প্রকাশিত: ২১/০৪/২০২০ ৭:১৩ পিএম

ডা. শাহীন আবদুর রহমানঃ
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আলোচিত বাস্তবতা হচ্ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ।প্যান্ডেমিক এই রোগ সারা বিশ্বকে একরকম কাবুই করে ফেলেছে। বাঘা বাঘা দেশ আজ অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে এই সামান্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীবের কাছে। নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই রোগের ভয়াবহ থাবা থেকে মুক্তি লাভের। যদিও এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকর চিকিৎসা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি তবু এই চেষ্টা কিন্তু থেমে নেই। এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো করোনা সনাক্তকরণ পরীক্ষা।

কভিড নাইন্টিন বা করোনা সংক্রমন নির্ণয় করার জন্যে এখনো পর্যন্ত ইউরোপ আমেরিকাসহ সারাবিশ্বে যেই টেস্ট বা পরীক্ষা পদ্ধতি প্র‍্যাক্টিস করা হচ্ছে সেটি হলো RT PCR (Real Time Polymerase Chain Reaction). আমাদের দেশেও সবগুলো করোনা ল্যাবে এই পরীক্ষাই করা হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হলো এই পরীক্ষা কতখানি অথেনটিক বা গ্রহণ যোগ্য?
এই প্রশ্ন আসলে শুধু আমাদের না, এই প্রশ্ন বিশ্বব্যাপী। কারণ এই পরীক্ষায় কিছু পিটফল বা ত্রুটি আছে। বলা হচ্ছে এই পরীক্ষায় ৩০% ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট আসতে পারে। নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। কারণ সেক্ষেত্রে নেগেটিভ রেজাল্ট আসার কারণে করোনা আক্রান্ত রোগী অন্যদের মাঝে সংক্রমিত করে ফেলতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একজন করোনা রোগী কমপক্ষে ২ জন লোকের মাঝে করোনা ছড়াতে পারে।

এই ফলস নেগেটিভ হবার কারণ কি?
বেশির ভাগ কারণ বা সমস্যা আসলে Pre Analytic বা পরীক্ষার আগে। এটা স্যম্পল বা নমুনার কোয়ালিটি, স্থান, পদ্ধতি, ট্রান্সপোর্টেশান, এক্সট্রাকশান ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। সাধারণত নাকের পেছনের গভীর অংশ, গলার পেছনের অংশ থেকে এই সোয়াব বা স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়। এর সংবেদনশীলতা বা সেন্সিটিভিটি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ। তার অর্থ হচ্ছে এই স্যাম্পল এর ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ আসলে কোন ভাইরাস বহন করে না, রোগী কভিড নাইন্টিন হওয়া সত্ত্বেও।

এর কারণ কি?
এর কারণ হচ্ছে স্যাম্পল কালেকশন এর ত্রুটি অথবা এমন সময় স্যাম্পল সংগ্রহ করা যখন তার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভাইরাস ছিল না। হয়তোবা আরো পরে কালেকশান করলে সেখানে ভাইরাস পাওয়া যেতো। আবার অনেক সময় কোয়ালিটি স্যাম্পল নেয়া সত্ত্বেও ট্রান্সপোর্ট, এক্সট্রাকশান বা পরীক্ষায় টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে ও পরীক্ষায় ফলস নেগেটিভ আসতে পারে। এই চিত্র খোদ আমেরিকার মতো দেশের।

তাহলে এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি?
আমরা যারা চিকিৎসা প্রদান করি তাদের করণীয় হচ্ছে আপডেটেড গাইডলাইন অনুসরণ করা। শুধুমাত্র পরীক্ষার উপর নির্ভর না করা। এক্ষেত্রে রোগীর ইতিহাস, ক্লিনিক্যাল পিকচার, এক্সরে, সিটি স্ক্যান, অন্যান্য মার্কার ইত্যাদির উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

রোগীদের আমরা ব্রডলি দুই শ্রেণিতে ভাগ করি- হাই রিস্ক বা উচ্চ ঝুঁকি এবং লো রিস্ক বা নিম্ন ঝুঁকি। নিম্ন ঝুঁকির ক্ষেত্রে তাদের নেগেটিভ রেজাল্ট আসলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অন্যান্য স্বাস্থ্য নির্দেশনা প্রতিপালনসহ আইসোলেশান মেইনটেইন করতে হবে। কিন্তু উচ্চ ঝুঁকির ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই প্রবাবল বা সম্ভাব্য কেস হিসেবে কভিড নাইন্টিন হিসেবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

সাধারণ লোকজনের তাহলে কি করণীয়?
একদিকে করোনা পরীক্ষায় ৩০% ক্ষেত্রে ফলস নেগেটিভ আবার অন্যদিকে ২৫% ক্ষেত্রে লক্ষন বিহীন রোগীর করোনা হতে পারে। তাই এই পরীক্ষার পজিটিভ নেগেটিভ সংক্রান্ত ক্রিটিকাল গবেষণা করে বা মারপ্যাঁচে পড়ে চিন্তাগ্রস্ত হবার কোন প্রয়োজন নেই।

এক্ষেত্রে যেটা করণীয় সেটা হচ্ছে, সার্বজনীন নির্দেশনাগুলি মেনে চলা। নিরাপদে ঘরে অবস্থান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নিয়মিত হাত পরিস্কার করা, হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজনে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কোন সন্দেহজনক লক্ষন দেখা দিলে চিকিৎসক বা করোনা চিকিৎসার জন্য ডেজিগনেটেড হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করা।

যেকোন রোগের RT PCR পরীক্ষা কয়েক বছরের যাচাই বাছাই বা পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই কার্যক্ষেত্রে এপ্লাই করা হয়। কিন্তু করোনা এতোটা দ্রুত সারাবিশ্বকে আক্রান্ত করেছে যে এক্ষেত্রে সেই সময় পাওয়া যায়নি। তাই এক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

বিশ্বব্যাপী অন্য কোন ভাল উপায় বা পরীক্ষা না আসা পর্যন্ত আমাদের সবাইকে এই বিষয়গুলো এক্সেপ্ট করে নিতে হবে। আমাদের সবাইকেই যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বগুলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে। তবেই আমরা এই করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে পারব।

আসুন আমরা সবাই মিলে সেই কাজটাই করি এবং মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহে লাভ করি করোনার অশুভ কালোছায়া মুক্ত একটি সুন্দর সকাল।

ডা. শাহীন আবদুর রহমান
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও)
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল।

পাঠকের মতামত

“বিগত প্রতিশ্রুতির রাজনীতি নয়, বাস্তবায়নই হোক উখিয়া-টেকনাফের আগামী”

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত  উপজেলা—উখিয়া ও টেকনাফ। এই জনপদ আজ মাদক, ...

ভুল হোক ফুল

আমাদের এই ছোট্ট জীবনটার পুরোটাই হচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্র।যত সময় যাচ্ছে, ততই যেন আমরা নতুন বিষয় ...

উখিয়া-টেকনাফের রূপকার, উন্নয়নের নায়ক আমার দেখা শাহাজাহান চৌধুরী

উখিয়া-টেকনাফের অবিসংবাদিত নেতা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বিএনপি বিপ্লবী ও সাহসী বীরযোদ্ধা কক্সবাজার জেলা বিএনপির মান্যবর সভাপতি, ...