প্রকাশিত: ০৯/০৮/২০১৬ ৬:২৩ পিএম

coxsbazar-food-9.8.2016-800x450শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ::
কক্সবাজার জেলার আটটি উপজেলায় সরকারী ভাবে  ৮ হাজার ১শ’ ৬৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহে ভর্তুকির টাকা নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কৃষকদের সাথে প্রতারনা করে ধান সংগ্রহের কোটি টাকার ভুতৃুকি লুটে নেয়ার অভিযোগ করেছেন একদল নিরীহ কৃষক।

ইউএনও র নেতৃত্বাধীন ধান সংগ্রহ কমিটি ও মিল মালিক সিন্ডিকেট যোগসাজস করে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনার আশ্বাসে টিপ-সই নিয়ে মিল মালিকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেছে। সংশ্লিষ্ট খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সরকারী নির্দেশনা না মেনে ফঁড়িয়া, ব্যবসায়ী ও দালালদের কাছ থেকে ধান কেনার অভিযোগ উঠেছে।

ফলে সরকারী ভর্তু্িকর টাকায় ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়ে র্ভতুকির টাকা কৃষকের পরিবর্তে চলে যাচ্ছে মিল মালিকের পকেটে।

কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গত মে মাসে মাঠে মাঠে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে উৎসব চলে। তবে এ উৎসবে কৃষকের মুখ ছিল অনেকটা মলিন। প্রতি একর জমিতে ধান চাষে কৃষকের যখন খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সেখানে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মোটা চিকন প্রকার ভেদে ৮’শ থেকে ৯শ’ টাকা মন দরে ধান বিক্রি করে উৎপাদন মেটাতে পারছে না। এই অবস্থায় অনেক কৃষককুল লোকসান দিয়েই বিক্রি করছেন ধান।

এদিকে মিল ও চাতাল মালিকরা ধান কিনতে শুরু না করায় ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা বাজারে ধান কিনছেন না। আর চাতাল মালিকরা বলছেন, জেলায় চাল কেনার বরাদ্দ দেখে তারা ধান কিনবেন।
এবার ২৩ টাকা কেজি দরে অর্থাৎ ৯শ’ ২০ টাকা মন দরে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে ধান কিনবে সরকার। এমটাই ঘোষণা দেয়া হয়।

জেলা খাদ্য অফিস সুত্র জানায়, খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে এ বছর ৮ হাজার ১শ’ ৬৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মে মাসে ধান ক্রয় অভিযান শুরু কথা থাকলেও জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় বলে জানান কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শাহ জামাল।

তিনি আরও জানান, জুন মাস পর্যন্ত চলবে ধান সংগ্রহ অভিযান এবং ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত চাল সংগ্রহের পাশাপাশি ধান সংগ্রহ কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষে প্রতিটি ইউনিয়ন ভিত্তিক প্রান্তিক চাষিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কার্ডধারী কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকার বাইরে ফড়িয়া, ব্যবসায়ী ও দালালদের কাছ থেকে ধান না কেনারও সরকারী ভাবে নির্দেশনা রয়েছে জানান তিনি। জুলাই শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ranisonkail-ric_16546

এদিকে, চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সুত্রে জানা যায় এ বছর বোরো মৌসুমে ২ হাজার ৭৬১মে.টন ধান ক্রয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে ২৩টাকা। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের জন্য সরকারী নির্দেশনা রয়েছে।

খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, উপজেলা কৃষি অফিস চকরিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন থেকে ১ হাজার ৬১ জনের একটি তালিকা দিয়েছেন। ওই তালিকার কৃষকের মধ্যে এদিন (১৫ জুন) পর্যন্ত ১৩ জন কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ৩১ মে পর্যন্ত টন ৮০ কেজি ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।

তিনিই জানান, গত কয়েকদিনে প্রায় ১৫০জন কৃষককে ফেরত দেয়া হয়েছে। তাদের ধানে আদ্রতা বেশী ছিল।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শশিধর চাকমা জানান, এই সংগ্রহ অভিযান পুরো আগষ্ট মাস পর্যন্ত চালানো যাবে। ওই সময়ের মধ্যেও যদি ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হয় তাহলে চাল ক্রয়ের দিকে যেতে হবে। তাও সরকারী নির্দেশনা আসলে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে ধান সংগ্রহ অভিযানে গঠিত উপজেলা কমিটিতে চকরিয়া সোনালী অটো রাইচ মিলের মালিক ফজল করিমও সদস্য রয়েছে।

জানা গেছে, জেলার সব চেয়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়া উপজেলায়। চকরিয়ার চিরিংগা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মিল মালিক ফজল করিম উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটিকে প্রভাবিত করে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গনের যোগ সাজসে নানা তালবাহানার মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে মিল মালিক ফজল করিমের কাছ থেকে সমুদয় ধান কিনে নিয়েছে।

তারপর ধুর্ত সিন্ডিকেট ধান বিক্রেতা কৃষকদের একটি তালিকা করেই ধানের বিপরিতে উল্টো কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে মর্মে মিথ্যা ধান কেনার আশ্বাস দিয়ে টিপ-সই আদায় করে তালিকার কৃষকদের হাতে ৫০০/১০০০ করে টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে এমন অভিযোগ কৃষকদের।

সহজ -সরল কৃষকরা টিপ সই দেয়ার পর আঁচ করতে পারে তারা প্রতারনার শিকার হয়েছেন। এমনকি কৃষকরা ধান বিক্রি করতে না পারায় একদিকে কৃষকরা তাদের ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত ও হয়রানি হচ্ছে, অন্যদিকে ধান সংগ্রহে সরকারের দেয়া ভর্তুকির লাখ লাখ টাকা পকেটে চলে যাচ্ছে মিল মালিক সিন্ডিকেট ফঁড়িয়া, কমিটির লোকজনের হাতে।

অভিযোগ উঠেছে, চকরিয়া সোনালী রাইস মিলের মালিক ফজল করিমের যোগসাজসেই কমিটির সংশ্লিষ্টরা ধান ক্রয় অভিযান ব্যর্থ করে দেয়ার পায়তারা করছে। গত বছরও এভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ করে দিয়ে অবশেষে সোনালী অটো রাইচ মিলের মালিক ফজল করিমের কাছ থেকে চাল ক্রয়ে বাধ্য করা হয়েছিল। ওই বছর তারা পরস্পর যোগসাজস করে একই ভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

অভিযোগ উঠেছে এ বছরও ধান সংগ্রহ অভিযানে গঠিত উপজেলা কমিটির কিছু সদস্য ও সরকারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যোগসাজসে চালের মিল মালিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহিরুল হক অনিয়ম দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে বলেন, ধান ক্রয় করতে না পারলে সরকার সিদ্ধান্ত দিবে চাল ক্রয় করবো কী না।

চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত আসলে আমরা সেদিকে এগুবো। চালের মিল মালিক লাভবান হলেই সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে।

খাদ্য অফিস সুত্র মতে, সরকারী ধানের মান অনুযায়ী ধানের আদ্রতা সর্বোচ্চ ১৪%, বিজাতীয় পদার্থ সর্বোচ্চ ০৫%, ভিন্ন জাতের ধানের মিশন সর্বোচ্চ ৮%, অপুষ্ট ও বিনষ্ট দানা সবোচ্চ ২%, ও চিটা সবোচ্চ ০৫% শতাংশ থাকার কথা থাকলেও কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, উখিয়া খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) এই মান নিয়ন্ত্রণের নামে নষ্ট ধান সংগ্রহ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

টেকনাফ উপজেলায় ১৭০ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এককেজিও ধানসংগ্রহ করা হয়নি খাদ্য গুদামে।

কক্সবাজার জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ডিসি ফুড) তাহসীনুল হক বলেন, এখানে যে পরিমাণ লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেই পরিমাণ ধান এই কক্সবাজার জেলায় পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরেও ধান ক্রয় অভিযান অব্যাহত আছে।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে প্রতিনিধি দল পাঠাবে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়াসহ ৫ দেশ

মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার ঠাকুরদিঘি এলাকায় লবণবাহী ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম ...

জাসদ কার্যালয়ের জায়গায় ‘শহীদ আবু সাঈদ জামে মসজিদ’ নির্মাণের ঘোষণা

বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা সংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে ভেঙ্গে ফেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) ...

বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, আটক ৩৩

বান্দরবানের আলীকদম সীমান্তে বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা। আজও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে শিশুসহ ৩৩ মিয়ানমারের নাগরিককে আটক ...