
ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যুর মুখে নবজাতক শিশু! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া হতভাগ্য এক পিতার ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো।
কক্সবাজার ইউনিয়ন হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তারের গাফিলতি এবং ডাক্তার আরিফা মেহের রুমির অনুপস্থিতি একজন মায়ের কষ্ট আর পিতার আর্তনাদ।
আমি একজন নবজাতক সন্তানের পিতা। আমার বাচ্চার জন্ম হয় ইউনিয়ন হাসপাতালে। বিগত মে মাসের ২৮ তারিখ সকাল ৮ টায়।
আমার স্ত্রী যখন গর্ভবতী হয় তখন থেকেই ইউনিয়ন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: আরিফা মেহের রুমির তত্বাবধানে ছিল। এমন ও সময় গেছে মাসে ২ থেকে ৩ বার চেক-আপ করেছি। এবং একটু খারাপ লাগলেই ডাক্তার রুমিকে কল দিলেই বলতো চলে আসতে। আমার বাচ্চার জন্মের সম্ভাব্য তারিখ ছিল মে মাসের ২৭ তারিখ। ঐ তারিখের ৫ দিন পূর্বে ডা: রুমির সাথে সাক্ষাৎ করে চেকআপ করার পর ওনি জানান আমার সন্তান সুস্থ আছে এবং ভালো অবস্থানে আছে। আপনার স্ত্রীর ব্যাথা হলেই চলে আসবেন। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২৭ তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক ২ টা আমার স্ত্রীর যখন ব্যাথা উঠে আমি সাথে সাথে কক্সবাজার চলে আসি এবং যেহেতু ব্যাথা বেশি হচ্ছে দেরি হবে মনে করে আমরা কক্সবাজার হোপ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে যখন ডাক্তার নাই এবং অবস্থা ভালো নই বলে সাথে সাথে ফজরের সময় ডা: রুমিকে কল দিই। ফোনে বিস্তারিত বলার পর ওনি জানালো আমি হাসপাতালেই আছি আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন। আমি দেরি না করে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ইউনিয়ন হাসপাতালে পৌঁছে যায়। কিন্তু গিয়ে দেখি ওনি হাসপাতালে নেই। আমরা বারবার ডা: রুমিকে ফোন দিলেই বলে আমি আসতেছি। যথারীতি আমার স্ত্রীকে লেবার রুমে প্রবেশ করানো হলো। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক আর নার্সরা জানালো আপনার বেবির নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এখন আপনি কি নরমাল ডেলিভারি করাবেন? আমি পিতা হিসাবে বললাম যদি সম্ভাবনা থাকে তাহলে নরমাল করান সমস্যা নাই। তখন আমার স্ত্রী প্রচন্ড ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। এদিকে লেবার রুম থেকেই স্ত্রী কল দিচ্ছে ডা: রুমিকে ওনি বলেন আসতেছি। আমি কল দিলাম বললেন আসতেছি। আমার স্ত্রীর যখন প্রচুর ব্যাথা তখন নার্স এবং কর্তব্যরত ডাক্তার লেবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সময় তখন আনুমানিক ৭:১০। আমি এবং আত্মীয় স্বজনরা যখন বললাম লেবার রুমে রোগী রেখে আপনারা কেন চলে আসছেন? তখন ওনারা বললেন সময় হোক আমরা যাবো এখনো সময় হয়নি অপেক্ষা করেন। তখন আমার স্ত্রীর প্রচন্ড ব্যাথা এবং কান্না করতেছে এবং আল্লাহকে ডাকছেন। তখনো রুমি আসেননি৷ কর্তব্যরত যারা আছেন তারা আসছেন না। বারবার রিকুয়েষ্ট করার পর অবশেষে নার্স লেবার রুমে গেলেন এবং চেষ্টা করলেন তবু ও কর্তব্যরত চিকিৎসক লেবার রুমে যাননি। ডা: রুমি তো তখনো হাসপাতালে আসেনি। তখন ও যখন ফোন দিলাম বললো আসতেছি। অবশেষে ডাক্তারের সহযোগিতা ছাড়া নার্সের হাত ধরেই জন্ম হলো আমার প্রথম সন্তানের । তখন সময় ৮ টা। কিন্তু নার্সের ভুল এবং দীর্ঘ সময় সন্তান পেটে অবস্থানের কারনে সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানের জায়গা হলোনা মা বাবার কুলে জায়গা হলো ইউনিয়ন হাসপাতালের এনআইসিওতে। অবশেষে বাচ্চার জন্মের ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ডাক্তার রুমির উপস্থিতি।
আগে লোক মুখে শুনছিলাম ডাক্তার রুমি নাকি সিজার না হলে লেবার রুমে যায়না। আমি এতোদিন বিশ্বাস করিনি। আজ নিজ চোখে দেখার পর বিশ্বাস হলো।
ঐ দিন বিকালে আমার সন্তানকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এনআইসিওতে নিয়ে যায়। তখন ডাক্তার বলছে জন্ম কোথায় হয়ছে বাচ্চার অবস্থা এতো খারাপ কেনো? বাসায় জন্ম হয়ছে নাকি? সে অনেক প্রশ্ন। অবশেষে চারদিন পর সদর হাসপাতাল থেকে জানানো হলো আপনার ছেলেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যান অবস্থা ভালো নই। যেই কথা সেই কাজ। ঐ দিন রাতে অর্থাৎ জুনের ১ তারিখ সন্ধ্যায় রওয়ানা দিই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। রাত আনুমানিক ১০:৩০ এর দিকে চট্টগ্রামে পৌঁছলাম কোথাও ভেন্টিলেটশন সাপোর্ট খালি না পেয়ে অবশেষে ভর্তি হলাম এপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে। সেই থেকে আজ ও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এখনো সন্তানকে কুলে নিতে পারিনি। জানিনা আদৌ পারবো কিনা? যদি আল্লাহ হায়াত দেন হয়তো পারবো। এখনো আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমি আল্লাহর উপর ভরসা রাখছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী।
আজ ২৫ দিন হলো একজন বাবা হিসাবে কতটা কষ্ট নিয়ে ধৈর্য্য ধরে বাবার কষ্ট অনুভব করছি। শুধু ডাক্তারের গাফিলতির কারনে।
আমার এই পর্যন্ত ৮-১০ লাখ টাকা খরছ হলো শুধুমাত্র এই ইউনিয়ন হাসপাতাল এবং ডাক্তারের গাফিলতির কারনে। টাকার কথা বাদ দিলাম আমার সন্তানকে এখনো ফিরে পাবো কিনা জানিনা। একমাত্র আল্লাহ জানেন। এই অবহেলার বিচার আপনাদের দিলাম। আপনারাই বিচার করেন। জানি আমার অভিযোগের কারনে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। আমি আল্লাহকে বিচার দিলাম।
আপনারা সচেতন থাকবেন আমার মতো ভূল মানুষকে কখনো বিশ্বাস করে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ তুলে দিবেন না।
পাঠকের মতামত