ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২০/০৩/২০২৪ ১০:০৩ এএম

কুতুবদিয়ার পশ্চিম সৈকতের পাশেই সাগরে সৃষ্টি হয়েছে ডুবো চর। জোয়ারে তলিয়ে যায় আবার ভাটায় চরটি জেগে ওঠে সাগরের বুকে। ভবিষ্যতে এ ডুবোচরটি পরিনত হবে পূর্ণাঙ্গ ভূখণ্ডে। তখন সেটি আকর্ষনীয় পর্যটন গন্তব্যে রূপ নিতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

স্থানীয়রা জানান, ৭-৮ বছর আগে থেকে এ ডুবো চরের অস্তিত্ব মেলে। এই চরটি দ্বীপের হারিয়ে যাওয়া অংশ। ১৯৬০ সনের আগে অন্তত দেড় কিলোমিটার জায়গা ছিল এ দ্বীপের। প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পরে কুতুবদিয়া। আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের সর্ব দক্ষিণে খুদিয়ার টেক মৌজাটি একেবারেই সাগরগর্ভে চেলে যায়। ‘৯১ সালের ঘুর্ণি ঝড়েও আরো কিছুটা ভাঙতে থাকে । ফলে প্রায় দেড় কিলোমিটার সাগরে বিলীন হয়ে যায় জমি ও বসত ভিটা। অনেকেই কক্সবাজার সহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে থাকেন।
আলী ফকির ডেইল বাতিঘর পাড়ার প্রবীণ মাদরাসা শিক্ষক নুরুল আমিন ছিদ্দিকী বলেন, বর্তমান বাতিঘর থেকে বাইরে ছিল কবরস্থান। তার বাইরে ছিল পুরাতন বাতিঘর। ১৯৬০ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ে প্রায় এক কিলোমিটার সাগরে বিলীন হয়ে যায়। বড়ঘোপ এলাকায় যে চর দেখা যায় তা প্রায় কয়েকবছর থেকে দৃশ্যমান হচ্ছে। ধীরে ধীরে সাগরে জোয়ার ভাটায় পলি মাটি জমে ক্রমশ: উচু হতে থাকে। এক পর্যায় এসে ৬ দশক পর দ্বীপের আধা কিলোমিটার অদূরে চর জাগতে শুরু করেছে। জেলেরা মাছ ধরার জন্য এই চর ঘুরে গভীর সাগরে যায় । সাধারণত: বিকালে চরের সম্পূর্ণ অংশটি দৃশ্যমান হয়। এই চরের সার্ভে না হলেও আনুমানিক উত্তর-দক্ষিণ প্রায় ৭ কিলোমিটার ও পূর্ব-পশ্চিমে দেড় কিলোমিটার এই চর দৃশ্যমান হচ্ছে। অনেকেই এখন এই ডুবোচরে বেড়াতে যায়, খেলাধুলা করে আবার ফিরে আসে।
অনেকেই মনে করছেন এই চরে সামুদ্রিক গাছ রোপন করে আরো বেশি পলিমাটি জমায় সহায়তা করা গেলে অল্প দিনেই একটি পূর্ণাঙ্গ চরে রূপ নেবে। তখন একটি পর্যটনপল্লী হিসেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

স্থানীয় উপক’লীয় বন বিভাগের রেঞ্জার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কয়েক বছর যাবত বড়ঘোপ সমুদ্র সৈকতের সন্নিকটে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরেই চর দেখা যাচ্ছে। এটি ভাটার সময় পুরোটা দৃশ্যমান হয় এবং জোয়ারের সময় তলিয়ে যায়। এই ডুবোচরটি রক্ষায় গত মাসের শেষের দিকে পরীক্ষামূলক ৩০০টি বাইন গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। বাইন গাছ লবন পানি সহিষ্ণু। ফলে সাগরের লোনা পানিতে বাইন গাছ নষ্ট হবেনা। গাছগুলো রক্ষা পেলে পর্যায়ক্রমে আরও ভিন্ন প্রজাতির বিশেষ করে গেওয়া প্রজাতির গাছ লাগানো যায় কিনা তার একটা পরিকল্পনা রয়েছে। আরো গবেষনার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ ড: মোহাম্মদ কামাল হোসেন এ ডুবোচরটি পরিদর্শনে খুব শীঘ্রই আসবেন বলেও জানান তিনি।
কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কুতুবদিয়ার পাশেই সাগরে জেগে ওঠা ডুবোচর দ্বীপবাসির মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। যুগের পর যুগ আগে কুতুবদিয়ার হারিয়ে যাওয়া ভূমি পলিমাটি জমে জমে ভরাট হয়ে ডুবোচর সৃষ্টি হচ্ছে। চরটিকে কাজে লাগাতে হলে চরের চারদিকে জোয়ারে পানি ঠেকাতে বোল্ডার পাথরের উঁচু বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। পানিতে বেঁচে থাকে এমন গাছও লাগিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সেই সাথে বিদেশী কিংবা দেশীয় বিনিয়োগ করে পর্যটক আকর্ষনীয় করা গেলে “ বিশেষ পর্যটনপল্লী” গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

পাঠকের মতামত