
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
২০১৬ সালে ছয়টি পৃথক অভিযানে ইয়াবাসহ ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব-৭। এর মধ্যে ৮ জন ছিল বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করা মিয়ানমারের নাগরিক। ২০১৭ সালের গত ছয় মাসে চারটি আলাদা অভিযানে ধরা পড়ে ৩৮ জন যার মধ্যে মিয়ানমারের নাগরিক ১৬ জন।
দেড় বছরের মধ্যে ইয়াবাসহ মিয়ানমারের ২৪ শরণার্থী আটক হওয়াকে অ্যালার্মিং বলছেন র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে.কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কক্সবাজারে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ক্যাম্পগুলো থেকে বেরিয়ে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ জড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা ব্যবসায়। ইয়াবা গডফাদাররা টাকার বিনিময়ে তাদের এই নিষিদ্ধ মাদক বহন-পাচারের কাজে ব্যবহার করছেন।
‘আমরা যাদের ধরছি, বিশেষ করে নৌপথে, তাদের অনেকেই মিয়ানমারের নাগরিক। বিশেষত মাঝিমাল্লাদের মধ্যে যাদের পাচ্ছি তারা মিয়ানমারের নাগরিক অর্থাৎ আমরা যাদের রোহিঙ্গা বলি। নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়াচ্ছে এবং সারাদেশে পাচারের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অ্যালার্মিং। ’
সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি নগরীর পতেঙ্গা থানার কয়লার ডিপো এলাকায় এফভি ইমন নামে একটি ট্রলারে তল্লাশি চালিয়ে ১০ লাখ ইয়াবাসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে দুজন মিয়ানমারের নাগরিক।
৩ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের বাকখালি থেকে ৭ লাখ ৩০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার ৭ জনের একজন মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী। ৫ অক্টোবর পতেঙ্গায় গভীর সমুদ্র এলাকা থেকে ৫ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার ৭ জনের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী। ২৯ নভেম্বর পতেঙ্গায় ৭ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার ৭ জনের মধ্যে ৪জন রোহিঙ্গা শরণার্থী।
২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের গভীর সমুদ্র এলাকা থেকে ৫ লাখ ইয়াবাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৫ জনই মিয়ানমারের শরণার্থী। ১৯ মার্চ পতেঙ্গায় ৬ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার ৮ জনের ৬ জনই রোহিঙ্গা শরণার্থী।
সর্বশেষ গত ২৩ জুন পতেঙ্গায় বহির্নোঙ্গর এলাকা থেকে ১৫ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার ১২ জনের মধ্যে পাঁচজনই মিয়ানমারের নাগরিক এবং চারজন বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা। এদের মধ্যে আছেন, টেকনাফের লেদা (নয়াপাড়া) শরণার্থী ক্যাম্পের সি-ব্লকের আব্দুল খালেক (২০) ও সাদ্দাম হোসেন (১৯) এবং ডি-ব্লকের নুর আলম (২৫) ও সেলিম প্রকাশ মলয় (২০)। এছাড়া টেকনাফে বসবাসরত মিয়ানমারের নাগরিক মো.ইসমাইলকেও (২০) ওই ট্রলার থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৭ এর অ্যাডজুটেন্ট সাহেদা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচজন মূলত মাঝির সহযোগী হিসেবে নৌকায় ছিল। এখানে চারজনই রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের বাসিন্দা। ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে কোন ধরনের কাজের সঙ্গে তাদের জড়ানোর সুযোগ কিন্তু নেই। এভাবে নিয়মিত ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে রোহিঙ্গারা ইয়াবা পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে দুইটি নিবন্ধিত ক্যাম্পে বসবাস করছে ৩২ হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্যে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে আছে ১৪ হাজার এবং টেকনাফের নয়াপাড়া (লেদা) শরণার্থী ক্যাম্পে আছে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা।
সূত্রমতে, অনিবন্ধিত চারটি ক্যাম্পে বসবাস করছেন প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে নয়াপাড়া ক্যাম্পে ৮০ হাজার, কুতুপালং ক্যাম্পে ৭০ হাজার, টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুর ক্যাম্প ও উখিয়া উপজেলার বালুখালী ক্যাম্পে ২৫ হাজার করে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে।
র্যাব সূত্রমতে, ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের অনেক আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশী মিয়ানমারে আছেন। ক্যাম্পের রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারে থাকা তাদের স্বজনরা বিভিন্ন ইয়াবা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। তারা মূলত ইয়াবা বহন করে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন।
লে.কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের চলাফেরা সীমিত করতে না পারলে এই অপরাধ প্রবণতা বাড়তেই থাকবে।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে সংকটের কথা জানালেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) একেএম ইকবাল হোসাইনও।
‘একেকটা ক্যাম্প ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। কোন ধরনের সীমানা দেওয়াল নেই। আমাদের নজরদারি আছে। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তথ্যগুলো পৌঁছে দিয়েছি। নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার সুপারিশও করা হয়েছে। ’ বলেন এসপি।
পাঠকের মতামত