উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭/১০/২০২৩ ৪:০৩ পিএম

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের বুক চিরে নির্মিত হচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। মেগা এই প্রকল্পটির প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ অভয়ারণ্যের মধ্যে পড়েছে। আর এসব এলাকায় অবাধ বিচরণ করে বন্য হাতি। ফলে তাদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রেললাইনের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এলিফ্যান্ট ওভারপাস। যার ওপরে হাতি ও নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। এই ধরনের প্রকল্প এশিয়ার মধ্যে প্রথম বলে দাবি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।

জানা যায়, বন্য হাতির চলাচলে যাতে সমস্যা না হয়Ñ বিষয়টি মাথায় রেখে চুনতিতে তিনটি আন্ডারপাস ও একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।‘এলিফ্যান্ট ওভারপাস’ নির্মাণের জায়গা নির্ধারণে জন্য এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বন্য প্রাণী সংরক্ষণ দল প্রায় দুই বছর কাজ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে যাতায়াত করা এশিয়ান প্রজাতির হাতি সবচেয়ে বেশি চলাচল করে চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা দিয়ে। ওভারপাস দিয়ে হাতিরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াত করতে পারবে। অপরদিকে অভয়ারণ্য এলাকায় বন্য প্রাণীরা যাতে রেললাইনে আসতে না পারে তার জন্য করা হচ্ছে লবণ পানির লেক। বন্য হাতি লবণ পানি পান করতে পছন্দ করে। এ ছাড়া বন্য হাতির দল কোথাও পানি দেখলে সেখানে অবস্থান করতেও পছন্দ করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ মিটার দীর্ঘ এলিফ্যান্ট ওভারপাসের কাজ প্রায় পুরোটা সম্পন্ন হয়েছে। ওভারপাসের ওপরে লাগানো হয়েছে হাতির পছন্দের কলা, বাঁশসহ প্রায় ৪১ প্রজাতির গাছ। যার ফলে এই ওভারপাস দিয়ে যাতায়াতে আকৃষ্ট হবে বন্য হাতির দল। ওভারপাসের দুই পাশে নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সীমানাপ্রাচীরের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে চেষ্টা করলেও এই সীমানাপ্রাচীরের কারণে বন্য হাতির দল রেললাইনে যেতে পারবে না।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ রেজাউল হক জানান, চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সাইড ওয়াল নির্মাণের কাছ চলছে। আগামী ১৫ অক্টোবর রেলপথে ট্রায়াল হবে। ২৮ অক্টোবর দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাহমুদ হোছাইন জানান, বন্য হাতির দল যেই করিডোর দিয়ে বেশি যাতায়াত করে, সেখানেই এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত অভয়ারণ্যের বন্য হাতিসহ অন্য প্রাণীরা ওভারপাস ও আন্ডারপাস দিয়ে যাতায়াতে অভ্যস্ত নয়। সেহেতু রেললাইন এড়িয়ে বিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করতে একটু সময় লাগবে তাদের।

এদিকে রেললেইনে ওভারপাস নির্মাণে প্রশংসা করলেও আকার ও সংখ্যা নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞদের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হাতি বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ জানান, অভয়ারণ্য এলাকায় রেললাইনে নির্মিত আন্ডারপাসগুলো স্ট্যান্ডার্ড সাইজের হয়নি। এ ছাড়া বন্য হাতি চলাচলের জন্য নির্মিত এলিফ্যান্ট ওভারপাসের সাইজও আরও দীর্ঘ হওয়া প্রয়োজন ছিল। হাতি খুবই বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী। সুতরাং চলাচলের পথে সামান্য পরিবর্তন হলেও তারা বুঝতে পারে। ওভারপাস দিয়ে বন্য হাতি চলাচল করাতে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। প্রথমে বন্য হাতি চলাচল করতে দ্বিধাবোধ করলেও উপযোগী পরিবেশ পেলে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

চুনতি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মী সানজিদা রহমান বলেন, পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মধ্যে এশিয়ান হাতি উল্লেখযোগ্য। যার কিছুসংখ্যক বর্তমানে অবস্থান করছে চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য এলাকায়। রেললাইনের প্রস্তাবিত নকশা অনুসরণ না করে হাতি চলাচলের জন্য মাত্র তিনটি আন্ডারপাস করা হয়েছে। যার সংখ্যা এবং সাইজ কোনোটাই মানা হয়নি। একটা মাত্র ওভারপাস দেওয়া হয়েছে যার দৈর্ঘ্য এবং চওড়া আরও বড় হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। হাতি অত্যন্ত সতর্ক এবং বুদ্ধিমান প্রাণী, চলাচলের পথে কোনো বিপদ বা পরিবর্তন আঁচ করতে পারলে তারা পথ পরিবর্তন করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে তাদের খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আশা করব, রেল চলাচল শুরু হওয়ার আগেই চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বন্য প্রাণীদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিশ্চিত করবে।

এদিকে, সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে নির্মিত এলিফ্যান্ট ওভারপাস পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি জানিয়েছেন, প্রকৃতি ও পরিবেশ সবকিছু বিবেচনা করে এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফিজিক্যালি স্টাডিতে ন্যাচারালি ওই জায়গা দিয়েই বন্য হাতি যাতায়াত করে। তাই তাদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে ওই স্থানে এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। এশিয়ার কোনো দেশে বন্য প্রাণীর জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এটিই রেলপথে প্রথম এলিফ্যান্ট ওভারপাস। সুত্র: প্রবা

পাঠকের মতামত

গদি নেই তবু সাবেক এমপি বদি!

আবদুর রহমান বদি। কক্সবাজার-৪ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ছিলেন, তাও আবার ক্ষমতাসীন দলের টিকিটে। মাদক ...

মিয়ানমারে সশস্ত্র লড়াই: আরাকান আর্মির কাছে গুরুত্বহীন রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে নিজেদের জাতিসত্তার স্বীকৃতি আদায় এবং রাখাইন রাজ্যে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ...

কক্সবাজারে মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে এনজিওগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে লুকিয়ে ...