প্রকাশিত: ২৪/০২/২০১৮ ১২:৪৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৬:১২ এএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::

পুলিশ চেকপোস্টে হামলার দায়ে চার রোহিঙ্গাকে মৃত্যদণ্ড দিয়েছে মায়ানমারের একটি আদালত।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, শুক্রবার দুপুরে রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার একটি বিশেষ আদালত এ রায় ঘোষণা করে।

দন্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের ৯ই অক্টোবর এনগো খোরা পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালায় তারা। এতে নিহত হয় দুই নিরাপত্তা রক্ষী। একই মামলায়, ১০ থেকে ২০ বছর করে, বিভিন্ন মেয়াদে আরো ২৬ রোহিঙ্গাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছে ১৫ জন।

রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে, এমন অভিযোগ এনে, ২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযানে চালানো হয়। এতে নিহত হয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা, আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৯ লাখেরও বেশী মানুষ।

গত বছর আগস্ট মাসের শেষ দিকে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ সরকারের হিসেব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখেরও বেশি।

রোহিঙ্গা ‘গণহত্যার খবর প্রকাশের কারণে’ রয়টার্সের সাংবাদিক আটক

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মায়ানমারে গণহত্যার উপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে তাদের দু’জন সাংবাদিককে আটক করে রাখা হয়েছে।

(সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের নিচের দিকে নিহতদের মরদেহের ছবি রয়েছে, দূর্বলদের না দেখার অনুরোধ করা হল)।

এই দুজন সাংবাদিক অনুসন্ধান করে দেখেছেন বর্মী সৈন্যরা গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে কিভাবে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে।

এরকম একটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থাটি। খবর বিবিসির

অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট বা সরকারি গোপনীয়তা আইন ভঙ্গ করার অভিযোগে সাংবাদিক ওয়া লো এবং চ সো উ-কে গত কয়েক মাস ধরে মায়ানমারের কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থাটি বলছে, এই দু’জন সাংবাদিক গত বছর রাখাইন রাজ্যে ১০ জনকে হত্যার ঘটনা তুলে ধরেছেন। রয়টার্স বলছে, তাদের সাংবাদিকরা জনস্বার্থে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

সংবাদ সংস্থাটির প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে এডলার বলেছেন, ‘তাদেরকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন আমরা প্রথমে তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেছি। কিন্তু তাদের আইনগত অবস্থা দেখার পর ওয়া লো এবং চ সো উ এবং তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ইন দিন গ্রামে কী ঘটেছিলো তার বিবরণ প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

‘বিশ্বব্যাপী জনস্বার্থে আমরা এখন এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’ বলেন তিনি।

কথিত এই গণহত্যার ঘটনা বিবিসির পক্ষে আলাদাভাবে খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। কারণ ওই এলাকায় সাংবাদিকদের যাওয়ার উপর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যখন রাখাইনে একের পর এক এধরনের হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিচ্ছে তখনই রয়টার্স এধরনের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করলো।

বৌদ্ধ অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বর্মী নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণের কারণে সম্প্রতি সেখান থেকে প্রায় ছ’লাখ মানুষে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।

সামরিক বাহিনী বলছে, তাদের এই অভিযান সশস্ত্র রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসময় হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের ব্যাপারে কী জানা গেছে?

বলা হচ্ছে, এই গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিলো গত বছরের ২রা সেপ্টেম্বর। রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় ইন দিন গ্রামে।

রয়টার্স বলছে, এই গ্রামে ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যার বিষয়ে তাদের সাংবাদিকরা সেখানে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করছিলো। সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলো বৌদ্ধ গ্রামবাসী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং ফটোগ্রাফারদের। সবার বক্তব্য মিলিয়ে তারা দেখার চেষ্টা করছিলো সেখানে আসলেই কী ঘটেছে।

রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ওই গ্রামে অভিযানের সময় রোহিঙ্গা পুরুষদের একটি দল নিজেদের জীবন বাঁচাতে একটি জায়গায় গিয়ে জড়ো হয়।

তখন ওই গ্রামের কয়েকজন বৌদ্ধ পুরুষ একটি কবর খনন করার নির্দেশ দেন। তারপর ওই ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে হত্যা করা হয়। বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা অন্তত দুজনকে কুপিয়ে এবং বাকিদেরকে সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে।

বার্তা সংস্থাটি বলছে, এই প্রথম এধরনের হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ হিসেবে ছবি পাওয়া গেছে যাতে সৈন্যরা অভিযুক্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, রয়টার্স বলছে যে এবিষয়ে তারা বৌদ্ধ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যও সংগ্রহ করেছে।

এই দুজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করার পর এই ঘটনার ব্যাপারে বর্মী সামরিক বাহিনী নিজেরাও তদন্ত করেছে। তদন্তের ফলাফলের সাথে ওই দুই সাংবাদিকের অনুসন্ধানে মিল রয়েছে বলে রয়টার্স দাবী করছে।

সামরিক বাহিনী নিহত ওই ১০ জনকে উল্লেখ করেছে ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ হিসেবে এবং তারা বলছে যে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে কারণ পুলিশ স্টেশনে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হামলার কারণে তাদেরকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না।

কিন্তু রয়টার্স বলছে, তাদের দুজন সাংবাদিক অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছেন ওই ১০ জন রোহিঙ্গার সাথে সন্ত্রাসের কোন সম্পর্ক ছিলো না। এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ভিড়ের ভেতর থেকে এই ১০ জনকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, তাদের দুজন সাংবাদিক ইন দিন গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে গ্রামবাসী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং নিহতদের আত্মীয় স্বজনও রয়েছেন যারা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন।

রয়টার্স বলছে, এক ব্যক্তি ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা কথাও স্বীকার করেছেন।

এই সাংবাদিকদের কি হয়েছে?

ওয়া লো এবং চ সো উ দুজনই বর্মী সাংবাদিক। শক্তিশালী রিপোর্টিং-এর জন্যে তারা সুপরিচিত। গত ১২ই ডিসেম্বর তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘তাদের কাছে রাখাইন রাজ্য ও নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় তথ্য পাওয়া যাওয়ার কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

‘বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে সরবরাহ করার জন্যে তারা অবৈধভাবে এগুলো সংগ্রহ করেছে,’ বলছে কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু তাদের আটকের পর থেকেই বলা হচ্ছিলো যে খুবই স্পর্শকাতর এক বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলো।

এই পরিস্থিতিতে রয়টার্স তাদের সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মায়ানমার সরকার কি বলছে?

রয়টার্সের এই অনুসন্ধানের ব্যাপারে বিবিসি বর্মী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু এবিষয়ে তাদের কাছ থেকে এখনও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে সরকারের একজন মুখপাত্র জো তে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের কথা আমরা অস্বীকার করছি না।’

‘এই অভিযোগের বিষয়ে জোরালো কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার সেটি তদন্ত করে দেখবে।’

‘তখন যদি আমরা দেখি যে অভিযোগ সত্য এবং সেখানে এরকম ঘটনা ঘটেছে তখন আমরা বর্তমান আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো,’ বলেন তিনি।

তবে রাখাইনে সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সমাজকে বুঝতে হবে কারা প্রথম সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এরকমের কোনো সন্ত্রাসী হামলা যদি ইউরোপের কোনো দেশে চালানো হতো, যুক্তরাষ্ট্রে কিম্বা লন্ডনে, নিউ ইয়র্ক অথবা ওয়াশিংটনে তখন সংবাদ মাধ্যমে কি বলা হতো?’ মায়ানমার সরকারের মুখপাত্রের প্রশ্ন। সুত্র: আরটিএন

পাঠকের মতামত

জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ, প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বাংলাদেশ। এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ...

জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। ...

বিমান ছিনতাই করেছিলেন নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির স্বামী

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। দুর্নীতির ...