প্রকাশিত: ৩০/০৪/২০২২ ১০:২৪ এএম

পবিত্র মাহে রমজান ও তীব্র তাপদাহে মাস-দেড়েক ১ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পর্যটক শূন্যতায় পড়েছিল। এতে হোটেল-মোটেল,রেস্তোরাঁ ও পর্যটক নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যেও অচলাবস্থা বিরাজ করছিল।

সৈকত জুড়েই ছিল কেবল সুনসান নিরবতা। এই নিরবতা ভাঙতে প্রস্তুত এখন কক্সবাজার। লাখো পর্যটককে বরণ করে নিতে নতুন করে সাজানো হচ্ছে পর্যটন নগরীকে। হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।
পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারেরা পর্যটকদের সেবায় নতুন উদ্যোমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়দিনের কোলাহলমুক্ত সৈকতে ঢেউয়ের গর্জন ও বালিয়াড়ির বুকে ডালপালা ছড়ানো সাগরলতাও যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
এক সঙ্গে পাহাড়, সমুদ্র, নদী, ছড়া, ঝিরি-ঝরনার মেলবন্ধনে প্রকৃতির অপরূপ সব সৌন্দর্য্য দেখার সুযোগ শুধু কক্সবাজারেই রয়েছে। তাই বিশেষ দিন ও সরকারি ছুটিতে মানুষ বেড়ানোর জন্যে এখানেই ছুটে আসে।

গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের কারণে সাড়ে ৯মাস বন্ধ ছিল দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র। এ সময়ে দুই ঈদুল ফিতর ও আযহার ঈদও ছিল বিধিনিষেধের আওতায়। দুই বছর পর এবারই করোনা পরবর্তী ঈদ আনন্দ উদযাপন হবে সমুদ্র সৈকতে। এতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা লাখো পর্যটক সমাগমের আশা করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের ১৯ আগষ্ট করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করে সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। তবে এসময়ে কয়েকটি নেতিবাচক ঘটনায় ছেদ পড়ে এই শিল্পে। তবে পর্যটকদের হয়রানি রোধ ও সেবা নিশ্চিতে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্রবার থেকে টানা ছয়দিন সরকারি বন্ধ। এরমধ্যে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২ অথবা ৩ মে ঈদ হবে। এর আগের দিন মে দিবসের বন্ধ রয়েছে। সবমিলিয়ে আগামী বুধবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি রয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার একদিন খোলার পর আবার দুইদিনের সাপ্তাহিক ছুটি। এ হিসেবে এবারের ঈদে টানা ছুটি পড়ছে। এ ছুটির দিনগুলোকেই পর্যটন ব্যবসায়ীরা এ বছরের মৌসুমের শেষ পর্যটক সমাগম মনে করছেন।
হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টগুলোতে চলছে পরিষ্কার-পরিছন্নতা ও সৌন্দর্য্য বর্ধন কাজ। রেস্তোরাঁগুলো সাজানো হচ্ছে নতুনভাবে।
কলাতলীর রোদেলা রেস্তোরাঁর পরিচালক মকবুল আহমেদ বলেন,‘রমজান মাসে পর্যটক একেবারে শুন্েযর পর্যায়ে ছিল। এ জন্য রেস্তোরাঁর কিছু ডেকোরেশন ও রং-চুনার কাজ করা হয়েছে।
সৈকতের বালিয়াড়ির কিটকট (চেয়ার-ছাতা) ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জানান, মাস-দেড়েক ধরে কর্মচারীর বেতনও জোগাড় করতে পারিনি।এবার ঈদের ছুটিতে ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছি। লাবণী পয়েন্টের জেলা পরিষদের মার্কেটের শামুক-ঝিনুক ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ বুধবার বিকেলে দোকানে ধোলা-বালি পরিষ্কার করছেন। তাঁর মতো এই মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারেরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কক্সবাজার শহরের পাঁচ তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়,‘ ইতিমধ্যে এসব হোটেলে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। কিছু কিছু হোটেল পর্যটক টানতে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ ভাড়ায় ছাড় দিচ্ছেন।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শহরে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজারের মতো পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। ঈদের আগে বাকি রুমগুলোও বুকিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবুল কাসেম সিকদার আরও জানান, পর্যটকরা অনলাইনে বুকিং দিয়ে আসলেই সবচেয়ে ভালো। তখন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রির্সোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, স্বাভাবিকভাবে রমজান মাসে ও গরমে পর্যটক কম থাকে। কিন্তু এইবারই খুবই কমছিল পর্যটক। আমরা আশা করছি এবারের টানা ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে। এজন্য সবাই ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার বিষয়টি আরও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবায় সমুদ্রসৈকত এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষনিক টুরিস্ট পুলিশের টহল রয়েছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম ঘটবে- এ বিষয়টি বিবেচনায় পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। পাশাপাশি সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য খাবার পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাও দেওয়া হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ জানান,‘ এবারের ঈদে লম্বা ছুটি পড়ছে, তাই পর্যটক সমাগমও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে পর্যটক সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করছি,যাতে পর্যটকেরা ভালো সেবা পায়। হোটেলে-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় যেন অতিরিক্ত টাকা আদায় করা না হয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ এববং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিত করতে সৈকতে এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক

পাঠকের মতামত