প্রকাশিত: ২১/০১/২০১৭ ১০:০২ পিএম

মনতোষ বেদজ্ঞ :
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট একটি আধুনিক শিশু পার্ক নির্মানের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের মাধ্যমে বিদ্যমান বীচ-পার্কে ৩ দশমিক ০৫ একর জমির উপর এ শিশু পার্ক গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের আহ্বানে শিশু পার্ক নির্মাণ ও পরিচালনা কাজে অভিজ্ঞ কিছু প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করে নিজেদের পরিকল্পনা, নকশা ও প্রাক্কলন দাখিল করেছে।
জেলা পরিষদের সহকারি প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, ‘বিগত বছরের অক্টোবর মাসের জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে একটি আধুনিক শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের কাছে প্ল্যান, ডিজাইন ও প্রাক্কলন আহ্বান করে জেলা পরিষদ। প্রস্তাবনা দাখিলের শেষ সময় ছিল ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবনা দাখিল করেছে। সেগুলো যাছাই-বাছাই করা হবে। বাছাই করা একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষেই শিশু পার্ক নির্মাণ হবে। সেই হিসেবে বলা যায় এখনো বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একটি আধুনিক শিশু পার্কে বিভিন্ন রাইড থেকে শুরু করে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে তার সবটাই যুক্ত হবে লাবনী পয়েন্টে নির্মিতব্য শিশু পার্কে। পর্যটক ও স্থানীয় শিশুদের চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে এটি।’
বর্তমানে শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য পর্যটন শহর কক্সবাজারে আধুনিক শিশুপার্ক নেই। ফলে এই অঞ্চলের কোমলমতি শিশুদের পাশাপাশি ভ্রমনে আসা পর্যটক শিশুরাও বঞ্চিত হচ্ছে মানবিক উৎকর্ষতা আনেÑএমন চিত্তবিনোদন প্রাপ্তি থেকে। একটি আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য কক্সবজারের সচেতন মহল সোচ্ছার রয়েছে বহুদিন ধরে। নানা চেষ্টা তদবিরের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য উদ্যোগও নেওয়া হয়। তবে ওই উদ্যোগও থমকে থাকে তিমিরেই। কক্সবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে একটি শিশু পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ না পেয়ে সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়।
কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমীর দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুক্তা মিত্র বলে, ‘পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য উপযুক্ত কোন যায়গা নেই। আমরা একটি শিশু পার্ক খুব মিস করি। এখানে ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো একটি আধুনিক শিশু পার্ক নির্মাণ করা হলে সকল শিশুই উপকৃত হতো।’
কক্সবাজারের শিশু-কিশোর সংগঠন পাহাড়ি ফুল খেলাঘর আসরের সহ-সভাপতি ও হেমন্তিকা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অনিল দত্ত বলেন, ‘শিশুদের মানবিক-মানষিক উৎকর্ষতা সাধণে এখানে একটি শিশু পার্ক নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী। আমরা অতীতেও নানাভাবে এই দাবী জানিয়ে এসেছি। জেলা পরিষদের মাধ্যমে শিশু পার্ক নির্মাণ হলে সেটি হবে কক্সবাজারবাসীর প্রাণের একটি আকাংখার প্রতিফলন। আমরা অচিরেই এখানে পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক শিশু পার্ক দেখতে চাই।’
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, জেলার সচেতন মহলের পক্ষ থেকে কক্সবাজারে একটি আধুনিক শিশুপার্ক নির্মানের দাবী উঠে ৮০’র দশকে। জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসর প্রথম ওই দাবী তুলে। পরে সচেতন লোকজন ওই দাবীর পক্ষে সোচ্ছার হয়। জোরালো সমর্থন জানায়। ওই দাবীতে বহুবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন। প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও দেয়া হয়। নানা চেষ্টা তদবিরের পর অবশেষে ২০০০ সালে কক্সবাজার পৌরসভা ‘হেলদি টাউন’ প্রকল্পের আওতায় একটি শিশু পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। সেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে। কক্সবাজার ডায়াবেটিক হাসপাতাল সংলগ্ন একটি জমিতে প্রস্তাবিত শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। অনুমতি পেয়ে শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য সাইনবোর্ডও টাঙায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের লিখিত অনুমোদন না পাওয়ায় ওই জমিতে শিশু পার্ক নির্মার্ণের বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি।

পাঠকের মতামত