প্রকাশিত: ১৮/১১/২০১৬ ১১:৪১ এএম

কক্সবাজার প্রতিনিধি::

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর এবার জেলা যুবলীগের সম্মেলন ও কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে দারুণ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আগামী মাস অর্থাৎ ডিসেম্বরের যেকোন সময়ে হতে পারে জেলা যুবলীগের সম্মেলন। সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসাবে চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যে কাউন্সিলর তালিকা তৈরী করে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরই সম্মেলন নিয়ে জেলাব্যাপী তোড়জোড় শুরু হয় যুবলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। তাদের আশা, প্রত্যক্ষ ভোটেই তারা আগামী দিনের নেতা নির্বাচন করবেন, জেলা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের মত কোন কমিটি কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া হবে না।

কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবগঠিত জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মাবু জানান- কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যে কাউন্সিলর তালিকা জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর ডিসেম্বরে জেলা যুবলীগের সম্মেলন সম্পন্ন করার কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। আর তারই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা যুবলীগ।

তিনি জানান, ডিসেম্বরে সম্মেলন সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সিলর তালিকা চূড়ান্ত করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলা নেতারা। পাশাপাশি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝেও এসেছে চাঙ্গাভাব।

জানা যায়, ২০০৫ সালে জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে পূনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন খোরশেদ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাহবুবুর রহমান মাবু। পরে নানা প্রতিকূলতার কারণে কমিটি অনুমোদন লাভ করে ২০০৯ সালে। এরপর দীর্ঘ ১১ বছরের কার্যক্রমে জেলা যুবলীগ একটি সুনামধারী সংগঠনে পরিণত হয়। পুরস্কার হিসাবে জেলা যুবলীগের বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক নবগঠিত জেলা আওয়ামীলীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ায় তাদেরকে এবার যুবলীগ ছাড়তেই হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের নব-গঠিত কমিটিতে খোরশেদ আলমকে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী মাবুকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খোরশেদ আলম কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক রূপসী গ্রামের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং মাহবুবুর রহমান কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র। আর জেলা যুবলীগের আসছে সম্মেলনে জনপ্রিয় দুই নেতার শূন্য পদ পেতে মরিয়া যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা। পদ প্রত্যাশী এসব নেতা এখন কাউন্সিলরদের মন জয়ে চষে বেড়াচ্ছেন জেলার ৮ উপজেলা। পাশাপাশি নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেতে কাউন্সিলের মন পেতে সচেষ্ট উদীয়মান যুব নেতারাও। এসব নেতা এখন যার যার দল ভারী করতে নাওয়া-খাওয়া যেন ছেড়েই দিয়েছে।

যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ ১১ বছর পর জেলা যুবলীগের সম্মেলন এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। জেলা যুবলীগের সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাবু, খোরশেদ আলম কুতুবী ও সহ-সভাপতি জি.এম কাসেম সদ্য ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগে ঠাঁই পাওয়ায় এবার তাদেরকে যুবলীগ ছাড়তেই হচ্ছে। তাই জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতারা চান একটি সফল সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে।

জেলা যুবলীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, জেলার ১১টি সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে ৮টি কমিটি সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মহেশখালী, রামু ও কুতুবদিয়া উপজেলা কমিটির অধিকাংশ নেতাই এখন যুবলীগে নেই। এরমধ্যে মহেশখালী উপজেলার সম্মেলন হয়েছে ১৪ বছর আগে, কুতুবদিয়া উপজেলার হয়েছে ১১ বছর আগে ও রামু উপজেলার সম্মেলন হয়েছে ১২ বছর আগে। বর্তমানে কোন কমিটিতে সভাপতি থাকলে সাধারণ সম্পাদক নেই, আবার সম্পাদক থাকলে সভাপতি নেই- এই অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এই তিন উপজেলায় জেলা সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব উঠে আসতে পারেনি। যার ফলে সমগ্র জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেমে এসেছে হতাশা ও স্থবিরতা। সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে যুবলীগকে আবারো চাঙ্গা দেখতে চান নেতাকর্মীরা। তাদের ধারণা, এবার জেলা যুবলীগের সম্মেলন হবেই। ইতোমধ্যে পদপ্রত্যাশী নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিজেদের প্রার্থীতাও ঘোষণা করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা যুবলীগের কমিটিতে কয়েক বার স্থান পাওয়া যুব নেতাসহ শহর যুবলীগের তরুণ নেতারাও। সিলেকশনের পাশাপাশি ইলেকশনের কথা মাথায় রেখে প্রার্থীরা জেলা যুবলীগ, শহর যুবলীগসহ উপজেলার প্রত্যেক কমিটির নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছেন।

প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- সভাপতি পদে গতবারের প্রার্থী বর্তমান সহ-সভাপতি শহিদুল হক সোহেল, সহ-সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক জাহেদ ইফতেখার ও শহীদুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক পদে পৌর যুবলীগের আহবায়ক শোয়েব ইফতেখার, জেলা যুবলীগের সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন ও শহর যুবলীগ নেতা মাসুকুর রহমান বাবু। এছাড়া ইমতিয়াজ আলম চৌধুরী, শহর যুবলীগ নেতা ডালিম বড়ূয়া, বেলালউদ্দিন, ইফতেখারউদ্দিন পুতুসহ অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

নেতাকর্মীদের দাবি, অতীতের সম্মেলনের ন্যায় এবারও কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচিত হোক, যাতে জেলা যুবলীগে যোগ্য নেতৃত্ব ওঠে আসে।

সভাপতি প্রার্থী সোহেল আহমদ বাহাদুর বলেন, আমার দাবি নেতাকর্মীদের ভোটে নেতা নির্বাচন হোক। তবে যদি কাউন্সিলরদের ভোট ছাড়া যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা যুবলীগ ও এমপিরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিটি গঠন করলেও সেটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

আরেক সভাপতি প্রার্থী শহিদুল হক সোহেল বলেন, যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য অবশ্যই কাউন্সিলদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। সিলেকশন কমিটি দিয়ে দলকে চাঙ্গা করা যাবেনা। জেলাব্যাপী যুবলীগকে চাঙ্গা করতে হলে সম্মেলনের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শোয়েব ইফতেখার বলেন, কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করা হলে জেলা যুবলীগ আরো সু-সংগঠিত হবে এবং নেতাকর্মীরা তাদের ভোটে যোগ্য নেতৃত্ব তুলে আনতে পারবে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতের প্রতিফলন ঘটিয়ে দলকে সুন্দর ও শক্তিশালীভাবে সাজাতে হবে।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাসুকুর রহমান বাবু বলেন, কক্সবাজার জেলা যুবলীগ একটি পরিচ্ছন্ন সংগঠন। অতীতে দুই দুইবার কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হওয়ার কারণে দলটির সুনাম ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। এবারের সম্মেলনেও যেন এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করে দিলে সেই সংগঠনও শক্তিশালী হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানও প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচনের পক্ষে। তিনি বলেন- আমি কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। সুতরাং আমি চাই নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব ওঠে আসুক।

জেলা যুবলীগের সভাপতি খোরশেদ আলমও কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা তৈরীর পক্ষে। তিনি বলেন, আমি চাই বর্তমান কমিটির পরে যে কমিটি আসবে তারাও যেন আমাদের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারে। আর এই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য কাউন্সিলরদের ভোটের কোন বিকল্প নেই।

তার মতে, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে যোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও কর্মী বান্ধব নেতৃত্ব ওঠে আসবে। পাশাপাশি কালোবাজারি, চাঁদাবাজ ও ধান্ধাবাজরা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবেনা।’ তাদেরই মতো দাবি, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীসহ জেলা যুবলীগের নেতাদের সিলেকশন কমিটি নয় ইলেকশনের মাধ্যমে কমিটি করা হোক।

পাঠকের মতামত