প্রকাশিত: ১৭/০৪/২০১৮ ৩:১৬ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:০৪ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক ::

নিজভূমে পরবাসি হতে চলেছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের স্থানিয়রা। মানবিক কারনে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গারা এখন জেলাবাসির গলার কাঁটা। তাদের কারনে নতুন করে পোহাতে হচ্ছে নানা জক্কিঝামেলা। রোহিঙ্গাদের কারনে বাড়ছে এইডস এর বিস্তার। বাংলাদেশে কলেরা না থাকলেও রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছে সেই সমস্যাও। উখিয়া-টেকনাফের বির্স্তীণ বনভূমি উজাড় হচ্ছে, পাহাড় কেটে ধ্বংস করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ঝুঁকিও বাড়ছে। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা ও বৃদ্ধিও আশংকা করছেন স্থানিয়রা।

 

গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের কারনে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের আগমনের পর থেকে জেলায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

 

জানা যায়, রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানিয়রা অনেকেই অসুস্থ হয়ে ও হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় লোকজনের চিকিৎসা সেবা পাওয়া আগের চেয়ে দুরুহ হচ্ছে। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অভাবে রোহিঙ্গারা যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। ফলে পানিবাহিত রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে। দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার টন মানুষের বর্জ্য রাখার জায়গা নেই এমনিতে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত শেডে। বিভিন্ন এনজিও’র নির্মিত অস্থায়ি টয়লেটগুলো এখন অনেকটায় অকার্যকর বলে জানিয়েছে জেলা জনস্বাথ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিবার্হি প্রকৌশলী ঋত্বিক চৌধুরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য এখনো পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরি হয়নি । বিভিন্ন এনজিও যে টয়লেট নির্মান করেছিল তা অনেকটা অর্কাযকর। আগামি বর্ষায় চরম ভোগান্তিতে পড়বে রোহিঙ্গারা।

 

রোহিঙ্গাদের কারনে কক্সবাজার এমনিতেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ে এসেছে । রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ দুই লাখ মানুষের জন্য যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি, সেখানে ১১ লাখ মানুষের সেবা দিতে হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে।

 

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে- রোহিঙ্গাদের প্রতিদিন বিভিন্ন ব্যয় থাকলেও বৈধপথে আয়ের কোনো উৎস নেই। সেই হিসাবে এই ১১ লাখ রোহিঙ্গার পেছনে সরকারের বছরে ব্যয় হবে প্রায় ৪৯ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা, যা অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে কিছু সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদি এই সাহায্য অব্যহত থাকবে কিনা সেটা বলা মুশকিল। যখন পাওয়া যাবে না তখন বাংলাদেশকেই এই টাকা খরচ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের পেছনে বাড়তি মনোযোগ দিতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন নিয়োগ করতে হয়েছে সরকারকে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়ছে। আর এই ব্যয়টা খরচ হচ্ছে বাজেট থেকে। অথচ রোহিঙ্গা সমস্যা না থাকলে এই টাকা অন্য জায়গায় ব্যয় করা যেত।

 

অপরদিকে রোহিঙ্গাদের কারনে উখিয়া ও টেকনাফে এখন স্থানীয় নাগরিকরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন। দিন দিন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে দেশ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন স্থানিয়রা। রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানীয় দরিদ্র শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

 

রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ধস নামার আশঙ্কা আছে। এখনই রোহিঙ্গা নারীদের কক্সবাজারে অবাধে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। দেহ ব্যবসায়ও অনেক নারী জড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন, উদ্বিগ্ন প্রশাসনও । এভাবে চলতে থাকলে কক্সবাজারকে অনেকেই পাশ কাটিয়ে অন্য পর্যটনকেন্দ্রে চলে যেতে পারেন। এমনটা হলে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায় ভয়াবহ ধস নামতে পারে।

 

পর্যটন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, কক্সবাজারে সাড়ে তিনশ’ হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের অনেককেই হোটেল-মোটেলে দেহব্যবসায় পাওয়া যাচ্ছে । এদের মধ্যে এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গা নারি ও রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে পর্যটকসহ হোটেল-মোটেল শ্রমিকদের শারীরিক মেলামেশায় বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় অনেকে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ায় কক্সবাজারে এইডস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে ?

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলায় তাঁরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন । এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের কাছেও তাঁরা আশ্রয় নিচ্ছেন। পুরনো রোহিঙ্গারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘ম্যানেজ’ করে নানা রকম অবৈধ ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।

 

বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে চার হাজার একর পাহাড় কেটে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি করা হয়েছে? ফলে ওই এলাকায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামি বর্ষায় একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ধসে পড়তে পারে পাহাড় । এতে বহু মানুষ হতাহতের আশঙ্কাও করা হচ্ছে ? উখিয়া রেঞ্জে কুতুপালং, থাইংখালী ও আশপাশের পাহাড়ের প্রায় তিন হাজার একর জায়গায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে? এছাড়া টেকনাফ রেঞ্জে ৪৫০ একর, পুটিবুনিয়া রেঞ্জের ৫০ একর এবং শিলখালী রেঞ্জের ৩৭৫ একর পাহাড়ি বন কেটে রোহিঙ্গা বসতি করা হয়েছে ?ফলে মারাত্বক পরিবেশ বির্পযয়ের পাশাপাশি সবুজ বনভূমি এখন অনেকটা বিরানভূমিতে পরিনত হয়েছে।

 

রোহিঙ্গা জ্বালানি হিসাবে প্রতিদিনই পুড়ছে সবুজ বনের কাঠ। রোহিঙ্গাদের এক লক্ষ চুলা যদি থাকে, সেই এক লক্ষ চুলার জন্য প্রতিদিন যদি ন্যূনতম পাঁচ কেজি জ্বালানি হলে প্রতিদিন পাঁচ লক্ষ কেজি কাঠ পুড়ছে? এগুলো কোনো না কোনোভাবে উখিয়া টেকনাফের জঙ্গল থেকে যাচ্ছে? এই অবস্থা অব্যহত থাকলে বনভূমির বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে ?

 

রোহিঙ্গাদের কারনে নানামুখি সংকটে কক্সবাজার। আইনশৃংখলা অবনতির পাশাপাশি বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা ঝুঁকি। নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দলে জড়িয়ে ইতোমধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ও ঘটেছে। ফলে রোহিঙ্গারা জেলাবাসির জন্য গদের উপর বিষপোড়া হতে চলেছে কক্সবাজারবাসির জন্য।

পাঠকের মতামত