যান্ডি ছাড়াও জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক ড. নাতালিয়া খানেম সঙ্গে থাকছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সফরের আরো লক্ষ্য হচ্ছে- রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় আরো সংলাপের ব্যবস্থা করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং রোহিঙ্গাদের অবস্থার ব্যাপক সমাধানের জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করা। গত ৬ই এপ্রিল মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টেলিফোনে আলাপকালে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমারের চুক্তি বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দিতে পারে। বাংলাদেশ সফর শেষে আগামী ৩রা জুলাই নিউইয়র্কে ফেরার কথা রয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিবের।

আসছেন রেডক্রসের প্রেসিডেন্টও: এদিকে ১লা জুলাই রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে আজই বাংলাদেশে আসছেন আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠান- ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি অব দ্যা রেড ক্রসের (আইসিআরসি) প্রেসিডেন্ট পিটার মুরার। কক্সবাজারে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শনের এক মাস পর এখানে আসছেন তিনি। বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যাওয়ার কথা রয়েছে আইসিআরসি প্রেসিডেন্টের। ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। আইসিআরসি জানায়, রোহিঙ্গা সমপ্রদায় এবং মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবেন মুরার। আইসিআরসি প্রেসিডেন্ট জানান, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা লাঘবে টেকসই সমাধানের জন্য মানবাধিকার, উন্নয়ন সংস্থা এবং কর্তৃপক্ষের জরুরি অগ্রগতির ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক।’

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের ফের ...