উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫/১২/২০২২ ৭:২৯ এএম

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কক্সবাজার আসছেন আগামী ৭ ডিসেম্বর বুধবার। এই দিন জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেওয়ার আগে লাবনী পয়েন্টের পাশে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা রয়েছে তাঁর। কক্সবাজারে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের তিনটি বড় মেগাপ্রকল্প ছাড়াও ছোট-বড় প্রায় ৭৭ টি প্রকল্পের কাজ চলমান। যেখানে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা। তারমধ্যে মহেশখালী মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প, দোহাজারী বামু হয়ে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ অন্যতম। এগুলোর কিছু প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে, কিছু প্রকল্প আগামি দু তিন বছরের মধ্যে্ বাস্তবায়ন হবে। ওইদিন বাঁকখালী নদীর ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গাডার ব্রিজও উদ্বোধনের ফাইলে আছে।
পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, সরকার জনগনের জন্য কি করছে, দেশের উন্নয়নের অগ্রগতি কি, সবকিছু জনগনের সামনে নেত্রী তুলে ধরবেন। দেশের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের বড় বড় মেগা প্রকল্পের ৩টি হচ্ছে এখানে। এগুলোর কাজ সম্পূর্ণ হলে বিশ্ব দেখবে কক্সবাজারকে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কর্মদক্ষতার মধ্যে দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এর সুফল ভোগ করছেন দেশের মানুষ। যেখানে রাস্তা ছিলনা সেখানে পাকা রাস্তা হয়েছে, যেখানে অন্ধকার ছিল সেখানে বিদ্যুৎ’র ব্যবস্থা করেছে, বৃদ্ধ ভাতা, প্রতিবদ্ধী, স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাসিক ভাতাসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছেন।
জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করবেন। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের গণমানুষের দল, গণতান্ত্রিক দল। শেখ কামাল স্টেডিয়ামে জনসভা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে বক্তব্য দিতে পারেন।

এদিকে দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রীর আগমনে স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের দলীয় নেতা কর্মীরা খুব উজ্জীবিত। সরকার প্রধানের আগমনে সড়ক থেকে শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবদিক এখন সাজ সাজ রব। তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে শহরের গলি-উপগলিও। নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে কক্সবাজারে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কি বার্তা দেবেন তা শুনতে উন্মুখ হয়ে আছেন তারা। দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধান কক্সবাজারে আসবেন এজন্য শহরের পাশাপাশি ৮ উপজেলার নেতাকর্মীদের শুভাগমনের বার্তায় ছেয়ে গেছে সকল সড়কের দু’পাশ।
এরই মধ্যে প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় উদ্যোগে শহরের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জনসভার সব প্রস্তুতি সম্পন্নের প্রায় শেষ পর্যায়ে। পৌরসভার পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জরুরি চিকিৎসাসেবা, জেলা আওয়ামী লীগ ও পৌরসভার পক্ষ থেকে খাবার পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা হবে। পাশাপাশি জনসভার শৃঙ্খলা বজায় রক্ষার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
আগামী ৭ ডিসেম্বর বুধবার সকালে কক্সবাজার সৈকত ঘেঁষা মেরিন ড্রাইভের ইনানী-পাটোয়ারটেক সৈকত এলাকায় অনুষ্ঠিতব্য তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নৌ-শক্তি প্রদর্শন মহড়ার উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশও অংশ নেবে। ওইদিন বিকেল ৩ টায় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন সরকার প্রধান ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধান মন্ত্রী’র আগমন উপলক্ষে দলীয় নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ। যেখানে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নজিবুল ইসলামসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম জানান, সভাস্থলে প্রধানমন্ত্রীর মুল মঞ্চটি হবে নৌকা আকৃতির। ৩ টি মঞ্চের একটি মূল মঞ্চ, দ্বিতীয়টি অতিথিদের এবং অন্যটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য থাকবে। যেখানে কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা নেতৃবৃন্দ পৃথকভাবে অবস্থান নেবেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে আসা মানেই জেলা বাসীর জন্য সুখবর। তিনি কখনো নিতে আসেননি দিতে এসেছেন। এবারও তিনি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন এবং সমাপ্ত হওয়া কয়েকটি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করবেন।
তিনি বলেন, ওইদিন ৫ লাখ মানুষের সমাগম হবে। এটি হবে জেলার সর্ব বৃহৎ জনসভা। এ-তো মানুষ কোথায় থাকবে এবং স্টেডিয়ামের ভেতরে মানুষের ধারণক্ষমতা কতটুকু এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে ১ লাখের মতো নেতাকর্মী আগেই চলে আসবেন। তারা বিভিন্ন হোটেলে রাত্রিযাপন করবেন। পরেরদিন বিভিন্ন উপজেলা থেকে গাড়িযোগে সকালে চলে আসবেন। স্টেডিয়ামের বাইরেও ৪ লাখের মতো অর্থাৎ মাঠের বাইরে ৮-১০ গুণ মানুষের উপস্থিত হবে। সবমিলিয়ে লোকে লোকারণ্য হবে জেলা শহর কক্সবাজার, এমনটাই জানালেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জনসভার স্থল শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী দলীয় প্রতীক নৌকা আকৃতির তিন হাজার ৫’শ বর্গফুটের দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ তৈরি করা হবে যাতে অন্তত ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তারা বৈঠকের পর বৈঠক করছেন প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সাথে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সফর নিরাপদ করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও সাদা পোশাকে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী আগমন উপলক্ষে প্রশাসনিকভাবে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সকল প্রকার উদ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল জানান, ভিত্তিপ্রস্তর ও সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন কি সেটা এখন জানতে পারছিনা। ফাইল প্রধান মন্ত্রী দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসলে জানতে পারবেন। তবে ফাইলে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও কয়েকটি সমাপ্ত প্রকল্পের কথা উল্লেখ আছে।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম নেওয়াজ জানান, আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও প্রধান মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রশাসনের কিছু লোকজনের অগ্রিম বুকিং আছে। সুত্র : দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত